সামনে এল আরও পঁচিশটি গোপন ফাইল। কিন্তু তাতেও খোলসা হল না সুভাষচন্দ্র বসুর মৃত্যুরহস্য। তবে নেতাজিকে ঘিরে দেশবাসীর আবেগে কোনও হেরফের যে হওয়ার নয়, তা বুঝেই মোদী সরকার আজ ঘোষণা করল, দিল্লিতে তাঁর নামে একটি স্মারক গড়ে তোলা হবে। বহু সংগঠন ও অনেক সাংসদ দীর্ঘ দিন ধরে এই দাবি জানিয়ে আসছেন। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা আজ ঘোষণা করেন, ‘‘নেতাজির নামে দিল্লিতে বিশাল একটি স্মারক গড়ে তোলা হবে। আমরা তার কাজও শুরু করে দিয়েছি। সেখানে নেতাজির জীবন, স্বাধীনতা সংগ্রাম ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে তথ্য থাকবে।’’
কিন্তু সেই স্মারকে সুভাষচন্দ্রের মৃত্যু নিয়ে কী তথ্য রাখবে সরকার! এ বছরের জানুয়ারি মাস থেকেই নেতাজি সংক্রান্ত গোপন ফাইলগুলি ধাপে ধাপে প্রকাশ করার কথা ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পরে গত ২৩ জানুয়ারি ১০০টি ও ২৯ মার্চ ৫০টি ফাইল সামনে এনেছে কেন্দ্র। সংস্কৃতিমন্ত্রী মহেশ শর্মা আজ জাতীয় লেখ্যাগারে আরও ২৫টি গোপন ফাইল প্রকাশ করলেন। তবে তৃতীয় দফার ফাইলগুলিতেও নতুন কিছুই মিলল না।
প্রথম দফার ১০০টি ফাইল প্রকাশের পরেই সংস্কৃতিমন্ত্রী স্বীকার করেছিলেন, ১৯৪৫ সালের ১৮ অগস্টের পরেও নেতাজি বেঁচে ছিলেন, তা মনে হওয়ার মতো কোনও তথ্য ওই সব ফাইলে নেই। বরং তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনায় নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করার মতো পারিপার্শ্বিক প্রমাণ রয়েছে। এবং ওই দুর্ঘটনাতেই নেতাজির মৃত্যু হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়েছে তখনকার বিভিন্ন সরকারি নোটেও। তা সত্ত্বেও কিন্তু জাপানের রেনকোজি মন্দির থেকে নেতাজির ‘চিতাভস্ম’ আনার বিষয়ে ধারাবাহিক ভাবে গড়িমসি করা হয়েছে। মূলত তা নেতাজির মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য ও বিতর্কের কারণেই। আজকের ফাইলগুলিতে যেমন দেখা যাচ্ছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই দুর্ঘটনায় মৃত্যুর তত্ত্ব মানতে রাজি হননি। নেতাজি বিশেষজ্ঞ অনুজ ধর এই সব ফাইল ঘেঁটে বলেন, ‘‘তেমন কিছু নেই। শুধুই পুনরাবৃত্তি। গোয়েন্দা সংস্থার আদান-প্রদান সংক্রান্ত ফাইলগুলি সামনে এলে বরং নতুন কিছু মিলতে পারে।’’
সংসদে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু জানিয়েছেন, জাপান সরকার তাদের কাছে থাকা ৫টি ফাইলের মধ্যে দু’টি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল এ বছরের শেষ দিকে প্রকাশ করবে। ভারত সরকার সব ক’টিই সামনে আনার ব্যাপারে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। মহেশ শর্মাও জানান, জাপান ও রাশিয়া থেকে আরও তথ্য এলে তা নেতাজি গবেষকদের ও নতুন প্রজন্মের কাজে আসবে।
কেন্দ্রের প্রকাশ করা ১৭৫টি ফাইলে তেমন কিছু না মিললেও অনেকের ধারণা, নিশ্চয়ই বিস্ফোরক কিছু আছে গোপন ফাইলে। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিদেশমন্ত্রী নেতাজির পরিবারের লোকজনদের সঙ্গে ঘণ্টা দেড়েক সময় কাটানোর পর যে ভাবে ঢাকঢোল পিটিয়ে গোপন ফাইল সামনে আনার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছিল, তাতেই এই ধারণা আরও জোর পায়। তা ছাড়া, বিস্ফোরক কিছু না থাকলে এত দিন ফাইলগুলি গোপনই বা রাখা হয়েছিল কেন? তাই নেতাজি-অনুরাগী ও গবেষকদের আশা, আগামী দিনে যে সব ফাইল প্রকাশ করা হবে, তাতেই থাকতে পারে রোমাঞ্চকর কোনও তথ্য!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy