Advertisement
১০ মে ২০২৪

ওড়িশাও সিবিআইয়ে রাজি, সারদা-রায় শীঘ্র

ফলাফল ৩:১। সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পক্ষে অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা। বিপক্ষে শুধু পশ্চিমবঙ্গ। বুধবার এই ফল চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য চূড়ান্ত রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট। তারা জানিয়ে দিল, অনতিবিলম্বে রায় ঘোষণা করা হবে। আদালত সূত্রের ইঙ্গিত, সারদার বিরুদ্ধে ওড়িশা পুলিশের তদন্ত সংক্রান্ত লিখিত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে, চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহের গোড়ায় শীর্ষ আদালতে সারদা-মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হতে পারে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৩
Share: Save:

ফলাফল ৩:১। সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পক্ষে অসম, ত্রিপুরা, ওড়িশা। বিপক্ষে শুধু পশ্চিমবঙ্গ।

বুধবার এই ফল চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পরেও অবশ্য চূড়ান্ত রায় দিল না সুপ্রিম কোর্ট। তারা জানিয়ে দিল, অনতিবিলম্বে রায় ঘোষণা করা হবে। আদালত সূত্রের ইঙ্গিত, সারদার বিরুদ্ধে ওড়িশা পুলিশের তদন্ত সংক্রান্ত লিখিত রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পরে, চলতি সপ্তাহের শেষে বা আগামী সপ্তাহের গোড়ায় শীর্ষ আদালতে সারদা-মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হতে পারে।

তবে ঘটনা হল, সিবিআই তদন্তের পক্ষে গিয়ে এ দিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে রীতিমতো চাপে ফেলে দিয়েছে নবীন পট্টনায়কের ওড়িশা। মরিয়া পশ্চিমবঙ্গ সরকার শেষ বেলায় আদালতে যুক্তি দিয়েছে, অন্য রাজ্যে সিবিআই তদন্ত করলে করুক, পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দলই যথেষ্ট। কিন্তু বিচারপতি সিএস ঠাকুর এবং বিচারপতি সি নাগাপ্পনের বেঞ্চের মতে, রাজ্যে রাজ্যে পৃথক তদন্ত হলে জটিলতাই বাড়বে। “পশ্চিমবঙ্গ সরকারের রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, সারদা কেলেঙ্কারির আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষিত রয়েছে। মন্ত্রী, রাজনৈতিক নেতা, বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব জড়িত। সর্বত্রই সারদার ছায়া,” মন্তব্য বিচারপতি ঠাকুরের।

সুপ্রিম কোর্টে সারদা-মামলার সওয়াল জবাব গত ১৬ এপ্রিল শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওড়িশা সরকার নিজেদের বক্তব্য জানাতে চাওয়ায় এ দিনটিকে তার জন্য নির্দিষ্ট করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ত্রিপুরা ও অসম আগেই সিবিআই তদন্তের পক্ষে মত দিয়েছে। এ দিন ওড়িশার মত জানার পরে সিবিআই তদন্তের দিকেই পাল্লা ভারী হয়ে যায়। বিচারপতিদের টুকরো টুকরো মন্তব্যও ইঙ্গিত দেয়, তাঁরা কী ভাবছেন। তাই সিবিআই তদন্তের আবেদনকারীদের মধ্যে আশা জেগেছিল, এ দিনই হয়তো তাঁদের অনুকূলে রায় হয়ে যাবে। শেষমেশ তা হয়নি। কেন?

এ দিন মামলার শুরুতেই ওড়িশা সরকারের কৌঁসুলি গোপাল সুব্রহ্মণ্যম বলেন, “আমরা সারদা-সহ ৩৭টি সংস্থার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছি। আমাদের পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করেছে। সিবিআই-তদন্তে আমাদের আপত্তি নেই।” সারদা কেলেঙ্কারি নিয়ে যে ভাবে সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্দেশে প্রশ্নবাণ ছুড়েছে, প্রায় একই ভাবে এ দিন প্রশ্ন করেছে ওড়িশাকেও। বিচারপতিরা জানিয়ে দেন, সারদা কেলেঙ্কারির আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক ব্যাপ্তির প্রেক্ষাপটেই তাঁরা বিষয়টিকে দেখছেন। ওড়িশার বক্তব্যের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কৌঁসুলি বৈদ্যনাথন বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে সিট সারদা-তদন্ত অনেকটা গুটিয়ে এনেছে। তারা ইডি-র তদন্তেও সাহায্য করছে। এখন সিবিআই এলে তদন্তের কাজ বাধা পাবে।” সর্বোচ্চ আদালতকে বৈদ্যনাথন এ প্রস্তাবও দেন, “সিবিআই বরং ত্রিপুরা-ওড়িশা-অসমে তদন্ত করুক। পশ্চিমবঙ্গে সিট-ই যেমন তদন্ত চালাচ্ছে, চালিয়ে যাক।”

শুনে বিচারপতিরা জানান, প্রতারিতদের মনে আস্থা ফিরিয়ে আনাটাই আসল। কেলেঙ্কারির লাভ কারা তুলল, প্রতারণার টাকা কোথায় গেল, সেবি-রিজার্ভ ব্যাঙ্ক-কোম্পানি নিবন্ধকের মতো নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকা কী ছিল, আন্তঃরাজ্য ও আন্তর্জাতিক স্তরে কেলেঙ্কারি কতটা ছড়িয়ে রয়েছে এও বিবেচ্য। দেখতে হবে, কারা এই কেলেঙ্কারির উপযুক্ত তদন্ত করতে পারবে। পরিস্থিতি প্রতিকূল হয়ে উঠছে দেখে পশ্চিমবঙ্গের অপর কৌঁসুলি ইউ ইউ ললিত এগিয়ে আসেন। তিনি যুক্তি দেন, সারদায় ৯০% লগ্নিকারীই পশ্চিমবঙ্গের। বাকি ১০% অসম, ত্রিপুরা ও ওড়িশায় ছড়িয়ে রয়েছেন। এমতাবস্থায় সিবিআই আনলে উল্টো ফল হবে বলে দাবি করেন ললিত। বিচারপতিরা বলেন, “আমরা সব পক্ষের বক্তব্য শুনলাম। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়া বাকিরা সিবিআই তদন্তে রাজি। খুব শীঘ্র আমরা ওই মামলার রায় দেব।”

সুপ্রিম কোর্টে দুপুরে যখন শুনানি চলছে, তখন পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা-সবংয়ের সভায় তৃণমূল নেত্রী কিন্তু ছিলেন যথেষ্ট আক্রমণাত্মক। তাঁর অভিযোগ, “তিরিশ বছর ধরে চিটফান্ডগুলো চলছে! টাকা তুলেছে সিপিএম, খেয়েছে কংগ্রেস, লুটেছে সিপিএম-কংগ্রেস-এনডিএ সরকারের বিজেপি। এত দিন তো কেউ কিছু করেনি! ভোট আসতেই মনে হয়েছে।” তবে সর্বোচ্চ আদালত সিবিআই-তদন্তের নির্দেশ দিলে তিনি যে মানতে বাধ্য, তা-ও বুঝিয়েছেন মমতা। এবং এ-ও বলেছেন, “নন্দীগ্রামের তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। জ্ঞানেশ্বরী কাণ্ডেও মানুষ এখনও বিচার পায়নি।” বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সারদা-সহ নানা লগ্নি সংস্থার বিজ্ঞাপনের প্রসঙ্গও টেনেছেন তিনি। পাশাপাশি জনসভায় তোপ দেগেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। “বলা হচ্ছে, সারদা স্ক্যাম ১৮০০ কোটি টাকার। সে টাকা নাকি তৃণমূলের লোকজন নিয়েছে! আর ওরা তো আকাশটাও বেচে দিয়েছে! টুজি স্পেকট্রামে ১ কোটি ৭৪ লক্ষ হাজার কোটি টাকার কেলেঙ্কারি হয়েছে,” মন্তব্য মুকুলের।

এ দিনই সারদা কেলেঙ্কারির সিবিআই তদন্তের পক্ষে সওয়াল করেছেন রাজ্যে ভোট প্রচারে আসা ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার। বর্ধমানে তিনি বলেন, “সারদা-সহ সমস্ত চিটফান্ডের বিরুদ্ধে তদন্তের দায়িত্ব যাতে সিবিআইয়ের হাতে যায়, সে জন্য আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে অনেকআগেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলাম। চিটফান্ডগুলোর জাল কয়েকটি রাজ্যে বিস্তৃত। এক রাজ্যের পুলিশ অন্য রাজ্যে গিয়ে তদন্ত করতে পারবে না। তাই কেন্দ্রীয় সংস্থা হিসেবে সিবিআই-ই তদন্ত করুক।” সিবিআইয়ে তৃণমূল সরকারের আপত্তি নিয়ে কটাক্ষ করে মানিকবাবুর মন্তব্য, “সিবিআইয়ে আমাদের আপত্তি নেই। এ রাজ্যের সরকার কেন রাজি হচ্ছে না বুঝতে পারছি না। নিশ্চয় ওদের কোনও বড় মাপের নেতা বা মন্ত্রীর সঙ্গে সারদা-সহ অন্যান্য চিট ফান্ডের যোগ আছে!” সিপিএম নেত্রী বৃন্দা কারাটও কাটোয়ায় বলেন, “সততার প্রতীক যখন, তখন ভয় পাচ্ছেন কেন? সারদার হাত থেকে বাঁচতে তৃণমূল ভোট চাইছে।”

সারদা-কাণ্ডে কে তদন্ত করবে, সে প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন অবশ্য নিজেকে জড়াতে চাননি। এ দিন উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের চাপড়ামারিতে তিনি বলেন, “তদন্ত রাজ্য পুলিশ করবে, নাকি সিবিআই, সে সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত মতামতের কোনও জায়গা নেই। আমি মনে করি, যে-ই তদন্ত করুক না কেন, তদন্ত যাতে স্বচ্ছ ভাবেই হয়, সেটি মুখ্যমন্ত্রী দেখবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saradha scam verdict of supreme court orissa
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE