দিল্লি ভোটে এক মাত্র উল্লেখযোগ্য বাঙালি প্রার্থী তিনি। কিন্তু ভীতি বাঙালি ভোটারদের থেকেই!
দিল্লি বিধানসভা ভোটে গ্রেটার কৈলাস কেন্দ্রে প্রার্থী হয়েছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে শর্মিষ্ঠা। তাঁর নির্বাচন কেন্দ্রের মধ্যেই পড়ে দিল্লির সব চেয়ে বড় বাঙালি মহল্লা বলে পরিচিত চিত্তরঞ্জন পার্ক। ছোট বেলা থেকে প্রণববাবুর গ্রেটার কৈলাসের বাড়িতে থেকেই বড় হয়েছেন শর্মিষ্ঠা। ফলে প্রণব-কন্যার স্থানীয় পরিচিতিও দীর্ঘ দিনের। তাই তাঁকে প্রার্থী করার পরে কংগ্রেস নেতারা ভেবেছিলেন, আর যাই হোক চিত্তরঞ্জন পার্কের বড় অংশের সমর্থন পাবেন শর্মিষ্ঠা। অথচ ভোট ময়দানে নেমে তাঁরাই অবাক! কারণ, তাঁদের সমীক্ষা বলছে, গ্রেটার কৈলাস কেন্দ্রের বেশির ভাগ এলাকায় শর্মিষ্ঠা ভাল সাড়া পাচ্ছেন ঠিকই। কিন্তু বাঙালির মাটিই যেন দুর্জয় ঘাঁটি!
তাহলে কী করা যায়?
কংগ্রেস সূত্র জানাচ্ছে, কাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদের চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় প্রচারে নামাচ্ছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। দিল্লিতে বিধানসভা ভোট হবে সাত তারিখ। তার আগে আগামী পাঁচ দিন ধরে চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকায় লাগাতার প্রচার করবেন সোমেন মিত্র, প্রদীপ ভট্টাচার্য, মানস ভুইয়াঁ, অধীর চৌধুরী, দীপা দাশমুন্সিরা। শুধু প্রচার নয়, এই নেতাদের কেউ কেউ ভোটের দিন পর্যন্ত নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার জন্য থেকে যেতে পারেন। সূত্রের খবর, চিত্তরঞ্জন পার্কে কয়েক দিনের জন্য একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়েছেন সোমেনবাবু। পশ্চিমবঙ্গের যুব কংগ্রেস সভাপতি অরিন্দম ভট্টাচার্যের চিত্তরঞ্জন পার্কের সঙ্গে যোগাযোগ দীর্ঘদিনের। তাঁকেও প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু প্রশ্ন হল, চিত্তরঞ্জন পার্কের বাঙালি ভোটের ব্যাপারে কেন ভীত কংগ্রেস? জবাবে শর্মিষ্ঠার নির্বাচনী ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা দিল্লি কংগ্রেসের সম্পাদক নরেশ কুমার বলেন, “এ সব ভিত্তিহীন কথা। চিত্তরঞ্জন পার্ক থেকে বিপুল সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া এখানকার যাঁরা অধিবাসী, তাঁদের অনেকের সঙ্গে প্রণববাবুর দীর্ঘদিনের পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে।”
কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের এক নেতা বলেন, চিত্তরঞ্জন পার্ক এলাকার বহু বাঙালি পরিবার দেশভাগের সময়ে ওপার বাংলা থেকে এসেছেন। তাঁদের অনেকেই দেশভাগের সময়ে দাঙ্গার শিকার হয়েছিলেন। কারও নিকট আত্মীয়ের সেই অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেই ঐতিহাসিক কারণেই বিজেপি বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তা রয়েছে এখানে। গত বিধানসভা ভোটে অবশ্য চিত্তরঞ্জন পার্কে প্রচুর সমর্থন পেয়েছিল আম আদমি পার্টি। কিন্তু লোকসভা ভোটে হাত উজাড় করে মোদী তথা বিজেপি-কে ভোট দেন এখানকার বাসিন্দারা। সেই রেশ এখনও পুরোপুরি কাটেনি।
দিল্লিতে যেহেতু এলাকাভিত্তিতে বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের মহল্লা রয়েছে, তাই তার ভিত্তিতে প্রার্থী দেওয়ার রীতিও দীর্ঘ দিনের। যে কারণে কংগ্রেস বা বিজেপি বিহার-উত্তরপ্রদেশ তথা ‘পূর্বাঞ্চলি অধ্যুষিত’ এলাকায় তেমনই কাউকে প্রার্থী করে। তাতে কাজও দেয়। যেমন এ বার ভোজপুরি নায়ক মনোজ তিওয়ারিকে দিল্লিতে প্রার্থী করে ফল পেয়েছে বিজেপি।
আশা ছিল, শর্মিষ্ঠার ক্ষেত্রেও সেই সূত্র খাটবে। তবে কংগ্রেসের এক রাজ্য নেতা বলেন, শর্মিষ্ঠার প্রচার খুবই সুচারু ভাবে হচ্ছে। এবং এতটাই সুপরিকল্পিত ভাবে হচ্ছে যে কংগ্রেসের অন্য প্রার্থীদের তা দেখে শেখা উচিত। পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস নেতাদেরও সুপরিকল্পিত ভাবেই প্রচারে কাজে লাগানোর চেষ্টা হবে। আশা করা হচ্ছে, তার ফলে আগামী পাঁচ দিনে সেখানকার মানুষের মন পরিবর্তনে অনেকটাই সফল হবেন শর্মিষ্ঠা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy