লালকৃষ্ণ আডবাণী
মাস কয়েক আগেই ধুমধাম করে নিজের সরকারের দু’বছর পালন করলেন নরেন্দ্র মোদী। আর আজ একেবারেই নিশ্চুপে জন্মদিন কেটে গেল বিজেপির নতুন জমানার তৈরি করা একটি কমিটির। সেটি হল ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’।
দু’বছর পেরিয়ে আর একটি জন্মদিনও কেটে গেল। কিন্তু বিজেপির এই পথপ্রদর্শক কমিটির একটি বৈঠকও হল না।
এই কমিটিতে রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, প্রবীণ বিজেপি নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী। এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পর ৭৫ বছর পার হয়ে যাওয়া প্রবীণ নেতাদের কোনও পদে না বসানোর এক অঘোষিত নীতি রূপায়ণ শুরু হয়ে যায় গেরুয়া শিবিরে। সেই অঘোষিত নীতি মেনেই আডবাণী-জোশীর মতো প্রবীণদের রাখা হয়নি দলের সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন সংসদীয় বোর্ডে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বা সরকারের কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদেও ঠাঁই পাননি তাঁরা। আসলে লোকসভা ভোটের আগে প্রধানমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে মোদীকে সামনে আনার সময় থেকেই প্রবীণ-ব্রিগেড কড়া বিরোধিতা করেছিলেন। ক্ষমতায় এসে তাঁদেরও দায়িত্ব থেকে দূরে সরিয়ে রাখেন মোদী।
কিন্তু এ নিয়ে বিস্তর বিতর্ক চলতে থাকায় একটি গালভরা কমিটি তৈরি করা হয়েছিল ‘মার্গদর্শক মণ্ডল’ নামে। সেখানেই এই প্রবীণ নেতাদের সদস্য করে রাখা হয়। সেই সময় দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই প্রবীণ নেতারা সকলের কাছে অনুপ্রেরণা। কমিটিতে থেকে তাঁরা দলকে যাবতীয় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে পথ দেখাবেন। তাঁরা নিরন্তর পরামর্শ দিতে থাকবেন। কিন্তু দেখা গিয়েছে, দু’বছরে দলের কোনও সিদ্ধান্তেই তাঁদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। এমনকী, আজ পর্যন্ত কমিটির একটি আনুষ্ঠানিক বৈঠকও হয়নি! আডবাণী-ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ বলেন, মার্গদর্শক মণ্ডলের জন্মলগ্ন থেকেই জানা ছিল এটি নেহাতই লোকদেখানো একটি কমিটি। এখন আডবাণীর সঙ্গে দেখা করার লোকজনও অনেক কমে গিয়েছে। বিজেপির যে নেতারা আগে ভিড় জমাতেন, তাঁরাও এখন বুঝছেন, ক্ষমতার ভরকেন্দ্র একেবারেই পাল্টে গিয়েছে। স্ত্রী-বিয়োগের পর এখন অনেকটাই নিঃসঙ্গ আডবাণী। বই পড়েই বেশিরভাগ সময় কাটান। সংসদ চললে নিয়মিত যান, কারও জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে হাজিরা দেন। আর চারটি সংসদীয় কমিটির বৈঠকও মন দিয়ে করেন।
আর এক প্রবীণ সদস্য মুরলীমনোহর জোশী অবশ্য সক্রিয় দেশের পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে। ঘনঘন নাগপুরে গিয়ে তিনি সঙ্ঘের নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। বিভিন্ন আলোচনাসভা ও লেখাপড়া নিয়েই রয়েছেন। তবে গত দু’বছরে এই পথপ্রদর্শক কমিটির একটি বৈঠক না হলেও বিজেপির এই প্রবীণ ব্রিগেড চুপ ছিলেন না। তাঁরা মোদী-অমিত শাহের বিরুদ্ধে বারবার জেহাদ ঘোষণা করেছেন। যশবন্ত সিন্হা, শান্তা কুমারদের সঙ্গে নিয়ে কখনও দিল্লির ভোটে হারের পর, কখনও বিহারে ভরাডুবির পর, কখনও কীর্তি আজাদের বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণের পর সরব হয়েছেন। প্রতিবারই প্রবীণ ব্রিগেডকে নিরস্ত করতে বিজেপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘‘এঁরা দলের অনুপ্রেরণা। তাই দলকে শাসন করতেই পারেন।’’ কেন দু’বছরে একটিও বৈঠক হল না? জবাবে বিজেপি মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘নানা বিষয়ে তাঁদের কাছ থেকে নিরন্তর পরামর্শ নেওয়া হয়।’’
কিন্তু সেই গতে বাধা বক্তব্য থেকে বেরিয়ে কোনও বিষয়েই তাঁদের সামিল করা হয়নি। তবে সম্প্রতি ইলাহাবাদে ভোটের প্রচার শুরু করার সময় মোদী দু’পাশে আডবাণী ও জোশীকে নিয়ে বসেছিলেন। যদিও তাঁদের বক্তব্য রাখতে বলা হয়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy