Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বাঁকায় ভোট ছাপিয়ে বইছে নলবাবা-র জল

এই মন্দিরে কোনও দেবতা নেই। নেই কোনও পুরোহিতও। কিন্তু সেই মন্দিরেই ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা। মাসখানেকে আগে তৈরি হওয়া এই মন্দিরে ভক্তের ভিড় প্রতি দিনই বাড়ছে।

দিবাকর রায়
বাঁকা শেষ আপডেট: ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ১৫:১১
Share: Save:

এই মন্দিরে কোনও দেবতা নেই। নেই কোনও পুরোহিতও। কিন্তু সেই মন্দিরেই ভিড় জমাচ্ছেন ভক্তরা। মাসখানেকে আগে তৈরি হওয়া এই মন্দিরে ভক্তের ভিড় প্রতি দিনই বাড়ছে।

বিহারের এই ভোটের বাজারেও প্রত্যন্ত বাঁকা জেলার পাটওয়া গ্রামে ‘নলবাবার মন্দির’ রীতিমতো ‘সুপার হিট’! দূরদূরান্ত থেকে মানুষ আসছেন, নলের জলে স্নান করছেন। ভেজা কাপড় ছেড়ে নতুন বস্ত্রে বাড়ি ফিরে যাচ্ছেন। স্নানেই নাকি দেবতার আশীর্বাদ। জেলা প্রশাসন বিষয়টির কথা জানে। তবে নির্বাচনের মরসুমে এই মন্দিরের জন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার তা তারা এখনও ঠিক করতে পারেনি। জেলাশাসক নীলেশ দেউরে নিজে ওই এলাকায় গিয়েছেন। মহকুমাশাসক এবং এসডিপিও-কে তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেওয়ার জন্য বলেছেন।

জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পাটওয়া গ্রামের বাইরে পুনসিয়া-ধরওইয়া রাস্তার পাশে দীর্ঘ দিন ধরে একটা ইটভাটা ছিল। সেই ইটভাটার কাজের জন্যই বসানো হয়েছিল গভীর নলকূপ। মাঝে মাঝে ইটভাটা বন্ধ হয়ে যেত। কিন্তু গ্রামে জলের সমস্যার জন্য গ্রামবাসীরা নলকূপটি ব্যবহার করতেন। ইটভাটা কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের উপরে বিরক্ত হয়ে নলকূপ বন্ধ করে দেন। কিছু দিন পরে বন্ধ হয়ে যায় ইটভাটাটিও। এর পর গ্রামবাসীরা নিজেদের মতো করে নলকূপটি চালু করে নেন। তবে তাতে মাঝে মাঝেই জল ওঠা বন্ধ হয়ে যেত।

গত বছরখানেক ওই নলকূপে জল ওঠা বন্ধ। হঠাত্ই মাসখানেক আগে এক ‘সন্ত’ গ্রামে হাজির হন বলে বাসিন্দাদের দাবি। তিনি ওই নলকূপ চালু করে দেন। সেই গভীর নলকূপের জল পান করে গ্রামের কোনও মূক ও বধির নাকি কথা বলতে শুরু করেছেন, দাবি ভক্তদের। এর পরেই গ্রাম ও সংলগ্ন এলাকা জুড়ে শুরু হয়েছে প্রচার। প্রচার ‘নলবাবা’র। আর সেই প্রচারের টানেই প্রতি দিন হাজির হচ্ছেন কয়েক হাজার মানুষ। তবে কেউই নলবাবা বা কথা বলতে পারা সেই মূক ও বধিরের হদিস দিতে পারছেন না। গ্রামের বাসিন্দা অজয় কুমার বলেন, ‘‘নলবাবা আমাদের গ্রামের নন। আমি দেখিনি। তবে শুনেছি তিনি মূক-বধিরকে জল খাইয়ে কথা বলিয়েছেন।’’ বিষয়টি যে নিতান্তই কুসংস্কার তা জানে দশম শ্রেণির ছাত্রী, ভাগলপুরের বাসিন্দা পূর্ণিমা কুমারী-মিনা কুমারীরা। তবুও তারা হাজির নলবাবার কলে স্নান করার জন্য।

গ্রামের মানুষ অবশ্য ভক্তদের এই আচরণে বিরক্ত। বিশেষ করে, স্নানের পরে ভক্তদের ফেলে যাওয়া জামাকাপড় নিয়ে তারা পড়েছে বিপাকে। তাদের অভিযোগ, এই ছেড়ে যাওয়া বস্ত্রের জেরে ছড়িয়েছে দূষণ। প্রথম দিকে বাসিন্দারা ভগবান ‘প্রকট’ হওয়ায় খুশি হলেও এখন ক্ষুব্ধ। জেলা প্রশাসনের কাছে তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানিয়েছেন। গ্রামের বাসিন্দা মহম্মদ রফিকের বক্তব্য, ‘‘এলাকায় জলকষ্ট রয়েছে। গভীর নলকূপ হওয়ায় জলের মান ভাল। তাতে পেটের সমস্যাও কমেছে।’’ আর জেলাশাসক নীলেশ বলেন, ‘‘এখানে উষ্ণ প্রস্রবণের কোনও সম্ভাবনা নেই। আমি নিজে চিকিৎসক। জলে সালফারও নেই। তবুও স্রেফ রটনার জেরে মানুষ ভিড় করছেন। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nalbaba bihar ranchi dibakar roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE