Advertisement
১০ মে ২০২৪

বেশি সেলফিতে অকালে বুড়িয়ে যাবার চান্স বাড়ে

এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে সেলফি তোলার সময় হাই এনার্জি ভিজিবল লাইটের প্রভাবে ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক অসুখের সম্ভাবনা প্রবল। হতে পারে মনের সমস্যাও। সাবধান করলেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা সন্দীপন ধর ও মনোবিদ ডা দেবাশিস রায়।

সুমা বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৬ ২১:৪৩
Share: Save:

এক সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গেছে যে সেলফি তোলার সময় হাই এনার্জি ভিজিবল লাইটের প্রভাবে ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ থেকে শুরু করে ক্যান্সারের মতো মারাত্মক অসুখের সম্ভাবনা প্রবল। হতে পারে মনের সমস্যাও। সাবধান করলেন ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা সন্দীপন ধর ও মনোবিদ ডা দেবাশিস রায়।

চলন্ত ট্রেনের সামনে সেলফি তুলতে গিয়ে আচমকা প্রানহানি অথবা পিলারে দাঁড়িয়ে তাজমহলের সঙ্গে সেলফি তুলতে গিয়ে গুরুতর আহত জাপানের সত্তরোর্ধ পর্যটক, অথবা বিদেশে শিল্প আলোচনায় গিয়ে রাজনীতিকের সেলফি তুলে পোস্ট করার মত ঘটনা নিয়ে অনেকেই সরব হন। একই সঙ্গে তারাও সবান্ধবে বা সপরিবারে সেলফি তুলে সোশ্যাল সাইটে পোষ্ট করতে পিছপা হন না। আসলে সেলফি প্রিয় মানুষেরা নিজেদের জাহির করতেই অনবরত সিনেমাহল থেকে পাহাড়ের চূড়োয় বা সেলিব্রিটির সঙ্গে এমনকি মানুষের শেষযাত্রার সময়ও সেলফি তুলে পোস্ট করেন। শুধু টিন এজাররাই নয়, সেলফি জ্বরে কাবু আট থেকে আশি অজস্র মানুষ। এক গবেষণায় জানা গেছে যে মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরায় যে নীল আলো অর্থাৎ হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট (HEV) থাকে তা আমাদের ত্বক সহ শরীরের ওপর নানান ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। জার্নাল অফ আমেরিকান অ্যাকেডেমি অফ ডার্মাটোলজিতে সাম্প্রতিক এই বিষয়ে এক গবেষনণা পত্র প্রকাশিত হয়েছে। জানা গেছে যে ব্লু ব্যান্ডের হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট (HEV) ত্বক ও চোখের মারাত্মক ক্ষতি করে। এই নীল আলো রিক্যাটিভ অক্সিজেন স্পেসিস (ROS) ত্বকের ডিএনএ ড্যামেজ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা নেয়। ফলস্বরূপ শুরুতে কম বয়সে ত্বক বুড়িয়ে যেতে শুরু করে। আর এর দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি আরও মারাত্বক। ডিএনএ ড্যামেজ থেকে পরবর্তী কালে ক্যানসার হবার সম্ভাবনা প্রবল। সাধারণ মানুষ ইদানীং সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি সম্পর্কে সচেতন হলেও হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট সম্পর্কে একেবারেই সচেতন নন। অথচ মোবাইল ফোন ক্যামেরা থেকে এই আলো নিসৃত হয়ে মুখ ও গলার ত্বকের ক্ষতি করে চলেছে। অনেকে অবশ্য মনে করেন সানস্ক্রিন লাগালেই নাকি স্কিন ড্যামেজের হাত এড়ানো সম্ভব। এই ধারণা ঠিক নয়। হাই এনার্জি ভিজিবিল লাইট প্রোটেক্টিং সিরামের সাহায্যে কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়। সবথেকে বড় কথা সেলফি তোলা হয় ছয় ইঞ্চি বড়জোর একফুট দূর থেকে। সে জায়গায় ক্যামেরায় ছবি তুলতে গেলে ন্যূনতম তিন ফুট দূরে ক্যামেরা থাকে। তাই সেলফির বিপদ অনেক বেশি। সারাদিন সেলফি তুলতে গিয়ে সেলফিস না হয়ে কাছের মানুষদের সঙ্গে কথা বলা ও গল্প করা শরীর মন দুই এর জন্যেই ভাল।

দিনের মধ্যে অজস্র বার সেলফি তোলা শুধু যে শরীরের ক্ষতি করে তাই নয়, মানসিক ভাবেও অসুস্থ করে তোলে। আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক অ্যাসোশিয়েশন-এর বিশেষজ্ঞদের মতে সারাদিন ধরে সেলফি তোলা পারসোনালিটি ডিজঅর্ডারের লক্ষণ। প্রত্যেক মানুষেরই নিজের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানো প্রয়োজন। আত্মসমীক্ষা করলে তবেই জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা যায়। কিন্তু ইদানীং মোবাইল ফোনের দাপটে অনেক মানুষই নিজের জন্যে তো নয়ই এমনকী বাবা, মা, ভাই, বোন, সন্তান বা স্বামী স্ত্রীর সঙ্গে বসে কথা বলার জন্যেও ন্যূনতম সময় বার করতে পারে না। সেলফি তুলতে গিয়ে অনেকের এমন অবস্থা হয় যে, কাজকর্ম, খাওয়া, ঘুম সহ নিজের রোজকার স্বাভাবিক জীবন যাপণ পর্যন্ত ব্যহত হয়। সেলফ কাউন্সেলিং এ কাজ না হলে প্রোফেশনাল মেন্টাল হেলথ প্রোফেশনালের সাহায্য নিয়ে এই ব্যাপারটা থেকে অবিলম্বে বেরিয়ে আসা উচিত। নাহলে অতিরিক্ত সেলফি মোহ সব কিছু ওলোটপালট করে দিতে পারে। অনেকে আবার সেলিব্রিটি দেখলেই ঝাঁপিয়ে পরে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন। এটাও কিন্তু এক হীনমন্যতার প্রকাশ। যাদের সেলফ রেসপেক্ট এর অভাব, তারাই এই ধরনের লোক দেখানো আচরণ করে। অনেকে আবার অন্যদের অনুসরণ করতে গিয়ে হাস্যকর ভাবে লাগাতার সেলফি তুলতে শুরু করে। তবে সেলফি তোলা মানেই সব খারাপ নয়, সেলফি তুলুন পোষ্টও করুন মাত্রা রেখে।

আরও পড়ুন: সেলফি তোলার নেশা কি একটা রোগ?

১) সেলফিতে স্বচ্ছ্বন্দ নই মোটেই

মেঘলা দাসগুপ্ত,(ক্লাস ১১, ফিউচার ফাউন্ডেশন স্কুল) অভিনেতা

আমার বন্ধুরা সময় পেলেই সেলফি তোলে, আমি মাঝে মধ্যে এক আধবার।একই মুখ, বিভিন্ন দিক থেকে নানান পোজে ছবি তুলে কি যে পায় আমি বুঝি না। মনে হয় নিজেকে যারা মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসে তারাই বোধহয় এতোটা সেলফি প্রবণ। কোনও গ্যাদারিং এ গেলে সেলফি তোলার ধুম পড়ে যায়। একবার মনে হয় নিজেকে নানা ভাবে দেখলে বোধহয় খুব মজা পায়। হতে পারে এটা একটা খেলা। এগুলো পড়লে আমার বন্ধুরা কিন্তু রেগে যেতে পারে। আর সত্যি কথাটা হল আমি খুব একটা ভাল সেলফি তুলতে পারি না। সেলফি তোলার জন্যে স্কিন খারাপ হয়ে যায় শুনলে হয়তো এই হিড়িক কিছুটা কমবে।

২) সেলফি তুলে পোষ্ট করা আমার না পসন্দ

ঋদ্ধি সেন, অভিনেতা

আমি ছবি তুলতে খুব ভালোবাসি, সেলফি নয়। বিভিন্ন নানান ফ্রেম এ বিভিন্ন দৃশ্যের ছবি তুলতে আমার ভালো লাগে। কিন্তু দিনরাত সময় পেলেই সেলফি তোলা ব্যাপারটাই আমার কেমন যেন বোকা বোকা লাগে। মোবাইলের টেকনোলজি আমাদের খুব সুবিধে করে দিয়েছে। কিন্তু এর সঠিক ব্যবহার না করতে পারলে নিজেদেরই ক্ষতি। সেলফি তুলতে গিয়ে কত দূর্ঘটনার কথা শোনা যায়। নিজেরা সতর্ক না হলে কিন্তু এর সমস্যার সুরাহা হবে না। ফ্রন্ট ক্যামেরা, সেলফি এই ব্যাপারটাই আমার খুব বোকা বোকা লাগে। তবে হ্যাঁ আমার অভিনয় ভালোবেসে যখন কেউ সেলফি তুলতে চায় খুব ভালো লাগে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE