ডফিন চপার। —নিজস্ব চিত্র।
অভিশাপ কাটছে না পবনহংসের।
অরুণাচলপ্রদেশের টিরাপ জেলা থেকে পাশের খোনসা জেলায় যাওয়ার পথে নিখোঁজ হল পবনহংসের ডফিন ভিটি-ইএলএস হেলিকপ্টার। চপারে ছিলেন খোনসার জেলাশাসক কমলেশ জোশী-সহ দুই চালক ও এক সহকারী। বিমানবন্দরের এটিসি সূত্রে খবর, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ মোহনবাড়ি বিমানবন্দরের এটিসি-র সঙ্গে শেষ বার সেটির চালকের যোগাযোগ হয়েছিল। খারাপ আবহাওয়ায় কপ্টার নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে অরুণাচল প্রশাসন। সেনা ও বিমানবাহিনী তল্লাশি অভিযানে নামলেও এ দিন বিকেল পর্যন্ত মেলেনি সাফল্য।
পবনহংস সূত্রে খবর, কপ্টারটি এ দিন সকাল ৯টা নাগাদ অরুণাচলের নাহারলাগুন থেকে যাত্রী নিয়ে ডিব্রুগড় আসে। সেখান থেকে ১০টা নাগাদ যায় অরুণাচলের টিরাপে। সেখানকার খোনসা থেকে লংডিং জেলায় যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছিলেন জেলাশাসক। লংডিং এবং চাংলাংয়ের জেলাশাসককে নিয়ে চপারটির মোহনবাড়ি ফেরার কথা ছিল। সেখান থেকে বিমানে তিন জেলাশাসকের দিল্লি যাওয়ার কথা ছিল।
এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়ার বরঝাড় বিমানবন্দর অধিকর্তা জে এস বালারা জানান, চপারটি খোনসা থেকে ১০টা ২০ মিনিটে ওড়ে। ১১টা ২০ নাগাদ সেটির সঙ্গে এটিসির সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যায়। তখন সেটি টিরাপ এবং লংডিং-এর মধ্যবর্তী অংশে ছিল।
২০১৩ সালে অরুণাচলপ্রদেশের টিরাপে জেলাশাসক হিসেবে কাজে যোগ দিয়েছিলেন কমলেশ।
উত্তর-পূর্বে পবনহংসের চপার বার বার দুর্ঘটনার মুখে পড়েছে। কিন্তু, তাদের চেয়ে কম টাকায় ও সরকারি দর মেনে অন্য কোনও সংস্থা চপার চালাতে রাজি না হওয়ায় তারাই সেখানে চপার পরিষেবা দিচ্ছে।
স্থলবেষ্টিত অরুণাচলে পরিবহণের বিকল্প কম ও সড়কপথ দুর্গম, সময়সাপেক্ষ হওয়ায় চপার পরিষেবার অত্যন্ত চাহিদা। পবনহংসের দাবি, ২০১১ সালে জোড়া চপার দুর্ঘটনার পরে, ফের ২০১৩ সালে যখন অরুণাচলে চপার পরিষেবা শুরু হয় তখন তারা একটি নতুন এমআই-১৭২ এবং ডফিন চপার কিনেছিল। সে ক্ষেত্রে পুরনো চপারের যন্ত্র খারাপ হওয়ার দাবি খাটে না। তাদের চালকরাও যথেষ্ট অভিজ্ঞ। কিন্তু, উত্তর-পূর্বে খারাপ ও খামখেয়ালি আবহাওয়ার কারণেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
২০০৪ সালে শিলংয়ের কাছে বড়াপানিতে পবনহংসের চপার দুর্ঘটনায় মারা যান এক মন্ত্রী-সহ দুই বিধায়ক। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে তাওয়াং বিমানবন্দরে পাশেই ভেঙে পড়ে পবনহংসের এমআই-১৭২। মারা যান ১৭ জন। কয়েক দিন পরই তাওয়াং থেকে ওড়া পবনহংসের আরও একটি চপার অরুণাচলের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী খাণ্ডু দোরজির, দুই চালক, এক পুলিশ অফিসার-সহ নিখোঁজ হয়। কিছু দিন পর, জং এলাকার দুর্গম পাহাড়ে মেলে চপারের ধ্বংসাবশেষ। বলা বাহুল্য, কেউ বাঁচেননি। এ বারেও ঘটনাতেও আশঙ্কা তেমনই। কয়েক দিন আগেই পবনহংসের এমআই-১৭২ চপারটি ২০ জন যাত্রী নিয়ে নাহারলাগুন থেকে গুয়াহাটি আসার সময় খারাপ আবহাওয়ার জেরে শোণিতপুর জেলায় গ্রামের রাস্তায় জরুরি অবতরণে বাধ্য হয়।
এ দিনের নিখোঁজ চপার উদ্ধারে সেনা ও বিমানবাহিনীকে কাজে লাগানো হয়েছে। বিকেলে খবর মিলেছিল, অসমের তিনসুকিয়া জেলার মার্গারিটা ও অরুণাচলের দেওমালির সীমানায় আকাশে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গিয়েছে। চপারের ধ্বংসাবশেষও দেখা গিয়েছে। কিন্তু, তিনসুকিয়ার এসপি মুগ্ধজ্যোতি মহন্ত জানান, খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে সেখানে এখনও কোনও ধ্বংসাবশেষ মেলেনি। যেহেতু ওই এলাকায় নাগা ও আলফা জঙ্গিদের ঘাঁটি তাই এ দিনের মতো তল্লাশি অভিযানও বাতিল করা হয়েছে। ওই জঙ্গিদের কাছে আরপিজি এবং রকেট রয়েছে। তাই জঙ্গি হানার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছে না প্রশাসন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy