ভোটের আগে এখন নরেন্দ্র মোদীকেও তীব্র আক্রমণ শুরু করলেন জয়ললিতা। অথচ গত কালও মোদী বলেছেন, আদর্শের ফারাক থাকলেও জয়ললিতার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল।
জয়ললিতা আজ বলেন, গুজরাতের উন্নয়নের মডেল আসলে ‘মিথ’। বলেন, “গুজরাতের উন্নয়ন নিয়ে যে ঢাক পেটানো হয়, সেটা আদৌ বাস্তব নয়। তামিলনাড়ুতে মানুষের জন্য উন্নয়ন করে দেখিয়েছি আমি। কিন্তু, গুজরাতের মতো উন্নয়নকে বিপণন করিনি।” এর আগে কংগ্রেসের সনিয়া গাঁধী-রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে সব মোদী-বিরোধীই এই ভাষাতেই বিজেপির প্রধানমন্ত্রী প্রার্থীকে কটাক্ষ করেছেন। জয়ার মন্তব্যকে আজ স্বাগত জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলও।
প্রশ্ন হল, যে জয়ললিতার শপথ গ্রহণে মোদী নিজে হাজির ছিলেন, মোদীর শপথেও জয়া নিজের প্রতিনিধি পাঠিয়েছিলেন, এমনকী সদ্য গত কালই মোদী নিজে জয়ার সঙ্গে তাঁর সুসম্পর্কের কথা বলেছেন, তার পর রাতারাতি আম্মার তরফ থেকে এমন তীব্র আক্রমণের কারণটা কী?
এডিএমকে সূত্রের মতে, এর কারণ মূলত পাঁচটি। এক, মোদীকে আক্রমণ করা মানেই ভোটের পর বিজেপির দরজা আম্মা বন্ধ করে দিলেন, তা নয়। ভোটের আগে তিনি কোনও দলের সঙ্গেই সমঝোতা করেননি। কিন্তু ভোটের পর শুধু বিজেপি কেন, অকংগ্রেসি-অবিজেপি জোটের সরকার হলেও তাদের জন্য দরজা খুলে রাখতে চাইছেন জয়ললিতা। সে কারণে মোদী-বিরোধিতা করে তিনি এক দিকে প্রকাশ কারাট, অন্য দিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও বার্তা দিলেন ।
দুই, এক মাত্র মোদী ছাড়া আর কোনও দল আর কাউকে আগাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করেনি। কিন্তু গোটা তামিলনাড়ু জুড়ে আম্মাকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরেই প্রচার করছে এডিএমকে। তাঁর যাবতীয় পোস্টার, কাট আউট সর্বত্রই আম্মাকে সে ভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মোদী যেমন তাঁর বিভিন্ন জনসভায় সংসদের ছবি লাগান, তেমনই তামিলনাড়ুতেও সংসদ, ইন্ডিয়া গেট, লাল কেল্লার কাট আউটে ছয়লাপ হয়ে গিয়েছে। মোদীর মডেলকে নস্যাৎ করে ভোটের আগে জয়ললিতাও নিজের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বাসনাই তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। তিন, জয়ললিতার প্রবল প্রতিপক্ষ করুণানিধি তাঁকে মোদীর বি-টিম বলতে শুরু করেছেন। তাই ভোটের পর সমীকরণ যা-ই দাঁড়াক, ভোটের আগে এই অপবাদ ঘোচাতে মরিয়া জয়া। চার, তামিলনাড়ুতে সংখ্যালঘু ভোটও ভিড় জমাচ্ছে প্রতিপক্ষ ডিএমকের আশেপাশে। সে জন্য আরও বেশি করে মোদীর বিরোধিতা করে দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিলেন এডিএমকে সুপ্রিমো। পাঁচ, সর্বোপরি এ বারের ভোটে আসন বাড়ানো লক্ষ্য জয়ারও। গত বারে রাজ্যের ৩৯টি আসনের মধ্যে মাত্র ৯টি আসন পেয়েছিলেন তিনি। যেখানে করুণানিধির ঝুলিতে গিয়েছিল এর দ্বিগুণ আসন। কিন্তু মোদী যে ভাবে তামিলনাড়ুতে বিভিন্ন ছোট ছোট দলের সঙ্গে জোট গড়ে আক্রমণাত্মক হয়ে প্রচার করছেন, তাতে জয়ার ভোটেও থাবা বসাচ্ছে বিজেপি। তার উপর জয়ার পছন্দের তালিকায় না-থাকা তারকা রজনীকান্তের সঙ্গেও সম্প্রতি দেখা করে এসেছেন মোদী। সেটাও ভাল ভাবে নেননি জয়া।
কিন্তু বিজেপি নেতৃত্বও জানেন, সকলেই ভোটের আগে শক্তি বৃদ্ধি করতে চায়। মোদী যেমন বিজেপির শক্তি বাড়াতে চাইছেন, জয়াও স্বাভাবিক ভাবেই সেটাও চাইবেন। আর তার জন্য সকলের জন্য দরজা খুলে রাখার কৌশল নিয়েছেন তিনি। ভোটের পরে সংখ্যার নিরিখেই স্থির হবে, কার স্থান কোথায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy