দিল্লি সফর শেষে আজই কলকাতা ফিরেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজধানী থেকে নেত্রীর সঙ্গে এক বিমানে যাবেন বলে শেষ মুহূর্তে এয়ার ইন্ডিয়ায় টিকিট বুক করার চেষ্টা করছিলেন তৃণমূলের এক সাংসদ। আর তা করতে গিয়েই কার্যত চোখ কপালে ওঠার জোগাড় নিয়মিত কলকাতা-দিল্লি যাতায়াত করা ওই নেতার। টিকিটের দাম বাড়তে বাড়তে ৪০ হাজারের ঘর ছুঁয়েছে দেখে শেষ পর্যন্ত রণে ভঙ্গ দেন তিনি। ঠিক করেন, আর এয়ার ইন্ডিয়া নয়, এ বার অপেক্ষাকৃত সস্তার বিমানে কলকাতা ফিরবেন তিনি। তবে সেটিও খুব একটা সস্তায় পাননি তিনি।
টালমাটাল স্পাইসজেট। বেহাল আর্থিক দশার কারণে বসে গিয়েছে সংস্থার প্রায় একশোর উপর উড়ান। আর বাতিল হওয়া বিমানের ভিড়কে সামাল দিতে এখন আকাশ ছুঁয়েছে বিমানের ভাড়া। শুধু দিল্লি-কলকাতাই নয়, একই অবস্থা দিল্লি-মুম্বই, কলকাতা-বেঙ্গালুরু, কলকাতা-গুয়াহাটির মতো কম-বেশি সব রুটেই। তাই কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে মধ্যবিত্তদেরও।
গত এক সপ্তাহ ধরে স্পাইসজেট ধীরে ধীরে তাদের বিমানের সংখ্যা কমিয়ে দেওয়ায় কার্যত নিজেদের ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে সব ক’টি বেসরকারি বিমান সংস্থা। সেই তালিকা থেকে বাদ পড়েনি সরকারি সংস্থা এয়ার ইন্ডিয়াও। অন্তত চার গুণ বেশি দামে টিকিট বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে যে ভাবে বিমান সংস্থাগুলি ইচ্ছেমতো ভাড়া বাড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে সংসদে সরব হওয়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। দলীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, এই ধরনের পরিস্থিতি রুখতে সরকারের তৎপর হওয়া উচিত। অন্তত যাতে ইকনমি শ্রেণিতে ভাড়া এ ভাবে লাফিয়ে না বাড়ে সরকারের সে বিষয়টিও দেখা উচিত।
কিন্তু এ নিয়ে বিমান মন্ত্রকের ব্যাখ্যা অবশ্য আলাদা। মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছে, দাম বাড়া নিয়ে অন্তত বেসরকারি সংস্থাগুলিকে কিছু বলার অধিকার নেই সরকারের। বিমান সংস্থাগুলি সুরক্ষাবিধি মেনে চলছে কি না সেটা দেখার দায়িত্ব ডিজিসিএ-র। কিন্তু সরাসরি ভাড়ার বিষয়ে কোনও ভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে না মন্ত্রক। তা ছাড়া, বিমান সংস্থাগুলির যুক্তি, অধিকাংশ সংস্থাই বর্তমানে ক্ষতিতে চলছে। তাই ব্যবসা করতে নেমে যেখানে বাড়তি মুনাফার সুযোগ রয়েছে সেখানে তা ছেড়ে দেওয়া মোটেই যুক্তিসঙ্গত নয়। বিমান সংস্থাগুলি মাঝেমধ্যেই সস্তায় টিকিট দিয়ে থাকে। তখন সরকারের কোনও আপত্তি থাকে না। তা হলে আচমকা ভিড় বেড়ে যাওয়ার সুযোগে বেশি দাম নিলে তাতে কেন আপত্তি করবে সরকার?
এ ক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, সরকার চাইলেই যেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার টিকিটের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, সেখানে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না কেন? কারণ, এতে আপত্তি রয়েছে খোদ এয়ার ইন্ডিয়া কর্তৃপক্ষের। তাঁদের যুক্তি, গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার ক্ষতিতে চলছে এয়ার ইন্ডিয়া। তাই বাড়তি ভাড়া নিয়ে এখন ক্ষতি কিছুটা হলেও সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে সংস্থা। এয়ার ইন্ডিয়ার সাফ যুক্তি, যাঁদের একান্তই যাওয়ার দরকার আছে, তাঁরাই এখন বিমানের টিকিট কাটছেন। বর্তমানে রেলে এক দিন আগে টিকিটের জন্য তৎকাল পরিষেবা আছে। যাত্রীরা চাইলে বিমানের বদলে ট্রেনেই যাতায়াত করতে পারেন।
সামনেই বড় দিন। তার পর ইংরেজি নতুন বছর। ফলে এই সময়ে স্বভাবতই টিকিটের চাহিদা বেশি থাকে। তা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কবে? বিমান পরিবেষার সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকদের বক্তব্য, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে কি না তার আঁচ মিলতে পারে সোমবারের মধ্যেই। স্পাইসজেটকে বাঁচিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় ১২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগে এক বা একাধিক ব্যবসায়িক সংস্থা এগিয়ে আসে কি না সেটাই এখন দেখার। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। বিমান মন্ত্রক সূত্রে খবর, প্রয়োজনীয় অর্থ লগ্নির ব্যবস্থা হয়ে গেলেই পরবর্তী দু-তিন দিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে। আপাতত সেই আশাতেই বুক বাঁধছেন স্পাইসজেটের কর্মী তথা সংশ্লিষ্ট সব মহল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy