মাওবাদীদের খোঁজে জঙ্গলে অভিযান চালাচ্ছিলেন নওয়াদার এসপি। তখন সন্ধে নেমেছে। আচমকা তাঁর বদলির চিঠি নিয়ে সেখানে হাজির জেলার পরবর্তী পুলিশ সুপার। প্রশাসনিক নির্দেশ মেনে, তখনই সরকারি গাড়ি এবং নিরাপত্তারক্ষী ছাড়লেন সদ্য-প্রাক্তন এসপি। তার পর জঙ্গি অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে একাই বাসে পটনায় ফিরলেন ওই আইপিএস অফিসার!
এ খবর ছড়াতে হইচই শুরু হয়েছে রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে। ৭ জুলাইয়ের ওই ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ঝাড়খণ্ড-বিহার সীমানায় কয়েক দিন আগে জঙ্গি হামলায় সিআরপি বাহিনীর ডেপুটি কম্যান্ড্যান্ট হরিকান্ত ঝা নিহত হন। জঙ্গিদের খোঁজে দুই রাজ্যের পুলিশ তল্লাশি শুরু করে। অভিযান চলছিল নওয়াদাতেও। পুলিশ সূত্রের খবর, মাওবাদীদের ‘রেড করিডর’ হিসেবে চিহ্নিত রজৌলি এলাকায় বাহিনী নিয়ে ঘুরছিলেন জেলার এসপি সুধাংশুশেখর ত্রিবেদী। তখনই তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। লাইনের ওপারে ছিলেন জেলার নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত এসপি চন্দ্রিকা প্রসাদ। সুধাংশু কোথায় রয়েছেন তা তিনি জানতে চান। জঙ্গি-দমন অভিযানে ব্যস্ত থাকার কথা বললেও, কিছু ক্ষণের মধ্যে রজৌলিতেই পৌঁছে যান চন্দ্রিকা। সুধাংশু হাতে বদলির চিঠি ধরিয়ে দেন। এসপি-র জন্য বরাদ্দ সরকারি গাড়ি এবং নিরাপত্তাকর্মীদেরও ছেড়ে দিতে বলা হয়। জঙ্গলেই নতুন পুলিশ সুপারকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেন সুধাংশু। জনবিরল এলাকায় অন্য কোনও গাড়ি মেলেনি। জঙ্গি হামলার আশঙ্কা থাকলেও, বাসেই তিনি পটনা রওনা দেন।
ঘটনার বিবরণ ডিআইজি (মগধ রেঞ্জ) পি কে শ্রীবাস্তবকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন বিহার মিলিটারি পুলিশে বদলি হওয়া সুধাংশু। তদন্তের আর্জিও জানিয়েছেন। এ কথা স্বীকার করে ডিআইজি বলেছেন, “তদন্তে কারও দোষ প্রমাণিত হলে, উচ্চপদস্থ কর্তাদের তা জানানো হবে। উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে রাজ্য পুলিশ।” তবে কোনও আপত্তি ছাড়াই ওই পুলিশকর্তা এ ভাবে বাসে ফিরলেন কেন, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সুধাংশুর সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করা যায়নি। এ দিকে, তাঁর বিরুদ্ধে এ ধরনের কোনও অভিযোগ দাখিল হওয়ার কথা জানেন না বলে দাবি করেছেন নওয়াদার নতুন এসপি চন্দ্রিকা।
কয়েক জন পুলিশকর্তার বক্তব্য, সমস্তিপুরের এসপি ছিলেন চন্দ্রিকা। সেখানে বিভিন্ন কারণে কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। ওই জেলার দায়িত্ব ছাড়ার জন্য তিনি অনেক দিন ধরেই চেষ্টা করছিলেন। বদলির সরকারি নির্দেশ হাতে পাওয়ার পর তা-ই এক মুহূর্ত দেরি করতে চাননি। নওয়াদার এসপি-র অফিসে গিয়ে সুধাংশুর কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার সময়টুকুও দিতে রাজি ছিলেন না চন্দ্রিকা। তাই একেবারে জঙ্গলেই চলে যান। মাওবাদী-বিরোধী অভিযানে থাকা পুলিশকর্তার হাতে ‘রিলিজ-অর্ডার’ তুলে দেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy