গাড়ি চুরি চক্রের পাণ্ডা অনিল চৌহান ও তাঁর পরিবারের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে ডিজি, এসএসপি-র মতো অসম পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্তাদের দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিধায়ক রুমি নাথ। বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিতে এমনই দাবি করেছেন রুমিদেবীর স্বামী জ্যাকি জাকির।
গুয়াহাটির তৎকালীন এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি এ কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। আনন্দবাজারকে তিনি জানিয়েছেন, তিনি ওই সময়ই অনিলের সঙ্গে অপরাধ জগতের যোগাযোগ নিয়ে রুমিদেবীকে সতর্ক করেছিলেন। আনন্দ প্রকাশের মন্তব্য, ‘‘এর পরও উনি যদি অনিলকে চেনেন না বলে দাবি করেন, তবে তা মানা যায় না।’’
তিওয়ারি বলেন, ‘‘গত বছর বিধায়ক আমার সঙ্গে দেখা করার সময় চান। জাকির ও অনিলের স্ত্রী রীতাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি আমার দফতরে এসেছিলেন। রুমিদেবীর অভিযোগ ছিল, পুলিশ তাঁর কেন্দ্রের বাসিন্দা চৌহান পরিবারকে অকারণে বিরক্ত করছে। তল্লাশির নামে হয়রানি করা হচ্ছে।’’ পুলিশকর্তার বক্তব্য, তখনই তিনি অনিলের সঙ্গে অপরাধ জগতের সম্পর্কের কথা রুমিদেবীকে জানিয়ে সতর্ক করেন। অনিল যে বিভিন্ন রাজ্যের পুলিশের খাতায় নাম থাকা এক দাগি অপরাধী— সে কথাও বিধায়ককে জানান। চৌহান পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না রাখার অনুরোধও জানানো হয়েছিল।
আনন্দপ্রকাশের মন্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগে অনিলের বিষয়ে অন্ধকারে থাকলেও, আমার সঙ্গে দেখা করার পর নিশ্চয় উনি সব কিছু বুঝতে পেরেছিলেন।’’ তিনি জানান, একই দাবি নিয়ে সম্ভবত তৎকালীন ডিজি-র সঙ্গেও দেখা করেছিলেন রুমিদেবী।
গত কাল অনিলকে ফের কামরূপ সিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। পুলিশ ৭ দিনের জন্য অনিলের হেফাজত চাইলেও, আদালত ৫ দিনের জন্য তাকে পুলিশ হেফাজতে পাঠায়। গুয়াহাটিতে তার বিরুদ্ধে অন্তত ২০টি মামলা রয়েছে। আপাতত বশিষ্ঠ থানার পুলিশ অনিলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, অনিলের স্ত্রী রীতাকে নিয়ে গুয়াহাটির দ্বারকানগরের বাড়িতে ফের তল্লাশি চালানো হয়। সেখানে তার মুম্বইয়ের ফ্ল্যাটের কাগজপত্র মিলেছে। ছয় মাইল এলাকায় রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের শাখায় অনিলের অ্যাকাউন্ট রয়েছে। সেখানকার লকারে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার গয়না মিলেছে। পুলিশের দাবি, গুয়াহাটির আশপাশে প্রায় সাড়ে তিন বিঘা জমি রয়েছে অনিলের।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, মির্জায় অনিলের ভাড়াবাড়িতে তল্লাশির সময় গুয়াহাটির প্রাক্তন এসএসপি আনন্দপ্রকাশ তিওয়ারি, পানবাজারের ডিসি অমিতাভ সিংহ, কার্বি আংলং জেলার এসপি মুগ্ধজ্যোতি মহন্ত ও মইনুল হক নামে এক কনস্টেবলের ছবি পাওয়া গিয়েছে। পুলিশ অনিলকে ধরতে অনেক দিন ধরেই ছক কষছিল। তদন্তকারীদের সন্দেহ, আনন্দপ্রকাশ, মুগ্ধজ্যোতি মহন্ত ও অমিতাভ সিংহের উপর পাল্টা হামলার ঘুঁটি সাজাচ্ছিল অনিল। সেই কারণেই ওই পুলিশকর্তাদের ছবি সংগ্রহ করে রেখেছিল।
পুলিশ সূত্রে খবর, ২০০৮ সালে পাসপোর্ট হাতে পায় অনিল। সেখানে দিসপুরের ঠিকানা দেওয়া রয়েছে। পুলিশের অন্দরমহলেই প্রশ্ন উঠেছে, গোটা ভারতে এত গুলি মামলা ঝুলছে যার বিরুদ্ধে, সে কী ভাবে ‘পুলিশ ভেরিফিকেশন’ উত্তীর্ণ হল। পুলিশেরই একাংশ অবশ্য দাবি করছে, ২০০৮ সালের আগে অনিলের নামে অসমে কোনও মামলা দায়ের করা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy