সারা রাজ্যের সঙ্গে কাছাড়েও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির নবীকরণ চলছে। অন্তত সরকারি ভাষ্য এমনটাই। অর্থাত্ ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জিকে বর্তমান সময়ের উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। কিন্তু যাকে কেন্দ্র করে এই নবীকরণ প্রক্রিয়া, সেই পঞ্জিটি কোথায়? জবাব নেই কারও কাছে।
এ নিয়ে বহু বছর ধরে কথা হচ্ছে। এমনকী প্রশ্ন ওঠে বিধানসভার অধিবেশনেও। জবাব একটাই, কাছাড়-সহ পাঁচ জেলার ১৯৫১ সালের এনআরসি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাহলে এর নবীকরণ কী করে হবে, জানতে চেয়েছে ইউনাইটেড ফোরাম ফর সিটিজেনস রাইট। তাঁদের আশা, আন্তরিকতার সঙ্গে খোঁজাখুজি করলে সরকারি নথি অবশ্যই মিলবে। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে স্মারকপত্র দিয়ে তাঁরা কাছাড়ের এনআরসি খুঁজে বের করতে আর্জি জানিয়েছেন। এই কাজটি যতদিন না-হচ্ছে, ততদিন বর্তমান প্রক্রিয়া স্থগিত রাখারও অনুরোধ করেছেন। অসমের জন্য পৃথক ব্যবস্থা কেন, এই প্রশ্ন করে, একই নিয়মে সারা দেশে এনআরসি-র দাবিতে তিনদিন ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে ধরনাও দিল পৃথক বরাক দাবি কমিটি।
ইউনাইটেড ফোরাম ফর সিটিজেনস রাইট-এর পক্ষ থেকে মুখ্যমন্ত্রীকে বলা হয়েছে, কাছাড় অতি প্রাচীন অঞ্চল। কালিকাপুরাণ ও যোগিনীতন্ত্রে এর উল্লেখ রয়েছে। উপজাতিদের বিভিন্ন লোককথায়ও কাছাড়ের গল্প শোনা যায়। ব্রিটিশ অধিগ্রহণের আগে এই অঞ্চলে ছিল ডিমাসা রাজত্ব। স্বাধীনতার পর
১৯৫০ সালে জাতীয় নাগরিক পঞ্জি তৈরির কাজকর্ম শুরু হলে কাছাড়েও একই তালে তা সম্পন্ন হয়। তখন করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দিও এই জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরের বছর অন্য জেলাগুলির সঙ্গে অবিভক্ত কাছাড়েও নাগরিক পঞ্জি প্রকাশিত হয়। তাতেই রয়েছে এই অঞ্চলের পুরনো বাসিন্দাদের নাম-ধাম। বর্তমান
প্রজন্ম ওই নাগরিক পঞ্জি থেকেই খুঁজে পেতে চান তাঁদের ঠাকুর্দা ও তাঁরও আগের পুরুষদের। প্রায় সব জেলায় ১৯৫১ সালের এনআরসি থেকেই পূর্বসূরীদের খোঁজ মিলছে। কিন্তু কাছাড়ে সে সুযোগ নেই। ১৯৮৩ সালে করিমগঞ্জ এবং ১৯৮৬ সালে হাইলাকান্দি নতুন জেলা হয়েছে। ওই দুই জেলাতেও ১৯৫১ সালের নাগরিক পঞ্জি খুঁজে পেতে কোনও সমস্যা হয়নি।
ইউনাইটেড ফোরামের মুখ্য আহ্বায়ক বাহারুল ইসলাম বড়ভুইয়া স্মারকপত্রে বলেন, কোনও সরকারি নথি এ ভাবে হারিয়ে যেতে পারে না। আর এনআরসি মোটেও এক-কপির নথি নয়। তিনি কেন্দ্র সরকার, নির্বাচন কমিশন প্রভৃতি জায়গায় একে ভালো করে খুঁজে দেখতে অনুরোধ করেন। তাঁর কথায়, এ শুধু এনআরসি তৈরি বা নবীকরণের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। এই অঞ্চলের নাগরিকরা যে অসমের ভূমিপুত্র, এরও প্রমাণ দেয় এই নথি। তাই একে খুঁজে বের করতেই হবে। এই নথি খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত এনআরসি-র নবীকরণ স্থগিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁরা। নইলে তাঁরা আইনের দ্বারস্থ হবেন বলেও শুনিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রীকে।
ফোরামের পক্ষ থেকে এনআরসি-র কাছাড় জেলার নোডাল অফিসার এস এন সিংহের হাতে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা এই স্মারকপত্রটি তুলে দেওয়া হয়। তিনিও তাঁদের বলেন, কাছাড়-সহ কয়েকটি জেলার ১৯৫১ সালের এনআরসি খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে এটি না পাওয়ায় সমস্যা হওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন। তাঁর কথায়, ‘‘১৯৬৬ বা ১৯৭১ সালের ভোটার তালিকা থেকে এখানকার মানুষ বংশপঞ্জি সংগ্রহ করছেন।’’ বাহারুলদের অভিযোগ, ওই দুই ভোটার তালিকাও সম্পূর্ণ নয়।
প্রসঙ্গত, কার্বি আংলং, শিবসাগর, বাকসা এবং চিরাঙ জেলাতেও ১৯৫১ সালের এনআরসি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এ ছাড়া নলবাড়ি, তিনসুকিয়া, বরপেটা, যোরহাট এবং লখিমপুরেরও বহু গ্রামের নথি হদিশহীন।
এ দিকে, পৃথক বরাক দাবি কমিটি বুধবার থেকে তিনদিন শিলচরে ক্ষুদিরাম মূর্তির পাদদেশে ধরনায় বসে। কমিটির দাবি, সারা দেশে একই নিয়মে এনআরসি তৈরি করতে হবে। তাঁরা কাছাড়ের জেলাশাসকের মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে স্মারকপত্র পাঠান। ওই স্মারকপত্রে তাঁরা বলেন, ভারতীয় বিচারব্যবস্থার প্রতি বিশ্ববাসীর আস্থা রয়েছে। সেই আস্থা অটুট রাখতে এক দেশে একই পদ্ধতি ও একই সময়ে এনআরসি প্রণয়ন করা উচিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy