এক বছর আগে আজকের দিনে রাত আটটায় টিভির পর্দায় উদয় হয়ে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করে কালো টাকা, জাল নোট আর সন্ত্রাস নির্মূল করার হুমকি দিয়েছিলেন নরেন্দ্র মোদী। প্রত্যাশা ছিল, বর্ষপূর্তিতে ছাতি ঠুকে তিনি বলবেন, যা বলেছিলাম,
করে দেখিয়েছি।
নোটবন্দির সাফল্যগাথা শোনাতে মাঠে নেমেছে বিজেপি, মাঠে নেমেছেন বাঘা বাঘা মন্ত্রীরা। কিন্তু দেখা নেই মোদীর। বাণী অবশ্য তিনি দিয়েছেন। সকাল সাড়ে সাতটাতেই টুইটে দাবি করেছেন, ‘১২৫ কোটি ভারতীয় চূড়ান্ত লড়াই করেছিলেন। জিতেছেন।’ নিজের অ্যাপ-এ জানতে চেয়েছেন, ‘নোটবন্দি, দুর্নীতি দূর করায় সরকারি পদক্ষেপ নিয়ে আপনি কী মনে করেন?’ কিন্তু সেই ঝাঁঝ কোথায়? তার বদলে দেশবাসীর কাছে মোদী ‘নতজানু’। দুর্নীতি, কালো টাকার বিরুদ্ধে পদক্ষেপে সাহায্য করায়।
এহেন মোদীকে অচেনা লাগছে অনেকেরই। চালিয়ে খেলতে অভ্যস্ত মোদী যে এ দফা পুরোপুরি রক্ষণাত্মক! দুর্গরক্ষায় ১৩ জন মন্ত্রীকে পাঠিয়েছেন ১৩টি রাজ্যে। নোট বাতিল নিয়ে রচনা লেখা, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা আয়োজন করার কথা ঘোষণা করেছে তাঁর সরকার। পাতা জোড়া বিজ্ঞাপনও বেরিয়েছে আজ খবরের কাগজে। কিন্তু এক বছর আগে নোটবন্দির পিছনে যে তিন লক্ষ্যের কথা মোদী বলেছিলেন, তার কতটা পূরণ হল, সেই জবাব নেই। তার বদলে এখন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখাচ্ছে সরকার। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির যুক্তি, ‘‘পরবর্তী প্রজন্ম নোট বাতিলকে গর্বের সঙ্গে দেখবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম দুর্নীতিমুক্ত দেশে বাস করবে।’’
আরও পড়ুন: এ কী বলছে সরকার! ঘোড়াও হেসে ফেলবে যে
আর ঠিক এখানেই প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে দেশের কী সুরাহা হল, তা নিয়ে। রাহুল এক নিবন্ধে লিখেছেন, ‘‘নোট বাতিলে দেশের বৃদ্ধির হার ২ শতাংশ-বিন্দু কমেছে। অসংগঠিত ক্ষেত্র, ছোট-মাঝারি শিল্প মুছে গিয়েছে। লক্ষ লক্ষ খেটে খাওয়া মানুষের জীবন তছনছ করেছে।’’ মমতাও বলেছেন, ‘‘প্রথম দিনই আমি বলেছিলাম, আর্থিক মন্দা শুরু হতে চলেছে।’’ একই সঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন ওরা এটা করল? এটা কি সত্যিই কোনও পরিকল্পনা? না কি এটা কালো টাকাকে সাদা করার কোনও ষড়যন্ত্র?’’
শুধু রাজনীতিকরা নন, সরব অর্থনীতিবিদরাও। কৌশিক বসু যেমন টুইট করেছেন, ‘‘নোটবন্দির থেকেও বড় বিপদ হল, সেটা যে ভুল তা স্বীকার করার ব্যর্থতা। আর এটাই ভবিষ্যতের নীতি সম্পর্কে লগ্নিকারী এবং ব্যবসায়ীদের উদ্বেগে রাখছে।’’
প্রশ্ন হল, এই আক্রমণের মুখে এ বার কোন পথে হাঁটবেন মোদী? আবার কি কোনও চমক দেবেন? না কি গরিবদের ক্ষত নিরাময়ের চেষ্টা করবেন? নোটবন্দির সুফল প্রচারে অধিকাংশ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই দিল্লির বাইরে বলে আজ মন্ত্রিসভার বৈঠক বসেনি। শুক্রবার সকালে পূর্ণমন্ত্রীদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বিকেলে গোটা মন্ত্রী পরিষদেরই বৈঠক হবে। ফলে জল্পনা, মোদী এ বার বেনামি সম্পত্তির বিরুদ্ধে নতুন করে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারেন। নোট বাতিলের ক্ষত নিরাময়ে গরিবদের জন্যও কিছু সুখবর আসতে পারে। কারণ তিন দিন আগেই হিমাচলপ্রদেশে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘গরিবদের থেকে যা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, তা ফিরিয়ে দেওয়ার সময় এসেছে।’’
যার পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধীদের কটাক্ষ, একের পর এক চমক ছাড়া মোদীর আর কিছুই দেওয়ার নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy