লিবিয়ায় অপহৃত চার ভারতীয় অধ্যাপকের মধ্যে দু’জন মুক্তি পেয়েছেন। মুক্ত লক্ষ্মীকান্ত এবং বিজয় কুমার কর্নাটকের রায়চুর এবং বেঙ্গালুরুর বাসিন্দা। শুক্রবার ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এই দু’জনের মুক্তির খবর জানানো হয়। বাকি দু’জন, গোপীকৃষ্ণ এবং বলরাম এখনও বন্দি। দু’জনেরই বাড়ি হায়দরাবাদে। কারা এঁদের অপহরণ করেছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য না থাকলেও এর পিছনে আইএস জঙ্গিদের হাত থাকতে পারে বলে মনে করছেন অনেকেই।
অপহৃত চার জনের প্রত্যেকেই সিরতে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত। এঁদের মধ্যে তিন জন সিরতে ক্যাম্পাসে অধ্যাপনা করেন। চতুর্থ জন সিরতে-র শাখা ক্যাম্পাস জুফরা-র কর্মী। লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলির ভারতীয় দূতাবাস সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৯ জুলাই রাতে ওঁরা চার জন ভারতের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। রাত এগারোটা নাগাদ দূতাবাস জানতে পারে, সিরতে শহরের ৫০ কিলোমিটার দূরে একটি চেকপোস্টের কাছে ওই চার জনকে ‘আটক’ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জানা যায়, চার জনেই আসলে অপহৃত হয়েছেন। শুক্রবার সন্ধে ছ’টা নাগাদ ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ টুইট করেন, ‘‘ভাল খবর! আটক চার জনের মধ্যে দু’জনকে উদ্ধার করে সিরতে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়ে আসা গিয়েছে! বাকিদের খোঁজ চলছে!’’ এর পাঁচ মিনিট পরেই টুইট করেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজও। ‘‘অপহৃ়ত চার জনের মধ্যে দু’জনকে মুক্ত করতে পেরে আমরা খুশি! বাকিদেরও ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে’’, লেখেন তিনি।
সুষমার টুইটেই জানা যায়, ছাড়া পেয়েছেন লক্ষ্মীকান্ত এবং বিজয় কুমার। খবরটা শুনে লক্ষ্মীকান্তের কাকা বলেন, ‘‘বাড়ির ছেলেকে ফিরে পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীকে, বিদেশমন্ত্রীকে ধন্যবাদ।’’ লক্ষ্মীকান্তের সঙ্গে তাঁর স্ত্রীরও কথা হয়েছে বলে পরিবার সূত্রের খবর। বিজয় কুমারের ভাই হেমন্ত সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বিজয়-লক্ষ্মী-গোপী-বলরাম চার জনে একসঙ্গেই বিমান ধরবেন বলে ঠিক ছিল। বিজয় সিরতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রধান। ওই বিভাগেই পড়ান বলরামও। বিদেশ মন্ত্রকের কাছ থেকে হেমন্ত জেনেছেন, যে জায়গায় অপহৃ়ত হয়েছিলেন, ঠিক সেখানেই বিজয়কে ছেড়ে দিয়ে গিয়েছে অপহরণকারীরা।
কিন্তু কারা লক্ষ্মীকান্তদের অপহরণ করেছিল, বাকি দু’জনকেই বা কাদের কাছ থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা চলছে, সে ব্যাপারে বিদেশ মন্ত্রক কিছুই জানায়নি। অপহরণের দায়ও স্বীকার করেনি কোনও গোষ্ঠী। তা হলে আইএস-এর বিরুদ্ধে সন্দেহের কারণ কী? ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, লিবিয়ার ওই অঞ্চলে আইএস-এর যথেষ্ট প্রভাব রয়েছে। গত বছর থেকে গদ্দাফির জন্মশহর সিরতে-সহ লিবিয়ার একাধিক শহরের দখল নিয়েছে তারা।
ভারত সরকারের তরফে তখনই ভারতীয়দের দেশে ফিরে আসতে বলা হয়েছিল। গোপীকৃষ্ণরা ফিরে না এসেই বিপদে পড়লেন!
এখনও আটকে থাকা গোপীকৃষ্ণ এবং বলরামের পরিবারের তরফে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। অন্ধ্রপ্রদেশ সরকারও কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে। ২০০৭ সাল থেকে সিরতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক হিসেবে কাজ করছেন বছর চল্লিশের গোপীকৃষ্ণ। বুধবার রাতে স্ত্রী কল্যাণীর সঙ্গে শেষ কথা হয়েছিল তাঁর। কল্যাণী জানিয়েছেন, গোপীকৃষ্ণ তাঁকে বলেন, ত্রিপোলি থেকে তিউনিসিয়া এসে সেখান থেকে দিল্লির বিমান ধরবেন। কিন্তু পরে জানা যায়, ভিসা নিয়ে কিছু সমস্যার জেরে সড়ক পথেই তিউনিসিয়া আসছিলেন তিনি। রাত এগারোটার পর তাঁর সঙ্গে আর যোগাযোগ করা যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে ত্রিপোলির ভারতীয় দূতাবাসে ফোন করে তাঁরা অপহরণের খবরটা পান বলে জানিয়েছেন গোপীর ভাই মুরলী। তার পরেই এ বিষয়ে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ চেয়ে দরবার করেন তাঁরা। রাজ্য সরকারের তরফেও শুক্রবার সকালে বিদেশ মন্ত্রী সুষমা স্বরাজকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। দিল্লিতে অন্ধ্র সরকারের বিশেষ প্রতিনিধি কে রাম মোহন রাও ত্রিপোলিতে ভারতীয় দূতাবাসের এক আধিকারিকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।
আপাতত দমবন্ধ করে ভাল খবরের অপেক্ষায় ছটফট করছে গোপীকৃষ্ণ আর বলরামের পরিবার। বলরামের স্ত্রী শ্রীদেবী বলছিলেন, ‘‘বুধবার রাতেও ফোন করে বলেছিল, শনি-রবিবারের মধ্যে বাড়ি আসবে। কখন যে গলাটা আবার শুনতে পাব!’’ আশার আলো অবশ্য দেখা গিয়েছে ইতিমধ্যেই। বলরামের ভাই ভগীরথ জানান, শ্রীদেবীর সঙ্গে কথা হয়েছে সদ্য মুক্তিপ্রাপ্ত লক্ষ্মীকান্তের। লক্ষ্মীই তাঁকে বলেছেন, তিনি জেনেছেন যে অপহরণকারীদের কিছু দাবিদাওয়া ছিল। সেগুলো মিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আগামী কালই ছাড়া পেতে পারেন গোপীকৃষ্ণ এবং বলরাম! লক্ষ্মীকান্তের বোনও প্রার্থনা করছেন, তাঁর ভাই যেমন ছাড়া পেয়েছেন, ভাইয়ের বাকি দুই সঙ্গীরও যেন ছাড়া পেতে দেরি না হয়!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy