Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

স্বামীর ঢাল হয়ে বার্তা প্রিয়ঙ্কার, গাঁধীরা আক্রান্ত

রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে যে যা-ই বলুক না কেন কংগ্রেস এত দিন নীরবই থেকে এসেছে। মুখ খোলেননি সনিয়া বা রাহুল গাঁধী। নীরব থেকেছেন স্ত্রী প্রিয়ঙ্কাও। আজ কিন্তু মুখ খুললেন তিনি। জোরালো ও ঝাঁঝালো ভাবে। এবং সুকৌশলে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:১৫
Share: Save:

রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে যে যা-ই বলুক না কেন কংগ্রেস এত দিন নীরবই থেকে এসেছে। মুখ খোলেননি সনিয়া বা রাহুল গাঁধী। নীরব থেকেছেন স্ত্রী প্রিয়ঙ্কাও। আজ কিন্তু মুখ খুললেন তিনি। জোরালো ও ঝাঁঝালো ভাবে। এবং সুকৌশলে।

প্রয়াত ইন্দিরা ও রাজীব গাঁধীর স্মৃতি উস্কে দিয়ে ও মায়ের আত্মত্যাগের কথা তুলে ধরে প্রিয়ঙ্কা আজ এমন ভাবে পাল্টা আক্রমণে ঝাঁপালেন যাতে নরেন্দ্র মোদীদের আক্রমণ ভোঁতা করে দেওয়া যায়। বিতর্কটাকে এমন জামা পরানো যায় যাতে আম-জনতার কাছে বার্তা যায়, গাঁধী পরিবার আক্রান্ত। এবং ভোট-বাজারে বিজেপি-র আক্রমণ ব্যুমেরাং হয়ে সহানুভূতির হাওয়া তৈরি করে কংগ্রেসের পক্ষে। লক্ষ্যণীয় ভাবে প্রিয়ঙ্কা শুরু করতেই আজ রবার্টের বিরুদ্ধে আক্রমণের জবাব দিতে নেমেছে কংগ্রেসও। যদিও সহানুভূতি তৈরির এই চেষ্টা কাজে আসবে কি না তা নিয়ে এ দিনই প্রশ্ন তুলেছে বিজেপি। মীনাক্ষী লেখি বলেছেন, “মানুষ কি এতটাই বোকা!”

খুবই অল্প সময়ের মধ্যে রবার্ট বঢরার বিপুল সম্পদ বৃদ্ধি নিয়ে বিজেপি এই প্রথম সরব হল তা নয়। গত কয়েক বছর ধরেই তারা রবার্টের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তুলে এসেছে। তবে এ বারের ভোট-বাজারে বঢরা-প্রসঙ্গ উছলে দিয়ে মোদীরা চাইছেন রাহুল তথা কংগ্রেসের সম্ভাবনায় জল ঢালতে। ক’দিন আগে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালেও রবার্টের সম্পদবৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবেদন বেরিয়েছে। এটাও উৎসাহ বাড়িয়েছে বিজেপি-র।

এত দিন এ সবের প্রতিক্রিয়ায় নীরব থাকাই বাঞ্ছনীয় মনে করেছে গাঁধী পরিবার। কিন্তু প্রিয়ঙ্কাও এখন বুঝছেন, রবার্টকে নিয়ে বিজেপি-র প্রচারে ক্ষতি হচ্ছে কংগ্রেসের। আর সে কারণে জবাব দিতে নেমেছেন তিনি। সনিয়া-দুহিতার কথায়, “আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ওরা খারাপ খারাপ কথা বলে প্রতিনিয়ত অপদস্থ করতে চাইছে। আমার স্বামীর বিরুদ্ধে নানান কথা বলছে। কিন্তু ওরা যত অপদস্থ করতে চাইবে, আমরা ততই মজবুত হব। ওরা যত নীচে নামাতে চাইবে আমরা তত মাথা তুলব।”

প্রিয়ঙ্কা তাঁর প্রচার রায়বরেলী ও অমেঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন যাতে এই বার্তা না যায় যে, রাহুলের ওপর আস্থা হারিয়ে কংগ্রেস তাঁকে তুলে ধরছে। কিন্তু রায়বরেলীতে প্রচার করলে আধুনিক সংবাদমাধমের দৌলতে তাঁর জবাব যে গোটা দেশের নজরে আসবে প্রিয়ঙ্কা সেটা ভালই জানেন। সে কারণেও বিজেপি-কে আক্রমণের তীব্রতা আরও এক দাগ বাড়িয়েছেন তিনি।

মায়ের নির্বাচনী কেন্দ্রে প্রচারে গিয়ে প্রিয়ঙ্কা আজ বলেন, “আমার স্বামীর বিরুদ্ধে যে ভাবে কুৎসা প্রচার করা হচ্ছে, তা খারাপ লাগে বইকি। কিন্তু ছেলেমেয়েকে বলেছি, সত্যি কথাটা এক দিন সবাই জানতে পারবে।” এমনিতেই দেশের বড় অংশের মানুষ ইন্দিরার সঙ্গে প্রিয়ঙ্কার বহু মিল খুঁজে পান। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীর সেই স্মৃতি তাজা করে দিয়ে প্রিয়ঙ্কা বলেন, “ইন্দিরা গাঁধীর কাছ থেকেই জেনেছি, যে যতই নিন্দেমন্দ করুক না কেন, সত্যের সঙ্গে থাকলে মনে সাহস থাকে।”

প্রিয়ঙ্কাকে পাল্টা কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি-র মুখপাত্র মীনাক্ষী নটরাজন। বলেন, “ভারতীয় মহিলা হিসেবে স্বামীর সমালোচনা শুনতে নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে প্রিয়ঙ্কার। কিন্তু অন্যকে ঠকিয়ে যে টাকাপয়সা কামিয়েছেন বঢরা, তা ফেরত দিয়ে দিন, দেখবেন ভাল লাগবে।”

কংগ্রেসের এত দিনের অবস্থানই ছিল যে, রবার্ট এক জন স্বাধীন ব্যক্তি। কংগ্রেসের সদস্যও নন। তাঁর বিরুদ্ধে কারও অভিযোগ থাকলে আদালতে যেতে বাধা নেই। কিন্তু প্রিয়ঙ্কা আজ স্বামীর পক্ষে সরব হতেই কংগ্রেসের মুখপাত্ররাও অবস্থান বদলে ফেলেন। দলের মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা বলেন, “বিজেপি গাঁধীর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কুৎসা প্রচারে নেমেছে। এর আগেও ইন্দিরা, রাজীব ও সনিয়া গাঁধীর বিরুদ্ধে এমন প্রচার চালিয়েছে ওরা। মানুষ গ্রহণ করেননি। এ বারও করবেন না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE