Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভোটযুদ্ধে দু’ডজন প্রাক্তন আমলা-পুলিশকর্তা

অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সুজিতকুমার ঘোষের মিল কোথায়? কেরলের ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজের সঙ্গে কোথায় মেলে বিহারের রাজকুমার সিংহের গল্প? ক্যুইজের প্রশ্ন হলে উত্তর হত, এঁরা সকলেই প্রাক্তন আমলা। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন। কেউ আইএএস, কেউ আইপিএস, আইএফএস বা আইআরএস অফিসার। এ বারের লোকসভা নির্বাচন সকলকে আর এক ভাবে মিলিয়ে দিয়েছে। সকলেই এ বার ভোটের প্রার্থী।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:০৪
Share: Save:

অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গে মুর্শিদাবাদের সুজিতকুমার ঘোষের মিল কোথায়? কেরলের ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজের সঙ্গে কোথায় মেলে বিহারের রাজকুমার সিংহের গল্প?

ক্যুইজের প্রশ্ন হলে উত্তর হত, এঁরা সকলেই প্রাক্তন আমলা। কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করেছেন। কেউ আইএএস, কেউ আইপিএস, আইএফএস বা আইআরএস অফিসার। এ বারের লোকসভা নির্বাচন সকলকে আর এক ভাবে মিলিয়ে দিয়েছে। সকলেই এ বার ভোটের প্রার্থী।

আমলা হিসেবে চাকরি জীবনে এঁরা মন্ত্রী-সাংসদদের স্যালুট ঠুকেছেন। এ বার নিজেরাই সাংসদ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। নয় নয় করে প্রায় দু’ডজন প্রাক্তন আমলা-পুলিশ বা কূটনীতিক এ বার লোকসভা ভোটের ময়দানে। রাজস্ব দফতরের আমলার চাকরি ছেড়ে সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া অরবিন্দ কেজরীবাল তো রয়েইছেন। বাকিদের মধ্যে যেমন অজিত জোগী, মণিশঙ্কর আইয়ার, মীরা কুমারের মতো পোড় খাওয়া রাজনীতিকরা রয়েছেন, তেমনই রয়েছেন রাজকুমার সিংহ বা ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজদের মতো নতুনরা। চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পরই নতুন উদ্যমে তাঁরা রাজনীতির মাঠে নেমেছেন। প্রশাসক হিসেবে অভিজ্ঞতাকে রাজনীতিতে কাজে লাগাতে চাইছেন। আইএএস, আইআরএস বা আইএফএস-দের পিছনে ফেলে দিয়েছেন প্রাক্তন পুলিশ-কর্তারা। ২৪ জনের মধ্যে ১৪ জনই প্রাক্তন আইপিএস।

আমলাদের মধ্যে এ বারের লোকসভা ভোটে সব থেকে আলোচিত নাম অবশ্যই প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ। কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ শীর্ষপদ থেকে অবসর নেওয়া মাত্রই রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার এমন দৃষ্টান্ত বিশেষ নেই। বিহার ক্যাডারের এই আমলা বিজেপিতে যোগ দিয়ে সেই দৃষ্টান্তই তৈরি করলেন। বিহারের আরা থেকে তাঁকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। কিছু দিন আগে পর্যন্তও রাইসিনা হিলসের গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ক্রিস্টি ফার্নান্ডেজ কেরলের এর্র্নাকুলাম থেকে ভোটে লড়ছেন। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিলের সচিব ছিলেন তিনি। পরে দিল্লির লেফটেনান্ট গভর্নর পদেরও অন্যতম দাবিদার ছিলেন ক্রিস্টি। এ বার নির্দল প্রার্থী হয়েই ভোটের ময়দানে তিনি। সিপিএম তাঁকে সমর্থন করেছে। বিহারের আমলা কে পি রামাইয়া চাকরি থেকে স্বেচ্ছাঅবসর নিয়ে নীতীশ কুমারের জেডি(ইউ)-তে যোগ দিয়েছেন। মীরা কুমারের বিরুদ্ধে তাঁকে সাসারামে প্রার্থী করেছেন নীতীশ।

আমলাদের চাকরি ছাড়া আর রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার মধ্যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধান থাকা উচিত বলে মনে করেন অবসরপ্রাপ্ত আমলা গোপালকৃষ্ণ পিল্লাই। পিল্লাই নিজেও দীর্ঘ সময় স্বরাষ্ট্রসচিবের পদে ছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের এই অবসরপ্রাপ্ত আমলা নিজেও স্বরাষ্ট্রসচিবের পদে ছিলেন। পিল্লাই বলেন, “কোনও স্পর্শকাতর পদ থেকে অবসর নেওয়ার পর রাজনীতিতে যোগ দিলে দেওয়া যেতে পারে, তবে বছর দুই অপেক্ষা করে এগোলেই ভাল। না হলে সংশয় তৈরি হতেই পারে যে চাকরি জীবনেই কারও রাজনৈতিক ঝোঁক তৈরি হয়েছিল। সেই কারণে শেষবেলায় নেওয়া সরকারি সিদ্ধান্তগুলো নিয়েও প্রশ্ন তৈরি হতে পারে।”

আইএএস-দের মতো আইপিএস-দের ক্ষেত্রেও অবসর ও রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার মধ্যে কিছুটা সময়ের ফারাক থাকা উচিত বলে মনে করেন প্রকাশ সিংহ। বিএসএফের প্রাক্তন এই ডিজি উত্তরপ্রদেশ ও অসমের পুলিশ প্রধানের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। প্রকাশ বলেন, “এমনিতেই অবসরের পরে কোনও পদ পাইয়ে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে অফিসারদের উপর প্রভাব খাটানোর চেষ্টা হয়। অবসরের ঠিক আগে সেটা সব থেকে বেশি হয়। কাজেই কেউ যদি অবসরের পরেই কোনও দলে যোগ দেন, মনে হতেই পারে শেষ বেলায় সিদ্ধান্তগুলো দেশের স্বার্থে নয়, অন্য কোনও উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।”

ভোটের ময়দানে আইএএস-দের অবশ্য পিছনে ফেলে দিয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস-রা। এখনও পর্যন্ত ১৪ জন প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা ভোটের লড়াইয়ে নাম লিখিয়েছেন। অনেকেই লড়ছেন হেভিওয়েট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা নিখিল কুমার কেরলের রাজ্যপালের পদ ছেড়ে কংগ্রেসের টিকিটে ঔরঙ্গাবাদে প্রার্থী হয়েছে। রাজস্থানে দউসা কেন্দ্রে মুখোমুখি দুই ভাই, দু’জনেই অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস কংগ্রেসের নমোনারায়ণ মীনা ও বিজেপির হরিশ মীনা। অরবিন্দ কেজরীবাল নিজেই একগুচ্ছ আইপিএস-কে প্রার্থী করেছে। কেরলে শশী তারুরের বিরুদ্ধে অজিত জয়, বারামতীতে শরদ পওয়ার-কন্যা সুপ্রিয়া সুলের বিরুদ্ধে সুরেশ খোপারের মতো প্রাক্তন পুলিশ-কর্তাদের উপরেই ভরসা রেখেছেন কেজরীবাল।

পশ্চিমবঙ্গও ব্যতিক্রম নয়। মুর্শিদাবাদে লড়ছেন রাজ্যের প্রাক্তন ডিজি সুজিতকুমার ঘোষ। ব্যারাকপুর থেকে প্রার্থী হয়েছেন আর এক আইপিএস আর কে হান্ডা। দু’জনেই বিজেপির টিকিটে। ঝাড়খণ্ডের পালামৌ, রাঁচি, উত্তরপ্রদেশের বাঘপত থেকেও প্রাক্তন আইপিএস-দের প্রার্থী করেছে বিজেপি।

বিষয়টির একটা ভাল দিকও অবশ্য দেখছেন অনেকে। সাবেক পুলিশ কর্তা প্রকাশ সিংহের যুক্তি, “শিক্ষিত, প্রশাসনের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক রাজনীতিতে আসছেন, সেটা একটা ইতিবাচক দিক।” একই মত গোপালকৃষ্ণ পিল্লাইয়েরও। তবে তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক দলে নাম না-লিখিয়েও সমাজের জন্য অনেক কিছু করা যায়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

bureaucrats in ellection
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE