নরেন্দ্র মোদীর হাতে ক্ষমতা খর্ব হওয়ার আশঙ্কা তাড়া করছে সঙ্ঘ পরিবারের অনেক নেতাকে। এই অবস্থায় তাঁদের আশ্বস্ত করতে আরএসএস নেতাদের সঙ্গে নৈশভোজ সারলেন নরেন্দ্র মোদী।
মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার সময়ই সঙ্ঘের একাংশের আশঙ্কা ছিল, ভবিষ্যতে আরএসএসের প্রভাব খর্ব হতে পারে। কিন্তু দলের অন্দরেই প্রবল চাপের মুখে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন তাঁরা। মোদী ক্ষমতায় আসার পর সংগঠনের একাংশের আপত্তি সত্ত্বেও তাঁর ঘনিষ্ঠ অমিত শাহকে দলের সভাপতি হিসেবেও মেনে নেয় আরএসএস। মোদীর যুক্তি ছিল, অতীতে সরকার ও দলের মধ্যে যে সমন্বয়ের অভাব ছিল, এ বারে তা হওয়া উচিত নয়। তবে অমিতকে সভাপতি করলেও দলের উপরে সঙ্ঘের রাশ যাতে আলগা হয়ে না যায়, সে ব্যাপারেও উদ্যোগী হচ্ছেন আরএসএস নেতারা।
সরকার ও সংগঠনের রাশ মোদীর হাতে চলে যাওয়ায় এখন বিজেপির নানা সিদ্ধান্তে সরাসরি সামিল হতে চাইছেন সঙ্ঘ নেতারা। তাই রাম মাধব, শিব প্রকাশের মতো সঙ্ঘ নেতাকে বিজেপিতে সামিল করা হয়েছে। আজ দলের নতুন টিম ও আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের কৌশল নিয়ে আলোচনার জন্য অমিতের সঙ্গে বৈঠক করেন ভাইয়াজি জোশী, সুরেশ সোনির মতো সঙ্ঘের শীর্ষ নেতারা। স্বয়ং সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতও আজ দিল্লিতে। মোদী সরকারের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই যাতে সঙ্ঘের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সম্পর্কে ফাটল তৈরি না হয়, সে জন্যই আজ সঙ্ঘ নেতাদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ করেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে বিজেপি যত বার দুর্বল হয়েছে, তত বারই তার কাজে সক্রিয় ভাবে হস্তক্ষেপ করেছে সঙ্ঘ পরিবার।
এখন সঙ্ঘের অনেক নেতা বুঝতে পারছেন, মোদী ক্রমশই অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠছেন। তিনি এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, যা সঙ্ঘের অবস্থানের সঙ্গে খাপ খায় না। তবে বিজেপির এক নেতার কথায়, “সঙ্ঘের মধ্যে এখন অনেকগুলি সঙ্ঘ রয়েছে। একটি অংশ মোদীর পক্ষে। কিন্তু একটি অংশের মোদীর ব্যাপারে সংশয়ী।” সে কারণে সঙ্ঘ নেতৃত্ব চাইছেন, শুরু থেকেই বড় সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রভাব রাখতে।
অন্য দিকে মোদী দেখাতে চাইছেন, তিনি সব সিদ্ধান্ত সঙ্ঘকে সঙ্গে নিয়েই করছেন। অমিত সভাপতি হওয়ার পরেই সঙ্ঘের সদর দফতর নাগপুরে গিয়েছেন। আজ সঙ্ঘ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য মোহন ভাগবত-ঘনিষ্ঠ প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি নিতিন গডকড়ীর বাড়িই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। সেখানে সঙ্ঘের আর এক ঘনিষ্ঠ নেতা রাজনাথ সিংহও ছিলেন। ফলে সঙ্ঘকে বাদ দিয়ে তিনি বা অমিত যে কোনও সিদ্ধান্তই নিচ্ছেন না, সেই বার্তাও দেওয়া হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে। আজকের নৈশভোজ তারই অঙ্গ।
বিজেপি সূত্রের খবর, সঙ্ঘের কথা মেনেই সদ্য রাম মাধবকে সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে সমন্বয়কারী একটি পদ দেওয়া হতে পারে। সঙ্ঘ থেকে আসা আর এক নেতা শিব প্রকাশও আনুষ্ঠানিক ভাবে যোগাযোগ রাখবেন আরএসএসের সঙ্গে। সংসদীয় বোর্ডে লালকৃষ্ণ আডবাণীর মতো কিছু প্রবীণ নেতাকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে অনন্ত কুমার, থাওরচন্দ্র গহলৌত বাদ পড়তে পারেন সংসদীয় বোর্ড থেকে। একই ভাবে দলের নির্বাচন কমিটি থেকে বাদ যেতে পারেন শাহনওয়াজ হোসেন, বিনয় কাটিয়ারের মতো নেতারা। অগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে দিল্লিতে দলের কর্মসমিতি ও পরিষদের বৈঠক ডেকে দলের সিদ্ধান্তগুলিতে সিলমোহর বসাতে পারে বিজেপি।
দাগি হটাতে উদ্যোগ
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
নির্বাচনী প্রচারে ‘দাগি’ নেতাদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে সাংসদদের বিরুদ্ধে চলা ফৌজদারি মামলাগুলির দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ ও আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। সরকারি সূত্রে খবর, দাগি নেতাদের হটাতে আন্তরিক ভাবেই উদ্যোগী হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে অভিযোগ করা হয়। তাই সাংসদদের বিরুদ্ধে মামলাগুলি খতিয়ে দেখে রোডম্যাপ তৈরি করতে চান প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে দাগিদের ভোটে লড়া রুখতে বিল আনার কথাও ভাবতে পারে কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy