দেশের প্রতিটি শিশুকে স্কুলে পাঠানোর লক্ষ্য পূরণ হতে এখনও অনেক দেরি। নবজাতক ও শিশুর মৃত্যুহার, চাকরি বা রাজনীতির ক্ষেত্রে মহিলাদের ক্ষমতায়ন ও শৌচালয়ের মাপকাঠিতেও ভারত পিছিয়ে। এমনটাই বলছে রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট। উন্নয়নে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলির জন্য দু’টি দাওয়াই রয়েছে এই রিপোর্টে। এক, আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে যে সব রাজ্য উন্নয়নে এগিয়ে তাদের অনুসরণ করা। দুই, পিছিয়ে থাকা রাজ্যগুলিকে কেন্দ্রের তরফে আরও বেশি সাহায্য জোগানো। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ঠিক সেটাই করছে বলে এ দিন মন্তব্য করেছেন নীতি আয়োগের এক সদস্য।
রাষ্ট্রপুঞ্জ ২০০০ সালে বিশ্ব জুড়ে উন্নয়নের জন্য দারিদ্র দূরীকরণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে ৮টি লক্ষ্য নিয়েছিল। যার নামকরণ হয়েছিল ‘মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোxল ২০১৫’। চলতি বছরের ডিসেম্বরে সেই লক্ষ্য পূরণের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। তার পাঁচ মাস আগে আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, সরকারি হিসেবে ভারত দারিদ্রের হার অর্ধেক কমিয়ে এনেছে। প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা বা ম্যালেরিয়া-টিবি-এড্সের মতো রোগের প্রকোপ কমিয়ে আনার ক্ষেত্রেও সাফল্য পেয়েছে। কিন্তু বেশ কিছু ক্ষেত্রে পিছিয়েও রয়েছে ভারত।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, বহু শিশু এখনও স্কুলের বাইরে। স্কুলে যারা ভর্তি হচ্ছে তাদের বেশির ভাগই প্রাথমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে পারছে না। স্কুল-পড়ুয়াদের অনেকের পড়া বা অঙ্ক শেখার মান খুবই খারাপ। মহিলাদের ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রেও ভারত অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। তবে ভাল দিক হল, শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনও লিঙ্গবৈষম্য নেই। রিপোর্ট বলছে, কেন্দ্রীয় সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পের ফলে প্রসবকালীন মৃত্যুর হার কমলেও শিশু ও নবজাতকের মৃত্যুর হার যথেষ্ট পরিমাণে কমেনি। নরেন্দ্র মোদীর সরকার ক্ষমতায় এসে ‘স্বচ্ছ ভারত অভিযান’ শুরু করেছে। কিন্তু হিসেব বলছে, সকলের জন্য শৌচালয়ের লক্ষ্য পূরণ করতে হলে এখনও অনেক পথ হাঁটতে হবে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট বলছে, যে সব রাজ্য আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়াতে পেরেছে, কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, পরিকাঠামোয় জোর দিয়েছে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যে বেশি অর্থ ব্যয় করেছে, তারাই উন্নয়নের নিরিখে এগিয়ে রয়েছে। পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলিকে তাদের পথই অনুসরণ করতে হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকেও সাহায্য করতে হবে পিছিয়ে পড়া রাজ্যগুলিকে ।
নতুন সরকারের আমলে ঠিক সেই কাজটিই হচ্ছে বলে দাবি করছেন নীতি আয়োগের সদস্য বিবেক দেবরায়। আজ রাষ্ট্রপুঞ্জের রিপোর্ট প্রকাশের পর বিবেক বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থায় তিনটি বড় পরিবর্তন এসেছে। এক, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশ মেনে রাজ্যের হাতে তাদের ইচ্ছে মতো ব্যয় করার জন্য অনেক বেশি অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত বা পুরসভার মতো সংস্থাগুলির হাতেও বাড়তি অর্থ তুলে দেওয়া হচ্ছে। এই সংস্থাগুলিই কিন্তু অধিকাংশ সরকারি পরিষেবা দিয়ে থাকে। দুই, মুখ্যমন্ত্রীরাই ঠিক করছেন কোন কোন কেন্দ্রীয় প্রকল্প থাকবে, কোনগুলি থাকবে না। তিন, এত দিন কেবল দারিদ্রের হার জানা যেত। কিন্তু নির্দিষ্ট ভাবে কারা, কতটা গরিব, সেই তথ্য পাওয়া যেত না। আর্থ-সামাজিক ও জাতিগত জনগণনার রিপোর্ট এখন তা বলে দিয়েছে।’’ বিবেক জানাচ্ছেন, এ বার এই পরিসংখ্যানকে আধার, জাতীয় জনপঞ্জি, একশো দিনের কাজের তথ্যভাণ্ডার এবং প্রধানমন্ত্রী জন-ধন যোজনার তথ্যের সঙ্গে মেলানো হবে। তার ফলে ঠিক জায়গায় ভর্তুকি পৌঁছে দেওয়া এবং সরকারি খরচের বহর কমানো সহজ হবে। সহস্রাব্দের শুরুতে রাষ্ট্রপুঞ্জের স্থির করা লক্ষ্য পূরণ নিয়ে বিবেক বলেন, ‘‘ভারতের মতো দেশে কিছু কিছু সাফল্যের নমুনা যেমন মিলবে, তেমনই সমস্যাও থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy