Advertisement
১১ মে ২০২৪
সিসিটিভি বিতর্ক

সুরক্ষা আবার উল্টো বিপদ ডাকবে না তো

মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এ বারের রেল বাজেটে সুরেশ প্রভু সব ট্রেনের মহিলা-কামরায় সিসিটিভির বন্দোবস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। সাধারণ ভাবে এই পদক্ষেপ ইতিবাচক, সন্দেহ নেই। কিন্তু মহিলা যাত্রীদের মধ্যে এই উদ্যোগ ঘিরে উঠছে কিছু প্রশ্ন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০২:৪৭
Share: Save:

মহিলাদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে এ বারের রেল বাজেটে সুরেশ প্রভু সব ট্রেনের মহিলা-কামরায় সিসিটিভির বন্দোবস্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন। সাধারণ ভাবে এই পদক্ষেপ ইতিবাচক, সন্দেহ নেই। কিন্তু মহিলা যাত্রীদের মধ্যে এই উদ্যোগ ঘিরে উঠছে কিছু প্রশ্ন।

প্রযুক্তির উন্নতির পাশাপাশি দুষ্কৃতীরাও তো অপরাধের ধরন পাল্টাচ্ছে। কেউ যদি মুখে কাপড় বেঁধে উঠে মহিলাদের উপরে নিগ্রহ চালায়, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে কি লাভ হবে? ওই দুষ্কৃতীকে কী ভাবে খুঁজবে পুলিশ? প্রশ্ন অনেকেরই।

অনেকে এই উদ্যোগকে স্বাগত জানালেও মহিলা যাত্রীদের কেউ কেউ বলছেন, এই সিদ্ধান্তে প্রকৃতপক্ষে মেয়েদের গোপনীয়তায় হস্তক্ষেপ করা হবে। আবার কারও মতে, কামরায় বেশি করে প্রহরা মোতায়েন করলে সেটা সিসিটিভির চেয়ে ঢের বেশি কার্যকরী হতে পারে।

কলেজশিক্ষিকা অপর্ণা মোহন্ত তাই বললেন, “ক্যামেরা ঢেকে দিতে কত ক্ষণ? আরও হেল্প লাইন চালু করা হোক। যাতে ডাকলেই পুলিশ আসে।” তবে সিসিটিভি লাগানো হলে অপরাধীদের মধ্যে কিছুটা ভয় তৈরি হবে, এটাও মানছেন অনেকে। বেলঘরিয়া থেকে প্রতিদিন লোকাল ট্রেনে দমদম যাতায়াত করেন তন্দ্রা সিংহ। তাঁর কথায়, “মহিলা কামরায় সিসিটিভি লাগানো হলে ভয়টা অন্তত থাকবে। অনেক বাজে লোকের ওঠানামাও বন্ধ হবে।” একই কথা বলেছেন, বেসরকারি সংস্থায় কর্মরতা দমদমের বাসিন্দা পিয়ালী মজুমদার। তাঁর মতে, “অনেক সময়েই মহিলা কামরায় পুরুষরা উঠে পড়েন। তাঁরা ভাল কি খারাপ, তা তো বাইরে থেকে দেখে বোঝা সম্ভব নয়। সিসিটিভি থাকলে তাঁরাও মহিলা কামরায় ওঠার আগে চিন্তা করবেন।”

অনেকে প্রশ্ন তুলছেন সিসিটিভি ক্যামেরার ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে। কলকাতায় কর্মরত সুজাতা ভট্টাচার্য আবার বলেন, “দেখতে হবে সিসিটিভির যেন অপব্যবহার না হয়। ক্যামেরা লাগানো হল, কিন্তু তা মনিটারিং করার কেউ নেই। তা হলে ক্যামেরা লাগানোর কোনও যুক্তি নেই।”

শ্যামনগরের বেসরকারি সংস্থার কর্মী জয়িতা ঘোষ বা বালির বাসিন্দা শিল্পা চক্রবর্তীরা অবশ্য ক্যামেরা লাগানোর ভাল এবং খারাপ দু’টি দিক রয়েছে বলেই মনে করেন। তাঁদের মতে, “নিরাপত্তার দিক থেকে ক্যামেরা লাগানোর প্রস্তাব ভাল। কিন্তু মহিলা যাত্রীদের গোপনীয়তা রক্ষায় মহিলা পুলিশ দিয়েই ওই ফুটেজগুলি পরীক্ষা করানো উচিত। নইলে বিষয়টি নিয়ে আপত্তি উঠবে।”

কারণ অনেকে ক্ষেত্রেই দূরপাল্লার ট্রেনে রাতে একা মহিলাদের যেতে হয়। তেমন কোনও ফুটেজ জোগাড় করে কেউ যদি অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে, তা হলে তা উল্টে সংশ্লিষ্ট যাত্রীর বিপদ ডেকে আনতে পারে। এ রকম ঘটনা মাস ছয়েক আগেই ঘটেছিল দিল্লি মেট্রো রেলে। সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ থেকে জোগাড় করা মহিলাদের ছবি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল পর্নোগ্রাফিক সাইটে।

তবে রেল সূত্রের খবর, বিশ্বে বেশির ভাগ জায়গায় রেলের কামরা সিসিটিভিতে মোড়া। ফলে এ দেশে তা চালু হলে আপত্তির কোনও কারণ আছে বলে মনে করেন না রেল কর্তারা। রেল বোর্ডের সদস্য (মেকানিক্যাল) অজয় শুক্ল বলেন, “এটা এখনও প্রস্তাব হিসেবে রয়েছে। ঠিক হয়েছে, কামরার দরজায় লাগানো হবে ক্যামেরা। এতে কারও গোপনীয়তা নষ্ট হওয়ার কথা নয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

safety of women rail cctv
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE