Advertisement
E-Paper

শিশুদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে রোজের জীবনযাপনই

স্কুল বা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখাই হয় না। এখন হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে সাফাইকর্মী, সকলেই ওর বন্ধু। বছর চোদ্দোর মেয়েটাকে একটি নামী হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি হতে হয় কেমোথেরাপির জন্য।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০০:১৭

স্কুল বা পাড়ার বন্ধুদের সঙ্গে আর দেখাই হয় না। এখন হাসপাতালের চিকিৎসক থেকে সাফাইকর্মী, সকলেই ওর বন্ধু। বছর চোদ্দোর মেয়েটাকে একটি নামী হাসপাতালে নিয়মিত ভর্তি হতে হয় কেমোথেরাপির জন্য।

কলকাতার এক সরকারি হাসপাতালের ক্যানসার বিভাগে পরপর দু’টি শয্যায় শুয়ে আছে সাড়ে চার ও পাঁচ বছরের দুই খুদে। এক জনের মুখে মাস্ক, অন্য জনের হাতে স্যালাইনের নল। দিনের পর দিন পাশাপাশি শুয়ে থাকতে থাকতেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছে দু’জনের। পরিজনেরা জানালেন, ডাক্তারেরা ইতিমধ্যেই জবাব দিয়ে দিয়েছেন।

গত কয়েক বছরে শিশু ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন চিকিৎসকেরা। শুধু এ রাজ্যে নয়, বিশ্ব জুড়েই বাড়ছে সংখ্যাটা। একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, পৃথিবীতে প্রতি বছর অনুর্দ্ধ ১৫ বছরের প্রায় ১৬ লক্ষ শিশু নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু তা-ই নয়, ১৫ বছরের কমবয়সী ৯০ হাজার শিশু প্রতি বছর ক্যানসারে মারা যায়। ক্যানসার রোগীদের তথ্য সংগ্রহে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)-এর একটি প্রকল্পের পরিসংখ্যান বলছে, ২০০৪ সালে মোট ক্যানসার আক্রান্তদের মধ্যে ২ শতাংশ ছিল শিশু। কিন্তু ২০১৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭ শতাংশে।

চিকিৎসক ও গবেষকেরা বেশ কিছু বিষয়কে চিহ্নিত করছেন, যা শিশুদের ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। আধুনিক খাদ্যাভ্যাস তার মধ্যে অন্যতম। ক্যানসার গবেষক জয়শ্রী বসাক জানাচ্ছেন, সব সময়ে যে সবাই জেনেবুঝে অস্বাস্থ্যকর খাবার খায়, তা নয়। শাকসব্জি বিক্রেতারা অনেক সময়েই বিশুদ্ধ খাদ্যের সঙ্গে নিম্ন মানের উপাদান মেশান। যেমন, রং ভাল করতে পটল ও কাঁচা আম এক ধরনের রাসায়নিকে ভিজিয়ে রাখা হয়। সেটি শরীরের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। জয়শ্রীদেবী বলেন, ‘‘দুধকে আমরা শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যকর বলে জানি। কিন্তু সেই দুধেও ময়দা, এমনকী ইউরিয়াও মেশানো হয়। যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’

চিকিৎসকেরা বলছেন, সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করছে ফাস্টফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার। কারণ, এই সব খাবার মুখরোচক করতে নানা রাসায়নিক উপাদান মেশানো হয়। যা নিয়মিত খেলে যে কোনও বড় অসুখ হতে পারে। চিকিৎসক অর্ণব গুপ্ত বলেন, ‘‘জাঙ্ক ফুড ও ঠান্ডা পানীয় যতটা সম্ভব কম খাওয়া উচিত। বাচ্চাদের সামনে ধুমপান করা কখনওই উচিত নয়। এটা শিশুদের স্বাস্থ্যের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’ তাঁর পরামর্শ, যেহেতু এখন বাতাস ক্রমেই দূষিত হয়ে উঠছে, তাই বেশিক্ষণ থাকতে হলে মাস্ক ব্যবহার করাই ভাল।

ক্যানসার চিকিৎসক আশিস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শাকসব্জিতে পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট পাউডার মিশিয়ে গরম জলে ফোটানোর পরেই রান্না করা উচিত। এমনকী মাছ-মাংসও রান্নার আগে নুন দিয়ে ফুটিয়ে নেওয়া উচিত। তা হলে খাবারগুলি অনেকটাই বিপন্মুক্ত হবে বলে তিনি জানান।

শুধু খাবার নয়, আধুনিক জীবনযাপনের ধরনও ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে বলে মনে করছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অপূর্ব ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘আধুনিক নানা গবেষণায় ধরা পড়ছে মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপের অতিরিক্ত ব্যবহারেও হতে পারে ক্যানসার। মোবাইল ব্যবহারের সময়ে তা থেকে এক ধরনের রশ্মি নির্গত হয়, যা শরীরের পক্ষে খুবই ক্ষতিকর।’’ নানা সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, একটানা ২০ মিনিট মোবাইলের ব্যবহার বাড়িয়ে দেয় ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি। ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘এর মধ্যে নির্দিষ্ট করে কোনও একটিকে ক্যানসারের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করার সময় এখনও আসেনি। তবে বর্তমান ‘লাইফস্টাইল’ ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষত এর শিকার হচ্ছে শিশুরা।’’

চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের রক্ত ও গ্ল্যান্ডে ক্যানসার দেখা যায়। চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাবা-মায়ের সচেতনতা এ ক্ষেত্রে খুবই জরুরি।’’ কী ভাবে সচেতন হবেন বাবা-মা? তিনি বলেন, ‘‘বাচ্চাদের নাক-মুখ থেকে রক্তক্ষরণ হলে, গায়ের রং হঠাৎ ফ্যাকাশে হয়ে গেলে কিংবা গ্ল্যান্ড ফুলে উঠলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।’’

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy