কেদারনাথ মন্দিরের আদলে সেজেছে নয়ডার মণ্ডপ। ছবি: প্রেম সিংহ
বাজারে আগুন। তায় ভোটের বছর। কর্পোরেটরাও হাত গুটিয়েছেন বিজ্ঞাপনে! তাই বাহ্যিক চাকচিক্য বা কলকাতা, মুম্বইয়ের নামজাদা শিল্পী নয়, এ বছর দিল্লির পুজো ফিরছে ঘরোয়া সাবেকি আবহে। থিমের গভীরতা ও স্থানীয় প্রতিভাদের গানবাজনায়। বাড়তি সংযোজন, এ বারের পুজোয় প্যান্ডেল তৈরি করার ক্ষেত্রে পরিবেশ ও নিরাপত্তার দিকটিকে মাথায় রাখা হচ্ছে অন্যান্য বারের চেয়ে অনেক বেশি। তার কারণ, এ বিষয়ে দৃষ্টান্তমূলক একটি পদক্ষেপ করেছে বেঙ্গল অ্যাসোসিয়েশন। পরিবেশ-বান্ধব মণ্ডপকে শারদ সম্মান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সংস্থার পক্ষ থেকে। পরিবেশ সচেতনতা ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সেরা তিনটি পুজোকে পুরস্কৃত করা হবে।
চিত্তরঞ্জন পার্কের ‘পকেট ফর্টি’র নবপল্লি পুজো সমিতির কথাই ধরা যাক। দিল্লির এই পুজোটি প্রত্যেক বারই বাজেট এবং বর্ণময়তায় মানুষের চোখ ধাঁধায়। কলকাতা এবং মুম্বইয়ের বহু শিল্পী এসে গান গেয়ে গিয়েছেন এখানে। কিন্তু এ বার? পুজো কমিটির অন্যতম কর্তা উৎপল ঘোষ জানাচ্ছেন, “এ বারের পুজোয় ঘরোয়া আবহ। কৃষ্ণনগর থেকে ডাকের সাজ করিয়ে এনেছি, ওটাই চমক। মণ্ডপ হয়েছে সাবেকি জমিদার বাড়ির ঢংয়ে।” তাঁর কথায়, এ বারে বাধ্য হয়েই বাজেট কমাতে হয়েছে কারণ, আশানুরূপঅর্থ ওঠেনি। বিজ্ঞাপন আসছেকম। উনিশ-বিশ একই কথা প্রায় সব পুজো আয়োজকদের মুখেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুজো কমিটির কর্তা জানালেন, “এই বছরই লোকসভা নির্বাচন হওয়ার ফলে ছোটএবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের ভাঁড়ারকমে এসেছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে ভোটের সময় সাহায্য করার একটা ব্যাপার থাকে। ফলে এখনপুজোর সময় বিজ্ঞাপনের প্রশ্নে ভাঁড়ে মা ভবানি।”
অমিতকুমার থেকে ঊষা উত্থুপ-- ময়ূর বিহারের ঐতিহ্যবাহী মিলনী পুজোয় এসে গান গেয়েছেন এমন অনেক শিল্পীই। সেই সব অনুষ্ঠানের ভিড় সামলাতে রীতিমতো হিমসিম খেতে হয়েছে পুলিশকে। এ বারে? পুজো কমিটির কর্তা তপন রায়ও বললেন, “এ বারে সাবেকি থিম। পুরনো ঐতিহ্য মেনে একচালার ঠাকুর। পাড়ার ছেলেমেয়েদের গান, নাচ এবং বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।”
চিত্তরঞ্জন পার্ক মিলন সমিতির পুজো কমিটি একটি নতুন পদক্ষেপ করেছে এ ব্যাপারে। যেহেতু বাজেটে টান, তাই বাইরের নামজাদা শিল্পীদের কাছে যাওয়ার প্রশ্ন নেই। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে রতন মুখোপাধ্যায় জানাচ্ছেন “আমরা এখানকার সাউন্ড মাইক সিস্টেম সংস্থাকে একটি ভাল অঙ্কের অর্থ দিচ্ছি। তার পর তাদেরই বলছি তোমাদের এই টাকা থেকে একটি ন্যূনতম অংশ স্থানীয় শিল্পীদের দাও। সেটা স্টেজেই ঘোষণা করা হবে। তা হলে এখানকার গাইয়ে বাজিয়েরাও একটু উৎসাহ পাবে।” তবে অনেক টাকা দিয়ে বাইরের শিল্পী নিয়ে আসা না-হলেও কোনও আপস করা হচ্ছে না পুজোর আচার, রীতি এবং মণ্ডপের থিমে। সেখানে রয়েছে নতুন নতুন উদ্ভাবনা।
নয়ডা সেক্টর ৫০-এর সপ্তর্ষি সঙ্ঘের মণ্ডপ এ বার কেদারনাথ মন্দিরের আদলে। পুজো কমিটির পক্ষ থেকে দীপতোষ মজুমদার জানালেন, “বন্যা-বিধ্বস্ত হয়ে যাওয়ার পরেও যে কেদারনাথ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে, এটা খুব জরুরিএকটা বিষয়।” গ্রেটার কৈলাশ টু-এর পুজোমণ্ডপ নিজেই আবার মণ্ডপের ইতিহাস। এখানে প্রদর্শনীর মাধ্যমে ধরা রয়েছে প্যান্ডেলের ২০০বছরের ইতিহাসকে।
বেঙ্গল অ্যাসোসিশনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেনগুপ্তের কথায়, “আমরা পরিবেশ-বান্ধব পুরস্কারটির কথা ঘোষণা করে ইতিমধ্যেই যথেষ্ট সাড়া পেয়েছি। আমরা লাখ-লাখ টাকা দিয়ে পুজো করি, বাজি পোড়াই, কিন্তু পরিবেশের কথা বিন্দুমাত্র ভাবি না। আমাদের উদ্দেশ্য, দুর্গাপুজোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিবেশ-সচেতনতা জাগিয়ে তোলা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy