Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

উত্তরাখণ্ডে মৃত ২৭, বন্যায় ডুবছে বহু রাজ্য

গত বছরের ক্ষয়ক্ষতি সামলে ওঠার কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তার আগেই ফের দুর্যোগের আশঙ্কা করছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। ধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি ও বন্যার জেরে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় গত দু’দিনে অন্তত ২৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা, আগামী ২৪ ঘণ্টা ওই রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।

বন্যা কবলিত কাজিরাঙার বেশির ভাগ এলাকা। উঁচু জায়গার সন্ধানে জঙ্গলের অন্য দিকে চলেছে হাতির দল। ছবি: উজ্জ্বল দেব

বন্যা কবলিত কাজিরাঙার বেশির ভাগ এলাকা। উঁচু জায়গার সন্ধানে জঙ্গলের অন্য দিকে চলেছে হাতির দল। ছবি: উজ্জ্বল দেব

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৪ ০২:৫৬
Share: Save:

গত বছরের ক্ষয়ক্ষতি সামলে ওঠার কাজ এখনও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তার আগেই ফের দুর্যোগের আশঙ্কা করছে উত্তরাখণ্ড প্রশাসন। ধস, মেঘভাঙা বৃষ্টি ও বন্যার জেরে উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় গত দু’দিনে অন্তত ২৭ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের আশঙ্কা, আগামী ২৪ ঘণ্টা ওই রাজ্যে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী দাঁড়াবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন প্রশাসন।

গত বছর জুন মাসে মেঘভাঙা বৃষ্টি ও হড়পা বানে কার্যত ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে গিয়েছিল কেদারনাথ ও সংলগ্ন বিশাল অঞ্চল। সরকারি হিসেবে মারা গিয়েছিলেন পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষ। তার পর দীর্ঘ দিন বন্ধ ছিল কেদারনাথ মন্দির। কয়েক মাস আগেই তা ফের খুলেছে। তার পর থেকে রাজ্যের পর্যটনের হাল ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন। কিন্তু এ দিন যে ভাবে বৃষ্টির জেরে চার ধামে যাওয়ার রাস্তাগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাতে অনেকের ধারণা এর প্রভাব পর্যটনে পড়বেই। তবে আপাতত সে সব কথা ভাবছে না রাজ্য প্রশাসন। তাদের চিন্তা, পৌরি জেলার যমকেশ্বর তহসিলে যে ২০০ জন গ্রামবাসী আটকে রয়েছেন, তাঁদের কী ভাবে বের করে আনা যায়। এ ছাড়াও শনিবার সকালে বৃষ্টির জেরে দেহরাদূন শহরের কাঠবাংলা এলাকায় দু’টি বাড়ি ভেঙে পড়ায় উদ্বেগ বেড়েছে উদ্ধারকর্মীদের। তাঁদের চিন্তা, ধ্বংসস্তূপের তলায় জীবিত যাঁরা চাপা পড়ে রয়েছেন, তাঁদের কী ভাবে উদ্ধার করা যায়। তবে এমন বৃষ্টি যদি চব্বিশ ঘণ্টা চলতে থাকে, সে ক্ষেত্রে উদ্ধারকাজই বা কতটা চালানো সম্ভব হবে, তা এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

বৃষ্টির জেরে জল বাড়ছে উত্তরপ্রদেশের রাপ্তি নদীতেও। ইতিমধ্যেই তা বিপদসীমা ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। বন্যা সতর্কতাও জারি করা হয়েছে উত্তরপ্রদেশে। অবস্থা খারাপ হিমাচল প্রদেশেরও। তবে উত্তরাখণ্ডের পর বৃষ্টি ও বন্যা সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে বিহারের। সেখানে দ্বারভাঙা, পশ্চিম চম্পারণ ও নালন্দা জেলার হাল বেশ খারাপ। কমলা বলন ও গন্ডক নদীতে জলস্তর বাড়ায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে দ্বারভাঙা ও পশ্চিম চম্পারণের বিস্তীর্ণ এলাকা। অন্য দিকে পাঞ্চেন নদীর লাগোয়া বাঁধে ফাটল ধরায় জল উপচে পড়ে লাগায়া গ্রামগুলিতে। প্রশাসনের হিসেব মতো, শুধু দ্বারভাঙা জেলাতেই প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ বন্যার কবলে পড়েছেন। উদ্ধার কাজ শুরু হলেও অনেকেরই আশঙ্কা, উত্তরাখণ্ডের মতো এ রাজ্যেও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়বে। তার পর কী ভাবে পরিস্থিতি সামলানো যাবে, তা ভেবেই কপালে ভাঁজ বাড়ছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলী দফতরের কর্মীদের। তাদের আটটি দল এখন সেখানে কাজ করছে। কলকাতা থেকে আরও চারটি দলের যাওয়ার কথা। তবে বিহারের বন্যার জন্য অনেকেই অতিবৃষ্টির পাশাপাশি দায়ী করছেন লাগোয়া নেপালের পরিস্থিতিকে। সেখানেও হড়পা বান ও ভূমিধসে গত তিন দিনে অন্তত ৫৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। নিখোঁজ অন্তত ৭৫ জন। অনেকের ধারণা, নেপালের সঙ্কোশী নদীর জলস্তর বাড়াতেই ডুবেছে বিহার।

ভারী বৃষ্টি শুধু নেপাল, উত্তরাখণ্ড ও বিহারের মতো রাজ্যেই নয়, এর জেরে উত্তর-পূর্বের অসম, অরুণাচল ও মেঘালয়ের দশাও বেশ খারাপ। প্রশাসন জানিয়েছে, বন্যায় ডুবে গিয়েছে কাজিরাঙা জাতীয় অরণ্যের ৭০% এলাকা। বিপর্যস্ত অরুণাচল ও মেঘালয়ও। তিন রাজ্য মিলিয়ে, গত ৪৮ ঘণ্টায় ৫ শিশু-সহ ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE