এত দিন সকাল-বিকেল মোদী সরকারকে তোপ দাগছিল তারা। একেবারে শেষবেলায় সেই মোদী সরকারেরই প্রশংসা করে ২ সেপ্টেম্বরের সাধারণ ধর্মঘট থেকে সরে দাঁড়াল সঙ্ঘ-পরিবারের শ্রমিক সংগঠন। বিএমএস নেতৃত্ব আজ জানিয়ে দিলেন, মোদী সরকার শ্রমিকদের বেশ কিছু দাবিদাওয়া পূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাই তাঁরা এই মুহূর্তে ধর্মঘটে যাওয়ার প্রয়োজন দেখছেন না। বিএমএস নেতাদের দাবি, তাঁদের মতো আরও কয়েকটি শ্রমিক সংগঠন এখনই ধর্মঘটে যাওয়ার পক্ষপাতী নয়। কংগ্রেস ও বাম শ্রমিক সংগঠনগুলি অবশ্য এখনও ধর্মঘটে অনড়। গুরুদাস দাশগুপ্ত, তপন সেনদের পাশে নিয়ে আইএনটিইউসি সভাপতি জি সঞ্জীব রেড্ডি আজ জানিয়ে দিয়েছেন, সরকার এমন কোনও প্রতিশ্রুতি দেয়নি, যাতে ধর্মঘট থেকে সরে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি রয়েছে।
কেন ধর্মঘট থেকে সরে দাঁড়াচ্ছে বিএমএস?
সূত্রের খবর, বিএমএস নেতাদের উপর মোদী সরকারের তরফে প্রবল চাপ তৈরি করা হয়েছিল। যুক্তি ছিল, ধর্মঘটে শাসক শিবিরের সংগঠন সরকারের বিরুদ্ধে ধর্মঘট করলে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল বার্তা যাবে। ধাক্কা খাবে নরেন্দ্র মোদীর ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি। ধর্মঘট প্রত্যাহার করাতেই অরুণ জেটলির নেতৃত্বে মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হয়। জেটলিই শ্রমিকদের দাবি মেনে ন্যূনতম মজুরি ও বোনাসের ঊর্ধ্বসীমা বাড়ানো, অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের প্রতিশ্রুতি দেন। শ্রম আইন সংস্কারের ক্ষেত্রেও সরকার শিল্পমহল ও শ্রমিক সংগঠনকে নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক করেই এগোবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন জেটলি।
দিল্লিতে এক ডজন শ্রমিক ইউনিয়নের বৈঠকে বিএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় আজ জানান সরকারের প্রতিশ্রুতিতে তাঁরা আস্থা রাখছেন। এবং এ কারণে ধর্মঘট পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। বলেন, ‘‘সরকারকে এই প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য অন্তত ৬ মাস সময় দেওয়া উচিত। বাকি শ্রমিক সংগঠনগুলিকে সেই অনুরোধই করছি। আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহার করতে বলছি না। পিছিয়ে দিতে বলছি।’’ বাম শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের মতে, সরকার যে হিসেব কষে ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দিয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবের কোনও সম্পর্ক নেই। প্রশিক্ষণহীন শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ৭,১০০ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছেন জেটলি। তা অন্তত ১৫ হাজার টাকা করার দাবি তুলেছেন তাঁরা। অন্যরা ধর্মঘটে যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় ব্রিজেশ বলেন, ‘‘বাকিদের জন্য শুভেচ্ছা রইল।’’
বিএমএস সরে দাঁড়ানোয় ধর্মঘট সফল করার ক্ষেত্রে যে সমস্যায় পড়তে হবে, তা মানছেন বাকিরা। বিশেষ করে রাজধানী দিল্লিতেই পরিবহণ ব্যবস্থা অচল করা যাবে না। বামেরা নিজেদের তিন দুর্গে ধর্মঘটে নামবে। কিন্তু বাম নেতারা নিশ্চিত, পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ও দল ধর্মঘটে বাধা দেবে। বিশেষ করে গত কাল বামেদের মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বাম কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষের পর পুলিশ-প্রশাসন ২ তারিখ আরও কড়া হাতে ধর্মঘট বানচালের চেষ্টা করবে বলেই মনে করছেন তাঁরা। মমতা আজ নিজেই কলকাতায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জনসভায় বলেছেন, ‘‘২ সেপ্টেম্বর যারা স্কুল-বাস-ট্রাম বন্ধ করবেন, তাঁদের তো আমি মারতে যাব না। মানুষ নিজেরাই বন্ধ করতে দেবেন না। কারণ, বাংলার মানুষ বন্ধ চান না।’’ এই চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখেই বামেরা আগামী বুধবার ধর্মঘট সফল করতে রাস্তায় নামতে চাইছেন। এআইটিইউসি নেতা গুরুদাস দাশগুপ্ত বলেছেন, ‘‘আমরা শান্তিপূর্ণ ভাবে ধর্মঘট করব।’’
মমতার পাশাপাশি বিজেপি- শাসিত রাজ্যগুলিতেও পুলিশ-প্রশাসন কড়া হাতে ধর্মঘটের মোকাবিলা করবে বলে শ্রমিক নেতারা মনে করছেন। ঠিক এই কারণেই অন্য শ্রমিক সংগঠনের নেতারা যে কোনও মূল্যে বিএমএস-কে পাশে রাখার জন্য সব রকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। বিএমএস স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিল, মোদী সরকারের প্রথম বছরে তাঁরা কোনও প্রতিবাদে যাবে না। তাই মে মাসে সরকারের এক বছর পূর্ণ হওয়ার পরই শ্রমিক সংগঠনগুলির সম্মেলন ডাকা হয়। বাকিরা জুলাই মাসেই ধর্মঘটে যেতে চেয়েছিলেন। বিএমএস-ই ২ সেপ্টেম্বরের প্রস্তাব দেয়। তাতে বাকিরা রাজি হন। এর পরেও একেবারে শেষবেলায় বিএমএস সরে দাঁড়ানোয় আজ দৃশ্যতই হতাশ হন বাকিরা। গুরুদাস বলেন, ‘‘আমরা দুঃখিত। আবার ভবিষ্যতে ওঁদের সঙ্গে আন্দোলনে যাওয়ার চেষ্টা করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy