চাপের মুখে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত বাদল সাঁওতালের দেহ মাটি খুঁড়ে বের করে তাঁর স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়ার পরেও জেলা প্রশাসনের ‘দোষ স্খালন’ হচ্ছে না। পুলিশের বিরুদ্ধেও অভিযোগ তীব্রতর হচ্ছে। তাকে ঘিরে বরাক উপত্যকায় রাজনীতি অব্যাহত।
পথ দুর্ঘটনায় বাদল সাঁওতালের মৃত্যু এবং পরবর্তী ক্ষেত্রে ট্রিপার-ট্রাকের চালক সাদিক আহমেদ বড়ভুইয়াকে পিটিয়ে হত্যা করে তাঁর দেহ ট্রাকে ফেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পিছনে সরাসরি রাজনৈতিক মদতের অভিযোগ রয়েছে। দুর্ঘটনা ও পাল্টা-ঘটনা শেষ পর্যন্ত জনজাতি সংঘর্ষের চেহারা নেয়। প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা একান্তে স্বীকার করছেন, কৌশলে ঘটনার মোকাবিলা করতে প্রশাসন পারেনি। এই সূত্রের অভিযোগ, আগামী বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে বিভিন্ন ভাবে তারই সুযোগ নিয়ে চলেছে রাজনীতির কারবারীরা।
আজও বাদল সাঁওতাল-সাদিক আহমেদের মৃত্যু নিয়ে টানাপড়েন চলেছে। এক দিকে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি)-এর এক প্রতিনিধি দল জেলাশাসক এস বিশ্বনাথনের সঙ্গে দেখা করে পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন। হাইকোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করানোর আর্জি জানান তাঁরা। কার পরামর্শে বাদল সাঁওতালের মৃতদেহ পুলিশ মাটিতে পুঁতে রেখেছিল, তাও জানতে চায় ভিএইচপি। অন্য দিকে, জেলাপ্রশাসনের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছে সারা অসম সংখ্যালঘু ছাত্র ইউনিয়ন (আমসু)। তাঁরা উপত্যকার শান্তি-শৃঙ্খলা ও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সৌহার্দ্য বজায় রাখার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন।
পরস্পরের দিকে আঙুল তুললেও দু’টি সংগঠনের বক্তব্যে যথেষ্ট মিল রয়েছে। উভয়ের স্মারকপত্রেই বলা হচ্ছে, বরাক উপত্যকায় অশান্তি সৃষ্টির চক্রান্ত চলছে। সাম্প্রতিক ঘটনাবলি তারই অঙ্গ। এ ব্যাপারে একটি চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। একে প্রশমিত করা না গেলে আগামী দিনে যে কোনও ধরনের বিপদ হতে পারে। প্রশাসন এই কাজে আগ্রহ না দেখালে তাঁরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলে পৃথকভাবে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন দু’পক্ষই।
ভিএইচপি একই সঙ্গে পুলিশকেও দোষারোপ করেছে। তাঁদের অভিযোগ, সময়োচিত ব্যবস্থা নিতে কাছাড় পুলিশ ব্যর্থ হচ্ছে। তাতে সমস্যা বাড়ছে। বারবার এমন ঘটনায় জেলার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি হুমকির মুখে পড়ছে বলে তাঁরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। ময়নাগড়কে উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে তাঁরা বলেন, বাদল সাঁওতালের মৃতদেহ শুরুতেই তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া উচিত ছিল। মৃতদেহ নিতে আসার পর মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাঁর শ্বশুর মুকুল সাঁওতালকে গ্রেফতার করাও ঠিক হয়নি বলে তাঁরা জেলাশাসককে বলেন। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসনের দীর্ঘ নীরবতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
ভিএইচপি নেতা মৃণালকান্তি দাস, অরিজিত্ দেব, পরিতোষ চন্দ-দের অভিযোগ, ‘‘পুলিশ ময়নাগড়ে গিয়ে যাকে-তাকে তুলে এনেছে। অথচ ক’দিন আগে মেহেরপুরে দুই গ্রাম পঞ্চায়েত সভাপতি শারীরিকভাবে নিগৃহীত হলেও পুলিশ দোষীদের ধরতে পারছে না।’’ তাঁরা বাদলের আত্মীয়স্বজন-সহ ধৃত নির্দোষদের দ্রুত মুক্তির দাবি করেন। দু’টি মৃত্যুকেই মর্মান্তিক বলে উল্লেখ করে ভিএইচপি নেতারা দু’জনের নিকটাত্মীয়কেই সম-পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিতে অনুরোধ করেন।
আমসুর কাছাড় জেলা কমিটির মুখ্য আহ্বায়ক নাজির হোসেন মজুমদার বলেন, দুই-তিন বছর থেকে একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ উত্তেজনাকর বক্তব্য রাখছেন। তাতেই জেলায় হিংসাত্মক ঘটনা বেড়ে চলেছে। এখনই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নিলে যে কোনও সময় বড় কোনও অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে আমসুর আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy