সিবিআইয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে সিবিআইকেই আত্মশুদ্ধির পরামর্শ দিলেন গোপালকৃষ্ণ গাঁধী। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপালের কথায়, সিবিআই ‘সরকারের হাতিয়ার’ এবং ‘নোংরা খেলার দফতর’ হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করে ফেলেছে। যার পরনে ‘অস্বচ্ছতা’-র পোশাক, ‘গোপনীয়তা’-র অলঙ্কার এবং ‘রহস্য’-র আতর মাখা। তাই এই তদন্তকারী সংস্থার পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে মহাত্মা গাঁধীর পৌত্র গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর দাওয়াই, সিবিআইকে তথ্যের অধিকারের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হোক। একে শুধু চাঞ্চল্য ছড়ানোর জন্য নয়, আক্ষরিক অর্থেই স্বশাসিত সংস্থা হিসেবে গড়ে তোলা হোক।
এর আগে সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে কেন্দ্রীয় সরকারের খাঁচার তোতাপাখি হিসেবে আখ্যা দিয়েছিল। সিবিআইকে সরকারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে নির্দেশও দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু আজ গোপালকৃষ্ণ সিবিআইয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষ উদযাপনের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে এসেই সংস্থার কাজকর্মের কড়া সমালোচনা করেছেন। সিবিআইয়ের প্রতিষ্ঠাতা ডি পি কোহলি স্মারক বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল তাঁকে। অনুষ্ঠানে সিবিআইয়ের ডিরেক্টর রণজিৎ সিন্হা সহ সংস্থার সমস্ত শীর্ষকর্তারা হাজির ছিলেন। তাঁদের সামনেই গোপালকৃষ্ণ বলেন, “সিবিআইকে সরকারের হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। একে ডিডিটি বলে ডাকা হয়। ডিডিটি-র অর্থ এখানে স্বাদ-গন্ধ-বর্ণহীন কীটনাশক নয়, এর অর্থ ডিপার্টমেন্ট অফ ডার্টি ট্রিক।”
বর্তমানে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাডভান্সড স্টাডিজ-এর চেয়ারম্যান গোপালকৃষ্ণ গাঁধীর যুক্তি, সিবিআইয়ের ভাবমূর্তি পাল্টানোর একমাত্র উপায় একে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় নিয়ে আসা। সিবিআইকে বদলাতেই হবে। তথ্য আন্দোলনকর্মীরা সিবিআইয়ের পরিবর্তনের কারিগর হিসেবে কাজ করবেন। অতীতে সিবিআইকে তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় আনা হলেও আপত্তি উঠেছিল, এর ফলে তদন্তের ক্ষতি হবে। তাই একে ফের আইনের আওতার বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ গোপালকৃষ্ণ যুক্তি দিয়েছেন, “সিবিআই দুর্নীতি ও কিছু নির্দিষ্ট অপরাধের তদন্ত সংস্থা। এটা কোনও নিরাপত্তা বা গোয়েন্দা সংস্থা নয়।” তথ্যের অধিকার আইনের আওতায় থাকাকালীন সিবিআইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েনি বলেও যুক্তি দিয়েছেন গোপালকৃষ্ণ। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপালের মতে, সিবিআইকে লোকপালের অধীনে আনা উচিত। সিবিআই প্রধান পেশাগত ভাবে সম্পূর্ণ স্বাধীন হবেন। কিন্তু তাঁকে লাগামহীন অস্ত্র হতে দেওয়া যাবে না।
গোপালকৃষ্ণ আজ যে ভাবে সিবিআইয়ের সমালোচনা করেছেন, তাতে শুধু সিবিআই নয়, মনমোহন-সরকারও অস্বস্তিতে পড়েছে। গোপালকৃষ্ণ সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়িক সংস্থার আঁতাঁত নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর বক্তব্য, রিলায়্যান্স সংস্থা ‘সমান্তরাল রাষ্ট্র’-এর মতো প্রাকৃতিক সম্পদের উপর অধিকার ফলাচ্ছে। প্রথমে মনমোহন সিংহের মিডিয়া উপদেষ্টা সঞ্জয় বারু, তার পর প্রাক্তন কয়লাসচিব পি সি পরাখের বইয়ে দুর্নীতি দমনে মনমোহন সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আজ পরাঞ্জয় গুহঠাকুরতার ‘গ্যাস ওয়ার্সক্রোনি ক্যাপিটালিজ্ম অ্যান্ড দ্য অম্বানীস’ বইতেও কৃষ্ণা-গোদাবরী অববাহিকায় প্রাকৃতিক গ্যাসের উপর অম্বানীদের অধিকার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। গোপালকৃষ্ণ আজ বলেন, “আমরা কালো টাকার সম্পর্কে সমান্তরাল অর্থনীতির কথা বলতাম। কিন্তু রিলায়্যান্স সমান্তরাল রাষ্ট্র।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy