Advertisement
১০ মে ২০২৪

মেমনকে নিয়ে দ্বিমত কোর্টেও

বুধবার সকালে ঘুম ভেঙেও ইয়াকুব মেমনের জানা হবে না, বৃহস্পতিবার তাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে কি না। ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রীর ফাঁসি হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে গোটা দেশ এমনিতেই দু’ভাগ।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৯ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৭
Share: Save:

বুধবার সকালে ঘুম ভেঙেও ইয়াকুব মেমনের জানা হবে না, বৃহস্পতিবার তাকে ফাঁসিকাঠে ঝুলতে হবে কি না।

১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রীর ফাঁসি হওয়া উচিত কি না, তা নিয়ে গোটা দেশ এমনিতেই দু’ভাগ। আজ দু’ভাগ হয়ে গেল শীর্ষ আদালতের দুই বিচারপতির বেঞ্চও। যে বেঞ্চের এক বিচারপতি ইয়াকুবের শেষ আর্জি মেনে ফাঁসিতে স্থগিতাদেশ দিলেন। আর এক বিচারপতি সটান আর্জিই খারিজ করে দিলেন। এই পরিস্থিতিতে ইয়াকুবের আর্জি শুনতে তিন বিচারপতির নতুন বেঞ্চ গঠন করেছেন প্রধান বিচারপতি এইচ এল দাত্তু।

বিচারপতি দীপক মিশ্র, বিচারপতি অমিতাভ রায় এবং বিচারপতি পি সি পন্থকে নিয়ে গঠিত ওই বেঞ্চ বসার কথা আগামিকাল সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ। নতুন বেঞ্চ টাডা কোর্টের নির্দেশ বহাল রাখলে ৩০ জুলাই, তার ৫৪তম জন্মদিনেই নাগপুর জেলে ফাঁসি হবে ইয়াকুবের। ফাঁসির দড়িও পৌঁছে গিয়েছে জেলে। কিন্তু এ-ও ঠিক, মৃত্যুর নির্ধারিত সময়ের ২৪ ঘণ্টা আগেও ইয়াকুবের জীবন নিয়ে চলবে দড়ি টানাটানি।

যে দুই বিচারপতি র বেঞ্চে আজ ইয়াকুবের আবেদনের শুনানি চলছিল, তার সদস্য ছিলেন বিচারপতি অনিল দাভে এবং বিচারপতি কুরিয়ান জোসেফ। এঁদের মধ্যে বিচারপতি দাভে ইয়াকুবের আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন। কিন্তু ফাঁসির আদেশে স্থগিতাদেশ দিয়েছেন বিচারপতি জোসেফ। দুই বিচারপতি দু’রকম রায় দেওয়ায় আদালত কক্ষে স্বাভাবিক ভাবেই কিছুটা আতান্তরে পড়েন সরকারের প্রতিনিধি, অ্যাটর্নি জেনারেল মুকুল রোহতগি এবং ইয়াকুবের আইনজীবী রাজু রামচন্দ্রন। বিচারপতিরা তখন সিদ্ধান্ত নেন, তিন বিচারপতির বেঞ্চে আর্জিটির ফয়সালা হোক। পরে তিন বিচারপতির নাম ঘোষণা হয়।

এর আগে সুপ্রিম কোর্ট ইয়াকুবের প্রাণদণ্ডই বহাল রেখেছিল। সেই আদেশের পুনর্বিবেচনা চেয়ে শীর্ষ আদালতে তার আর্জি খারিজ হয়ে যায় গত ৯ এপ্রিল। টাডা কোর্ট ৩০ জুলাই ফাঁসির দিন ঠিক করার পর অন্তিম আবেদন (কিউরেটিভ পিটিশন) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় ইয়াকুব। তা-ও গত ২১ জুলাই খারিজ হয়ে যায়। এর পরেই ফাঁসি নিয়ে দেশ জুড়ে শুরু হয়ে যায় বিতর্ক।

এরই মধ্যে ফের সুপ্রিম কোর্টে যায় ইয়াকুব। এ বার সে অভিযোগ তোলে, বিচার প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই তার প্রাণদণ্ডের নির্দেশ হয়ে গিয়েছিল। রাষ্ট্রপতি যখন তার প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করেছিলেন, তখনও আদালতে মামলাটির নিষ্পত্তি হয়নি বলে দাবি করে সে। বস্তুত, আজকের দুই বিচারপতির মধ্যে কুরিয়ান জোসেফ গত কালই প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইয়াকুবের একের পর এক আর্জি শোনার ক্ষেত্রে কোনও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি রয়ে যায়নি তো?

কী সেই ত্রুটি? ইয়াকুবের পুনর্বিবেচনার আর্জি শুনেছিল বিচারপতি দাভে, বিচারপতি জে চেলামেশ্বর এবং বিচারপতি জোসেফের বেঞ্চ। কিন্তু তার অন্তিম আবেদনের শুনানি হয় প্রধান বিচারপতি দাত্তু, বিচারপতি টি এস ঠাকুর এবং বিচারপতি দাভের বেঞ্চে। বিচারপতি জোসেফের যুক্তি, নিয়ম অনুযায়ী যাঁরা পুনর্বিবেচনার আর্জি শুনেছেন, তাঁরা অন্তিম আবেদনও শুনবেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তিনি এবং বিচারপতি জে চেলামেশ্বর অন্তিম আবেদনের শুনানিতে ছিলেন না।

আজ বিচারপতি জোসেফ বলেন, ‘‘এখানে এক জন মানুষের জীবনের প্রশ্ন জড়িত। জীবন মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। সে ক্ষেত্রে যদি কোনও প্রক্রিয়াগত ত্রুটি থেকে যায়, আগে তা সংশোধন করতে হবে। না হলে সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘিত হবে।’’ এই যুক্তিতেই ফাঁসির আদেশে স্থগিতাদেশ দেন তিনি। অ্যাটর্নি জেনারেল যুক্তি দিয়েছিলেন, অন্তিম আবেদন শোনার জন্য নিয়মমাফিক বেঞ্চ গঠন হয়নি— এমন অভিযোগ কেউ আদালতে তোলেনি। কিন্তু সেই যুক্তি উড়িয়ে বিচারপতি জোসেফ বলেন, ‘‘এই আদালত সংবিধান মোতাবেক মানুষের জীবনের রক্ষক। জীবন কেড়ে নেওয়ার আগে সব নিয়ম মানতে হবে। এই পথে কোনও খুঁটিনাটি বিষয় বাধা হতে পারে না।’’

কিন্তু বিচারপতি দাভে এই বক্তব্য মানতে রাজি হননি। তিনি বলেন, অন্তিম আবেদনের নিয়মমাফিক শুনানি না হওয়ার বিষয়টি অপ্রাসঙ্গিক। তাই আর্জি খারিজ করা হোক। ইয়াকুবের প্রথম ফাঁসির আদেশের পর থেকে বহু বার আদালতে এ বিষয়ে আর্জি খারিজ হয়ে গিয়েছে। রাষ্ট্রপতি এবং মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালও ইয়াকুবের প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। ইয়াকুবের অপরাধ বিচার করেই তা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মনু স্মৃতি থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে বিচারপতি দাভে বলেন, ‘‘দুঃখিত, আমি ফাঁসি রদের আদেশের সঙ্গে নিজেকে জড়াতে চাই না।’’ এ-ও বলেন, ফাঁসির আদেশ বহাল থাকুক। ইয়াকুব মহারাষ্ট্রের রাজ্যপালের কাছে ফের প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছে। রাজ্যপাল সিদ্ধান্ত নেবেন। সেই অনুযায়ী মহারাষ্ট্র সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করবে। দুই বিচারপতির মধ্যে এ হেন মতপার্থক্য হতেই স্পষ্ট হয়ে যায়, উচ্চতর বেঞ্চে শুনানি ছাড়া গতি নেই। ইয়াকুবের আইনজীবী রাজু রামচন্দ্রন প্রধান বিচারপতির কাছে ফাঁসি স্থগিত রাখার আর্জি জানান। তবে সে বিষয়ে কোনও নির্দেশ দিতে রাজি হননি প্রধান বিচারপতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE