সিঙ্গুরের স্মৃতি এ বার ফিরল ত্রিপুরায়।
জেলা প্রশাসনের তরফে জমি অধিগ্রহণের একটি বিজ্ঞপ্তি ঘিরে শহরতলি মোহনপুরের বোধজংনগরে আট-দশটি গ্রামের উপজাতিদের মধ্যে বিক্ষোভ দানা বাঁধছে। কয়েক দিন আগে ওই বিজ্ঞপ্তির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি খাস জমির সীমানা চিহ্নিতকরণে সরকারি কর্মীরা সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু উপজাতি অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দাদের রোষানলে পড়েন তাঁরা। উপজাতি পরিবারগুলির বিক্ষোভের মুখে পড়ে সকলে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
ঘটনার কথা শাসক দলের স্থানীয় নেতৃত্বের কানে পৌঁছতে দেরি হয়নি। সিপিএমের স্থানীয় নেতা তথা টিটিএএডিসি’র প্রতিনিধি জওহর দেববর্মা বলেন, ‘‘শিল্পায়নের প্রয়োজনে জমি প্রয়োজন। সরকার তা জানিয়েছে। বোধজংনগরে সরকারি অনেক খাস জমি বেদখল হয়ে রয়েছে। দখলদারদের তো সরে যেতেই হবে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেছি। বোঝানোর চেষ্টা চলছে।’’
জমি হারানোর আশঙ্কায় ইতিমধ্যেই সেখানে প্রতিবাদ মঞ্চ তৈরি হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে ‘ত্রিপুরা উপজাতি ভূমি সুরক্ষা কমিটি’। কমিটির প্রতিনিধি সর্বজয় দেববর্মা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘‘বংশ পরম্পরায় যে জমিতে জীবনযাপন করছি, তা শিল্পের নামে কেড়ে নিতে দেব না।’’
সিঙ্গুরের আদলেই যে আন্দোলন দানা বাঁধছে, সরকার তা বুঝতে পেরে সময় নষ্ট না করে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। পশ্চিম ত্রিপুরার জেলাশাসক মিলিন্দ রামটেক জানান, শিল্পায়নের জন্য বোধজংনগরের কয়েকটি গ্রামে সরকারি খাস জমি উদ্ধারের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় অনেক মানুষ সরকারি উদ্যোগকে বাধা দিচ্ছে। বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে জেলা প্রশাসন কথাবার্তা বলবে।
সরকারি খাস জমির কিছুটা অংশ নৃপেন্দ্র চা বাগানের অন্তর্ভুক্ত। সরকারি নিয়ম অনুসারে, চা বাগিচার জন্য নেওয়া জমিতে অন্য কিছু করা যায় না। শুধু শুধু ফেলেও রেখে দেওয়া যায় না। জেলা প্রশাসনের দাবি, সরকার নিয়ম মেনেই চা বাগানের ‘অব্যবহৃত জমি’ কয়েক বছর আগে খাস করে নিয়েছে। জেলাশাসক জানান, এক সময় সরকারি ওই খাস জমি লিজ দেওয়া হয়েছিল। অব্যবহৃত থাকায় লিজ উঠিয়ে নেওয়ার অধিকার রয়েছে সরকারের। ওই জমি ফিরিয়ে নিয়ে কিছু এলাকায় চা শ্রমিকদের জন্য আবাসন তৈরি করা হবে। বেশির ভাগই দেওয়া হবে শিল্প দফতরকে।
মহারাজার আমল থেকে বোধজংনগর উপজাতি অধ্যুষিত গ্রাম হিসেবে পরিচিত। ৪০০-৫০০ উপজাতি পরিবার সেখানে বসবাস করেন। জমি বাঁচাও কমিটির হিসেব অনুযায়ী, প্রায় দু’শো একর জমিতে কয়েক পুরুষ ধরে উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ চাষাবাদ করে জীবনধারন করছেন। কমিটির সদস্যদের অভিযোগ, তাঁদের কয়েক জন সদস্যকে প্রলোভন দেখিয়ে ‘ত্রিপুরা উপজাতি ভূমি সুরক্ষা কমিটি’র আন্দোলনে জল ঢেলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন শাসক দলের কিছু নেতা। যদিও সিপিএমের স্থানীয় এডিসি সদস্য জওহর দেববর্মা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘বিচ্ছিন্নতাবাদী একটি গোষ্ঠী স্থানীয় মানুষকে ভুল বুঝিয়ে ক্ষেপিয়ে তুলছে। আমরা রাজনৈতিক ভাবে তারা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। জমি উপজাতিদের মালিকানায় থাকলে, সেটা তাঁদেরই থাকবে।’’
এ দিকে, বোধজংনগরের শিবদুর্গা পাড়া, অশ্বিন পাড়া, রামকৃষ্ণ পাড়া, ভগবান চৌধুরী পাড়া, জয়রাম মুদি পাড়া-সহ আট-দশটি গ্রামের কয়েক হাজার উপজাতি সম্প্রদায়ের মানুষ উচ্ছেদের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন।
ত্রিপুরা শিল্প উন্নয়ন নিগমের উচ্চপদস্থ এক আধিকারিকের ব্যাখ্যা অন্য রকম। তিনি জানান, সরকারি খাস জমি যে সব উপজাতি পরিবার ভোগদখল করছেন, তাঁদের কাউকেই উচ্ছেদ করা হবে না। ওই অঞ্চলের ৪৪৭ একর খাস জমির যে অব্যবহৃত অংশ এখনও দখল হয়ে যায়নি, সরকার সেটাই উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে।
বোধজংনগর শিল্পতালুক সংলগ্ন গ্রামগুলি টিটিএএডিসি এলাকাভুক্ত হওয়ায় রাজ্য প্রশাসন টিটিএএডিসি-র কাছ থেকে শিল্পায়নের প্রয়োজনে প্রায় ২০০ একর জমি নেওয়ার অনুমতি চেয়েছিল। বিশেষ কমিটি সেই অনুমতি দিয়েছে বলে জানান টিটিএএডিসি’র সিইও অভিষেক সিংহ। তার হাত ধরে জেলা প্রশাসন খাস জমি উদ্ধারের প্রস্তুতি নিলেও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, সে কথা স্বীকার করেছেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক মিলিন্দ রামটেক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy