Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
অস্বস্তিতে মোদী

মোদীর সামনেই বিদ্রোহ, ক্ষোভ বাড়ছে দলেও

ঘরের ভিতরেই অসন্তোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই প্রথম বার। একই দিনে, পর পর দু’টি ঘটনায়। প্রথমটি একদম খোলা হাটে প্রকাশ্য বিদ্রোহ, দ্বিতীয়টি আড়ালে আবডালে। বুধবার সকালে বসেছিল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানে সকলের সামনেই উঠে দাঁড়ান উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার সাংসদ ভরত সিংহ। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দিল্লি থেকে প্রকল্প ঘোষণা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবের জমিতে তার প্রতিফলন ঘটছে না। সে জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে সাংসদদেরই। তাঁর ক্ষোভ, সাংসদদের লাগাতার বলা হচ্ছে মানুষের সামনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলির সুফলকে তুলে ধরতে। কিন্তু জমিতেই যদি এ সবের প্রতিফলন না ঘটে, তা হলে কী করবেন সাংসদরা?

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৫ ০৪:৩৩
Share: Save:

ঘরের ভিতরেই অসন্তোষের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এই প্রথম বার। একই দিনে, পর পর দু’টি ঘটনায়। প্রথমটি একদম খোলা হাটে প্রকাশ্য বিদ্রোহ, দ্বিতীয়টি আড়ালে আবডালে।

বুধবার সকালে বসেছিল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক। সেখানে সকলের সামনেই উঠে দাঁড়ান উত্তরপ্রদেশের বালিয়ার সাংসদ ভরত সিংহ। সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, দিল্লি থেকে প্রকল্প ঘোষণা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বাস্তবের জমিতে তার প্রতিফলন ঘটছে না। সে জন্য খেসারত দিতে হচ্ছে সাংসদদেরই। তাঁর ক্ষোভ, সাংসদদের লাগাতার বলা হচ্ছে মানুষের সামনে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্পগুলির সুফলকে তুলে ধরতে। কিন্তু জমিতেই যদি এ সবের প্রতিফলন না ঘটে, তা হলে কী করবেন সাংসদরা?

এ রকম আকস্মিক ভাবে প্রধানমন্ত্রীর মুখের সামনে ক্ষোভ উগরে দেবেন কোনও সাংসদ, ভাবতেও পারেননি শীর্ষ নেতারা। পরে যদিও অনেক সাংসদই সেই বক্তব্য সমর্থন করেন। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চন্দ্রশেখরের ছেলে নীরজ শেখরকে হারিয়ে ঠাকুর অধ্যুষিত বালিয়া থেকে জিতে এসেছেন ভরত সিংহ। যে ভাবে আজ তিনি প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, তাতে মোদী শিবিরের অনেক নেতাই অশনি সঙ্কেত দেখছেন। এর পিছনে দলের একটি বড় অংশের ইন্ধন নেই তো? সে প্রশ্নও ভাবাচ্ছে তাঁদের। প্রথমে অরুণ শৌরি, পরে এনডিএর শরিকরা, এ বার নিজের দলেরই সাংসদ!

বিষয়টি লঘু করতে নেমে পড়েছেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রের প্রকল্পের রূপায়ণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তাই ভরত সিংহ আসলে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধেই তোপ দেগেছেন।’’ দলের সাংসদের বিদ্রোহের সময় প্রধানমন্ত্রী একটি কথাও বলেননি। বেঙ্কাইয়াই তড়িঘড়ি ভরতকে থামিয়ে দিয়ে বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।’’ কিন্তু সাংসদদের একাংশের ক্ষোভ তখনও মেটেনি। তা আরও বাড়ে, যখন পণ্য ও পরিষেবা কর বিলের উপর ভোটাভুটির সময় সংসদ ভবনে থেকেও প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় এলেন না। সাম্প্রতিক অতীতে সংসদে উপস্থিত না থাকার ‘শাস্তি’ পেতে হয়েছে সাংসদদের। প্রকাশ্যে সতর্ক করা হয়েছে। সংসদীয় দলের বৈঠকে দেরি করে আসায় বন্ধ দরজার বাইরেও থাকতে হয়েছে। কিন্তু আজ ‘হেডমাস্টার’-ই নিয়ম মানলেন না। অবশ্য সাংসদদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে বুঝে এর দায় নিজের কাঁধে নিয়ে নেন সংসদীয় বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী রাজীব প্রতাপ রুডি। বলেন, ‘‘বিল পাশের জন্য আমাদের পর্যাপ্ত সংখ্যা ছিল। তাই আমিই প্রধানমন্ত্রীকে জানাই, ভোটের সময় তাঁর আসার দরকার নেই। সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়ে যখন পণ্য ও পরিষেবা বিলের একটি ধারা পাশ হওয়ার সময় তার বিরুদ্ধে বিজেপির ১২ জন সাংসদ ভোট দেন। প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে অরুণ জেটলি রাজীব প্রতাপ রুডিকে বিষয়টি দেখতে বলেন। রুডি বিজেপি সাংসদদের বিষয়ে নির্দেশ দিতে গেলে তাতে আবার বিরোধীরা আপত্তি তোলেন। বিজেপির দাবি, ভোটাভুটির সময় ভুল করে ওই সাংসদরা সবুজের বদলে লাল বোতাম টিপেছিলেন। তখন যদিও দলের হুইপ থাকা সত্ত্বেও মোদী লোকসভায় উপস্থিত ছিলেন না।

তবে আজ যা হয়েছে, তাতে বিজেপির অনেক শীর্ষ নেতাই মনে করছেন, এটি কোনও বিক্ষিপ্ত ঘটনা নয়। রাজনাথ সিংহ, সুষমা স্বরাজ থেকে অনেকেই মনে করেন, এই সরকার নরেন্দ্র মোদীর সরকার। বড়জোর অরুণ জেটলির সরকার। বাকিদের কোনও ঠাঁই নেই। লালকৃষ্ণ আডবাণীও সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে নীরব থেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ফলে ভরত সিংহ আজ যা করলেন তার পিছনে দলের একটি বড় অংশের ইন্ধন নেই তো? এই প্রশ্নও ভাবাচ্ছে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

modi and rebel bjp mps modi faces dissatisfaction
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE