Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

একাই ঘুরে ভোট চাইছেন মমতা-ভক্ত নির্দল প্রৌঢ়

পাঞ্জাবি, কাঁধে লাল ঝোলা ব্যাগ। ভোটের বাজারে এটাই ওই প্রার্থীর ট্রেড-মার্ক। তাঁর দর্শন, অবিবাহিত জননেতাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন। তা-ই তিনি রামমনোহর লোহিয়া, অটলবিহারী বাজপেয়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। প্রচারে এক জনও পাশে নেই। বাড়ি বাড়ি একাই ঘুরে ভোট চাইছেন গিরিডির নির্দল বাঙালি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেব।

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
রাঁচি শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৯
Share: Save:

পাঞ্জাবি, কাঁধে লাল ঝোলা ব্যাগ। ভোটের বাজারে এটাই ওই প্রার্থীর ট্রেড-মার্ক।

তাঁর দর্শন, অবিবাহিত জননেতাই মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন। তা-ই তিনি রামমনোহর লোহিয়া, অটলবিহারী বাজপেয়ী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভক্ত। প্রচারে এক জনও পাশে নেই। বাড়ি বাড়ি একাই ঘুরে ভোট চাইছেন গিরিডির নির্দল বাঙালি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেব।

মুখে বলছেন, ‘একলা চলো রে’।

রাজনীতির ময়দানে মৃণালবাবুর পরিস্থিতি যেন হাতির সামনে পিঁপড়ের মতো। ভোট-যুদ্ধে তাঁর লড়াই বিজেপি, জেএমএম, জেভিএম, তৃণমূলের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদের সঙ্গে। কিন্তু না-হেরে হারতে রাজি নন বোকারোর সারাম গ্রামের বাসিন্দা সোস্যালিস্ট পার্টির (লোহিয়া) ওই প্রার্থী।

মৃণালবাবুর কথায়, “এটা ভুললে চলবে না, পিঁপড়ে শুঁড়ে ঢুকলে কিন্তু হাতিও কুপোকাত্‌। আমি অবিবাহিত। সন্ন্যাসী। মানুষ আমাকে পছন্দ করেন। প্রচারের জন্য বারোটি গাড়ির অনুমতি পেয়েছি। টাকা দিচ্ছেন স্থানীয়রাই।”

লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে তিনি বাজিমাত করতে পারবেন কি না, তা সময়ই বলবে। কিন্তু ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচন এবং বিধানসভা নির্বাচনে অনেকেরই সমর্থন পেয়েছিলেন মৃণালবাবু। কমিশন সূত্রের খবর, ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে তাঁর পক্ষে ভোট পড়েছিল ৪১৯০টি। ওই বছরই গোমিয়া বিধানসভা কেন্দ্রের নির্বাচনে তাঁর প্রাপ্ত ভোট ছিল ১২০২টি।

২০০৭ সালে রাজ্যের জলসম্পদ দফতর থেকে সহকারী ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে অবসর নেন মৃণালবাবু। থাকেন মায়ের সঙ্গে। ভোটে লড়তে পেনশনের টাকা জমান।

২০০৯ সালে প্রথম বার নির্বাচনের ময়দানে নামেন বছর সাতষট্টির ওই প্রার্থী। সেই সুবাদে এখন গিরিডি লোকসভা কেন্দ্রের অনেক জায়গাতেই তিনি চেনা মুখ। ভোটের প্রচারে কখনও অন্য দল, বিরোধী প্রার্থীদের সমালোচনা করেন না মৃণালবাবু। লিফলেট নিয়ে কোনও বাড়ির দরজায় কলিং বেল বাজিয়ে ভিতরে ঢুকে যান প্রৌঢ়। গৃহকর্তাকে বলেন‘আমি অবিবাহিত। মহিলাদের মায়ের মতো দেখি। মা দুর্গার উপাসক। রবিবার লবণ ছাড়া আতপ চালের ভাত খাই। মৌন ব্রত করি। মানুষের ভাল করতে পারব।’ ভোটারদের কাছে রামমনোহর লোহিয়া, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অটলবিহারী বাজপেয়ীর কথাও তুলে ধরেন। মৃণালবাবুর বিশ্বাস, অবিবাহিত হওয়ার জন্যই ওই নেতারা মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারছেন।

ভোট-যুদ্ধের ময়দানে যখন প্রার্থীরা বিরোধীদের সমালোচনায় সরব, ঠিক তখনই কার্যত নীরবেই প্রচার চালাচ্ছেন মৃণালবাবু।

পথচলতি মানুষই হোক বা সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকারও সঙ্গে দেখা হলেই বলছেন, ‘বৃহস্পতিবার জন্মদিন হলে রাজা হয়। আমি জন্মেছি ওই দিনই। হয়তো এ বারও জিতব না। কিন্তু ভবিষ্যতে ঠিক জিতব। নির্বাচনে লড়াইয়ের খরচ অনেক। সাহায্যের লোকও কম। সে সব সমস্যা কাটাতে পারলে সাংসদ বা বিধায়ক হতেই পারি।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE