সোনালী অতীত। ২০১০ সালের ডিসেম্বরে আইআইটিতে। —ফাইল চিত্র।
তিনি বরাবরই অনন্য।
ছোটবেলায় যুদ্ধবিমানের চালক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন তামিলনাড়ুর রামশ্বরমের ছোট্ট ছেলেটি। অল্পের জন্য হাতছাড়া হয়েছিল সেই ইচ্ছা। তবে হার না মানা মনোভাব ও অদম্য জেদে তিনি হয়ে ওঠেন ভারতের ‘মিসাইল ম্যান’। খড়্গপুর আইআইটি-তেও একাধিক বার এসেছেন ভারতের একাদশ তম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত আবুল পকির জয়নুলআবদিন আব্দুল কালাম।
প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অনন্য অবদান, দেশের বিজ্ঞানী-এই সব পরিচয়ের ঊর্ধ্বে তাঁর ছিল আরও একটি পরিচয়। তিনি ছিলেন একজন আদর্শ শিক্ষক। রাষ্ট্রপতি পদের গাম্ভীর্য ছেড়ে তিনি সহজেই পৌঁছে যেতেন আম দরবারে সকলের মাঝে। সোমবার রাতে এপিজে আব্দুল কালামের মৃত্যুর খবর আসতেই শোকস্তব্ধ হয়ে পড়ে গোটা দেশ। মঙ্গলবার আইআইটি-র প্রাক্তনী ও শিক্ষকদের স্মৃতিচারণায় উঠে আসে তাঁর কথা। কী ভাবে তিনি অতি সহজেই ভবিষ্যতের অগ্রগতির পথ দেখাতেন, আলোচনায় উঠে আসে সে সব কথাও। মঙ্গলবার বিকেলে প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানাতে আইআইটি-র ছাত্রদের পক্ষ থেকে জিমখানা থেকে একটি মোমবাতি মিছিল বের হয়। স্কলার্স অ্যাভিনিউ ধরে মিছিল পৌঁছয় প্রতিষ্ঠানের মূল ভবনে।
, রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন প্রথমবার ২০০৭ সালের ১৭ মে খড়্গপুর আইআইটি-র সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আসেন আব্দুল কালাম। সে দিনের কথা আজও ভুলতে পারেনি আইআইটি। ‘ওশিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ন্যাভাল আর্কিটেকচার বিভাগ’-এর শিক্ষক নিশীথরঞ্জন মণ্ডল বলছিলেন, ‘‘আমি তখন ‘স্টেপ’-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর। ওই সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আব্দুল কালাম মঞ্চে বসে ছিলেন। দর্শকাসনের প্রথম সারিতেই ছিলাম আমি। একই সারিতে বসেছিলেন ইলেকট্রনিক্স বিভাগের শিক্ষক প্রয়াত জিএস সান্যালও। আব্দুল কালাম তাঁকে দেখে হাত তুলে নমস্কার করেন। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি আইআইটিতে আবার আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন।’’
২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর। ন্যানো টেকনোলজি নিয়ে আয়োজিত একটি সম্মেলনে যোগ দিতে দ্বিতীয়বার আইআইটি-তে আসেন আব্দুল কালাম। সম্মেলনে তাঁকে আইআইটি-র অধ্যাপক (প্রফেসর এমিরেটর) পদ দিয়ে সম্মান জানানো হয়। ২০১২ সালের ১২ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের আগে ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনা করতে আব্দুল কালাম আইআইটি-তে আসেন। সেই সময় দেশের কল্যাণের জন্য আইআইটি-র ছাত্রদের আটটি শপথ পালনের কথা বলেছিলেন তিনি। কালামের কথায়, ‘‘আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু আদর্শ মানুষ, আদর্শ শিক্ষক ও আদর্শ বই।’’ জীবনে কোনও সমস্যার কাছেই হার না মানার পরামর্শ দেন তিনি। যে কোনও সমস্যা জয় করে সাফল্য লাভই মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত। বর্তমানে আমেরিকায় রয়েছেন খড়্গপুর আইআইটি-র ডিরেক্টর পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরেই রাতে ফেসবুকে একটি ছবি পোস্ট করেছেন পার্থপ্রতিমবাবু। ওই পোস্টে কালামের বলা ৮টি শপথ ও আইআইটি-র প্রাক্তনী হরিমোহন পিল্লাইয়ের আঁকা কালামের একটি ছবিও রয়েছে।
মঙ্গলবার কালাম স্মরণে মিছিল আইআইটি-র ছাত্রদের। —নিজস্ব চিত্র।
আব্দুল কালামকে কাছ থেকে দেখা আইআইটি-র স্নাতকস্তরের ডিন রাজেন্দ্র সিংহের কথায়, ‘‘ওঁকে যতবার দেখেছি নতুন করে কিছু জানতে পেরেছি। তিনি জাদু জানতেন, বিজ্ঞানের প্রতি তরুণ সম্প্রদায়ের আগ্রহ কী ভাবে বাড়াতে হয়।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘উনি যতবার আইআইটি এসেছেন, প্রতিবারই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের পাশাপাশি স্থানীয় স্কুলের পড়ুয়াদেরও ডাকা হয়েছিল। ওঁর মৃত্যু অত্যন্ত বেদনার।’’ একইভাবে, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক অমিত পাত্র বলেন, ‘‘একবার আব্দুল কালাম আমাদের পরীক্ষাগারে এসেছিলেন। আজ থেকে পাঁচ-সাত বছর আগে উনি যে পরামর্শ দিয়েছিলেন সেই বিষয়ে আমরা আজও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছি। উনি যেন বিজ্ঞানের ভবিষ্যবাণী করতেন।” ২০০৭ সালে আইআইটি-তে আব্দুল কালামের অটোগ্রাফ নেন খড়্গপুরের শহরের এক বাসিন্দা এন উমা মহেশ্বর রাও। মহেশ্বর রাওয়ের কথায়, ‘‘আব্দুল কালাম রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন ২০০৭ সালে আইআইটি-তে ওঁর সই নিতে গিয়েছিলাম। উনি আমার ১ লক্ষ সই সংগ্রহের কথা শুনে খুব আগ্রহ নিয়ে আমার আর্জি মেনে নেন। এত বড় মাপের একজন মানুষের এমন অমায়িক ব্যবহারের কথা আজও ভুলতে পারিনি।’’
এ দিন বিকেলে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির স্মরণে প্রতিষ্ঠানের জিমখানা থেকে মূল ভবন পর্যন্ত মোমবাতি মিছিল করে পড়ুয়ারা। মিছিলে সামিল তৃতীয় বর্ষের ছাত্র কপিল কালোনিয়া, শ্রীনিবাস নায়েক বলেন, ‘‘আব্দুল কালাম আমাদের দেশের গর্ব। ওঁর মতো মানুষ আমাদের প্রতিষ্ঠানে এসেছিলেন বলে শুনেছি। তাই ওঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই মিছিল করছি। উনি আমাদের মনে চিরকাল থাকবেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy