রামচন্দ্র ছত্রপতি
ধর্মের কল বাতাসেই নড়ল!
সত্যান্বেষণে নেমে খুন হয়ে যাওয়ার পরে এক জনের পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল গত বছর। ফের সেই কাগজ প্রকাশের তোড়জোড় চলছে। আর যে ধর্ষণকারীর কাগজ শুক্রবার পর্যন্ত রমরমিয়ে চলেছে, শনিবার থেকে তা আপাতত বন্ধ হয়ে গেল।
প্রথম জন ‘পুরা সচ্’ পত্রিকার সম্পাদক রামচন্দ্র ছত্রপতি। ‘ডেরা সচ্চা সৌদা’র ‘হজুর বাবা’ গুরমিত রাম রহিমের ব্যভিচারের পর্দাফাঁসের পরে ২০০২ সালে খুন হয়ে যান। তার পরে নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে সংবাদপত্রটি চালাচ্ছিলেন রামচন্দ্রের দুই ছেলে— অংশুল এবং অরিদমন। কিন্তু আদালতে শুনানিতে হাজিরা দেওয়া, তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ, সাক্ষী জোগাড়, সাক্ষীরা যাতে ভীতসন্ত্রস্ত না হয়ে পড়েন তার ব্যবস্থা করা— ইত্যাদি কাজে তাঁরা ব্যস্ত হয়ে পড়ায় গত বছরই বন্ধ হয়ে যায় পত্রিকাটি।
আরও পড়ুন: ষষ্ঠ ছবির কী হবে, ভক্তেরা উদ্বেগেই
নিহত রামচন্দ্রের বন্ধু, আইনজীবী লেখরাজ ঢোট শনিবার আনন্দবাজারকে ফোনে বলেন, ‘‘ওঁদের (অংশুল ও অরিদমন) তো এখন দিনরাত আদালতেই চক্কর কাটতে হয়। এখন ওঁরা কোর্টেরই হোলটাইমার।’’ আগামী সেপ্টেম্বরেই রামচন্দ্র খুনের মামলার শুনানি রয়েছে। এ দিনও তার কাগজপত্র জোগাড় করতে ব্যস্ত অংশুল ফোনে বলেন, ‘‘এক-একটি শুনানির দিনে আমরা ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি।’’
ভয় কীসের? অংশুল জানান, ‘হজুর বাবা’ এতটাই প্রভাবশালী যে তার বিরুদ্ধে সাক্ষী জোগাড় করা ছিল প্রথম চ্যালেঞ্জ। এখন সেই সব সাক্ষীদের বিগড়ে দেওয়ার জন্য কখনও টাকার প্রলোভন দেখানো হচ্ছে, কখনও দেওয়া হচ্ছে খুনের হুমকি। প্রশাসনের কাছ থেকে তেমন কোনও সহায়তা মিলছে না। এই প্রতিকূল অবস্থায় জনাকয়েক বন্ধুবান্ধব মিলে বারবার সাক্ষীদের বুঝিয়ে তথ্যপ্রমাণ জোগাড় করে শুনানিতে হাজির হচ্ছেন অংশুল ও তাঁর ভাই।
অংশুল বলেন, ‘‘এই সব করতে গিয়েই আর পত্রিকা প্রকাশের সময় মেলে না। শেষমেশ অনলাইনে পত্রিকা প্রকাশের চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু পেরে উঠিনি।’’ পরিবারের সামান্য জমি-জায়গা রয়েছে। মূলত চাষবাসের রোজগারেই দিন গুজরান হয় দুই ভাইয়ের পরিবারের। সিরসার বাসিন্দা বীরেন্দ্র ভাটিয়া ‘পুরা সচ্’-এ আগে নিয়মিত কলাম লিখতেন। এ দিন তিনি বলেন, ‘‘শুক্রবার হজুর বাবা দোষী সাব্যস্ত হওয়ায় ওদের গুন্ডাগর্দি অনেকটাই কমবে বলে মনে হয়। এ বার হয়তো সাক্ষ্যপ্রমাণ জোগাড়ে ততটা অসুবিধে হবে না। তাই এ বার ‘পুরা সচ্’ বের করার আবারও চেষ্টা করব।’’
‘পুরা সচ্’ বন্ধ হয়ে গেলেও শুক্রবার পর্যন্ত রমরমিয়ে চলেছে ‘হজুর বাবা’র মুখপত্র ‘সচ্ কঁহু’। পঞ্জাবি ও হিন্দি— দুই ভাষাতেই প্রকাশিত এই দৈনিকটি রোজ প্রায় দেড় লক্ষ কপি ছাপা হচ্ছিল। মূলত গুরমিত রাম রহিমের ভক্তরাই সংবাদপত্রটির ক্রেতা। এতে প্রকাশিত হচ্ছিল ‘হজুর বাবা’র মাহাত্ম্য, তার জনহিতকর কাজ, তার রাজনৈতিক দর্শন, নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে তার ওঠাবসার সচিত্র প্রতিবেদন। এই সংবাদপত্রটি ছাড়াও পঞ্জাব-চণ্ডীগড়ের বিভিন্ন খবরের কাগজে বাবার মাহাত্ম্য ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ‘ডেরা সচ্চা সৌদা’য় তৈরি হয় একটি প্রেস কমিটি। গুরমিত রাম রহিমের বেতনভুক সাংবাদিকরা সেখানে বসে তৈরি করেন বিভিন্ন সংবাদপত্রের উপযোগী নানা ধরনের খবর। তাতেও মিশিয়ে দেওয়া হয় বাবার মাহাত্ম্য।
সিরসার এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, ‘‘রামচন্দ্র খুনের পরে চণ্ডীগড়ের এবং সিরসার সাংবাদিকদের মাথারা বসে গুরমিত রাম রহিমের দালালদের অনেককেই চিহ্নিত করে নিষিদ্ধ করেন। স্থানীয় প্রেস ক্লাব থেকেও তাঁদের বহিষ্কার করা হয়। এঁদের একটা বড় অংশই পরে ডেরা সচ্চা সৌদার প্রেস কমিটিতে যোগ দেন। তাঁদের লেখা সত্যি কথা এতদিন ‘সচ্ কঁহু’ এবং বিভিন্ন প্রেস রিলিজের মাধ্যমে পড়তে হচ্ছিল এলাকার পাঠকদের।’’
শনিবার থেকে ‘সচ্ কঁহু’ বন্ধ। তার সঙ্গে লড়াইয়ে প্রথম ইনিংসে টাকা এবং পেশিশক্তির কাছে হার মেনেছিল রামচন্দ্রের ‘পুরা সচ্’। কিন্তু আবার সে ফিরতে চলেছে। প্রতিষ্ঠিত হতে চলেছে সত্যেরই জয়গান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy