Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মণিপুরের তাঁবুতে ওবামার ঠাকুরদা

সাকুল্যে দেড় দিনের দিল্লি সফর। তবুও নাছোড় আবদারটা একাধিক বার এসেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি এক বার আসতে পারেন মণিপুর? উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই পাহাড়ি রাজ্যের কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি ওবামার দ্বিতীয় ভারত সফর হলেও, এ দেশে তিনিই প্রথম ওবামা নন।

রাহুল রায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৫ ০৩:১৯
Share: Save:

সাকুল্যে দেড় দিনের দিল্লি সফর।

তবুও নাছোড় আবদারটা একাধিক বার এসেছে প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কি এক বার আসতে পারেন মণিপুর?

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ওই পাহাড়ি রাজ্যের কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে এটি ওবামার দ্বিতীয় ভারত সফর হলেও, এ দেশে তিনিই প্রথম ওবামা নন। মণিপুরের এমনই একটি সংগঠন ‘ব্যাটল অফ ইম্ফল’-এর দাবি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বারাক ওবামার পিতামহ আস্ত একটা পক্ষকাল কাটিয়ে গিয়েছিলেন মণিপুরের পাহাড়ে। এই ভারত-যোগের সূত্র ধরেই সংগঠনগুলির অনুরোধ, এক বার যদি ওই পাহাড়ি রাজ্যে পা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। এই অনুরোধ অন্তত এ যাত্রায় রক্ষা করা যে সম্ভব নয়, তা স্পষ্ট করে দিয়েছে হোয়াইট হাউসের এগজিকিউটিভ অফিস অফ প্রেসিডেন্ট (ইওপি)।

বারাক ওবামার পরিবারের এই মণিপুর যোগসূত্র ও তার জেরে পাহাড়ি মানুষের এই উচ্ছ্বাসকে ‘স্বাভাবিক’ বলেই মনে করছে মার্কিন প্রশাসন। কারণ, পূর্ব আফ্রিকার ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আফ্রিকান হিস্ট্রি’ বিভাগের সুপরিচিত গবেষক টিমোথি পার্সনস ওবামা পরিবারের ভারত-যোগের এই যে তথ্য খুঁড়ে বার করেছেন। খোদ বারাক ওবামাও তাকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সাত দশক আগে মণিপুরের প্রায় নিঝুম গণ্ডগ্রামে সেই ‘প্রথম ওবামা’র পা পড়েছিল ‘গড সেভ দ্য কিং’-এর তালে পা মিলিয়ে, সেনা অনুশাসনের মোড়কে। সে দিন মণিপুরের মোরে জেলার পটসাংবাম এলাকায়, জঙ্গল সাফ করে তাঁবু পড়েছিল সার দিয়ে। কোনও রাজকীয় আতিথেয়তার প্রশ্নই ছিল না। জিরিয়ে নেওয়ার সুযোগও মেলেনি। লটবহর নামিয়েই ব্রিটিশ সেনাপতির জলপাই রঙের তাঁবুর পাশে তড়িঘড়ি চুল্লি ধরিয়ে রান্নার তোড়জোড় করতে হয়েছিল তাঁকে।

তিনি হোসেন ওনিয়াঙ্গো ওবামা। সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক হোসেন ওবামার পিতামহ।

ইওপি সূত্রে জানানো হয়েছে, ব্রিটিশ সেনা বাহিনীতে ওনিয়াঙ্গোর বাধ্যতামূলক যোগদানের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্টের অজানা নয়। কিন্তু সেই সুবাদে তাঁর দাদু যে ভারত-মায়ানমার সীমান্তের প্রত্যন্ত পাহাড়ি গ্রামেও পাড়ি দিয়েছিলেন, এমন ‘চমক লাগানো তথ্য’ তাঁরও জানা ছিল না।

এমন ঐতিহাসিক এক তথ্য যে সামনে এসে পড়তে পারে, টিমোথিও তা ভাবতে পারেননি। তাঁর ‘রেস, রেসিস্ট্যান্স অ্যান্ড দ্য বয়স্কাউন্ট মুভমেন্ট অফ কলোনিয়াল আফ্রিকা’ বইয়ে ওনিয়াঙ্গোর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের বর্ণনা রয়েছে। টিমোথির কথায়, “কেনিয়া, আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তিন মহাদেশের মধ্যে নিঃশব্দে একটা মেলবন্ধন তৈরি করে দিয়েছে ওবামা পরিবার।”

‘ব্যাটল অফ ইম্ফল’-এর ইতিহাস বলছে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ অধিকৃত বর্মা (বর্তমানে মায়ানমার) আক্রমণ করেছিল জাপান। মিত্রশক্তির বর্মা পুর্নদখল করতে ১৯৪৪-এ ডাকা হয় ‘কিংস আফ্রিকান রাইফেলস’-কে। জুলাইয়ের এক দুপুরে ১১ ইস্ট আফ্রিকান ডিভিশন ভারত-বর্মা সীমান্তে এসে পৌঁছয়। টিমোথির দাবি, সেই বাহিনীর ক্যাপ্টেনের রাঁধুনি হয়েই ভারতে এসেছিলেন ওনিয়াঙ্গো।

যুদ্ধফেরত ওনিয়োঙ্গোর জীবন অবশ্য বাঁক নিয়েছিল অন্য দিকে। ব্রিটিশ পরাধীনতা থেকে মুক্তির খোঁজে উত্তাল কেনিয়া। ‘কিকুয়ু সেন্ট্রাল অ্যাসোসিয়েশন’-এর নেতৃত্বে মাউ মাউ বিদ্রোহ শুরু হয়ে গিয়েছে। ব্রিটিশ সেনার খবর বিদ্রোহীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগে ১৯৪৯ সালে ওনিয়োঙ্গো গ্রেফতার হন। দু’বছর কারাবাসের ‘অসহনীয় অভিজ্ঞতা’র কথা টাইমস পত্রিকার সাংবাদিক বেন ম্যাকিনটায়ার এবং পল ওরেঙ্গোকে এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি জানিয়েছেন তাঁর স্ত্রী সারা ওবামা। তাঁর কথায় ‘মাউ মাউ বিদ্রোহের গোপন খবর জানতে ওনিয়োঙ্গোর উপরে যে অত্যাচার হয়েছিল তা ছিল ভীতিজনক। নখ উপড়ে দেওয়া হয়েছিল, সারা গায়ে অনর্গল ফোটানো হত ছুঁচলো পিন।” আর মার্কিন প্রেসিডেন্ট, কয়েক বছর আগে প্রকাশিত তাঁর ‘ড্রিমস ফ্রম মাই ফাদার’ বইয়ে লিখেছেন, ‘দাদু নির্দোষ প্রমাণ হওয়ায় ছ’মাসের মধ্যে তাঁকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল’।

আর ওনিয়াঙ্গো কি ভেবেছিলেন, সেনাবাহিনীর রাঁধুনি হয়ে যে দেশে তাঁর পা পড়েছিল, তারই রাজধানীতে এয়ারফোর্স ওয়ানের ছায়া ফেলে এক দিন নেমে আসবেন তাঁর নাতি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE