Advertisement
০২ মে ২০২৪

কড়া পাক-নীতির প্রশ্নে এককাট্টা সকলে

কাশ্মীর ক্ষত বেগ দিচ্ছে মাস খানেক ধরেই। আজও ভূস্বর্গের জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর জেরে। বদগাম জেলায় দু’জন ও সোপোরে এক জনের মৃত্যু হয়েছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি ও শ্রীনগর শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৬ ০৪:২৫
Share: Save:

কাশ্মীর ক্ষত বেগ দিচ্ছে মাস খানেক ধরেই। আজও ভূস্বর্গের জায়গায় জায়গায় বিক্ষোভ ও বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ হয়েছে হিজবুল জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর জেরে। বদগাম জেলায় দু’জন ও সোপোরে এক জনের মৃত্যু হয়েছে। ভূস্বর্গে বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে ও ঘরোয়া রাজনীতিতেও একাধিক বার অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে কেন্দ্রকে। কিন্তু ইসলামাবাদে সার্ক দেশগুলির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠককে হাতিয়ার করে সেই ক্ষত অনেকটাই ভরাট করে নিতে সক্ষম হল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। রাজনাথ সিংহ যে ভাবে পাকিস্তান সফর সামলেছেন তাতে মোটের উপরে খুশিই ছিল কেন্দ্র। আর আজ পূর্ব ভারতে বড়সড় জঙ্গি হামলার দিনে সন্ত্রাসের প্রশ্নে যে ভাবে গোটা সংসদ সরকারের পাশে এসে দাঁড়াল, তাতে দিনের শেষে স্বস্তিতে সরকার। কাশ্মীর নিয়ে বিরোধী দলের তোপ উধাও, উল্টে সন্ত্রাস দমনের প্রশ্নে কেন্দ্রের পাশে এসে দাঁড়াল সব দল।

শুধু তা-ই নয়, ভারতের অবস্থানকে সমর্থন জানিয়ে এ দিনই মার্কিন বিদেশ দফতর সতর্ক করেছে পাকিস্তানকে। বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মার্ক টোনার বলেছেন, ‘‘আমাদের স্পষ্ট অবস্থান হলো, প্রতিবেশী দেশকে নিশানা করছে যারা, অন্য জঙ্গিদের সঙ্গে সেই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে পাকিস্তানকে।’’ ইসলামাবাদ যে ভারত-বিরোধী জঙ্গিদের আলাদা চোখে দেখছে, সেটাও স্বীকার করে নেন মার্কিন ওই মুখপাত্র। কাশ্মীর নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব বান মুন নীরব কেন, সাংবাদিকরা এই প্রশ্ন করলে তার জবাবেও গুরুত্ব পেয়েছে ভারতের অবস্থান। বুরহানের মৃত্যুর পরে আশান্তি বাড়তে থাকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব, সব পক্ষকে চূড়ান্ত সংযমের পরিচয় দিতে ও শান্তির পথে সমস্যা মেটানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। আজ বলা হয়, মুন যা বলার আগেই বলেছেন। তাঁর অবস্থান বদলায়নি। বুরহান-পর্বে কাশ্মীরে গণভোটের দাবি খুঁচিয়ে তোলার যে চেষ্টা ইসলামাবাদ চালিয়েছে, তা এতে ধাক্কা খেল বলে মনে করা হচ্ছে।

ঘরোয়া রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক স্তরে এই কূটনৈতিক সাফল্য তাদের নিরন্তর চেষ্টার ফল বলেই মনে করছে মোদী সরকার। শত প্ররোচনাতেও ইসলামাবাদে সার্ক বৈঠকে যোগ না দেওয়ার পথে হাঁটতে রাজি ছিলেন না নরেন্দ্র মোদী, রাজনাথরা। ঠিক হয়, পাকিস্তানের মাটিতে দাঁড়িয়েই তাদের আসল চেহারা তুলে ধরা হবে সার্কের মতো আন্তর্জাতিক মঞ্চে। দেড় দিনের পাকিস্তান সফরে সেটাই করেছেন রাজনাথ। গত কাল দেশে ফিরেছেন। আজ তিনি সংসদে বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবিরোধী ওই মঞ্চ থেকে ভারত আবেদন রেখেছে, কিছু ব্যক্তি ও সংগঠনের উপরে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, সার্ক দেশগুলি যেন তা মান্য করে।’’

কেন্দ্রের বক্তব্য, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামাত-উদ-দাওয়ার হাফিজ সইদ থেকে শুরু করে হিজবুল নেতা সালাউদ্দিন, জইশ-ই-মহম্মদ নেতা মাসুদ আজহার কিংবা লস্কর নেতা জাকিউর রহমান লকভির মতো জঙ্গিরা পাক প্রশাসনের একাংশের মদতে সক্রিয় রয়েছে। পাকিস্তানে বসেই যে জঙ্গিরা ভারত-বিরোধী কাজ করে যাচ্ছে— পরোক্ষে সেই উদাহরণ তুলে ধরে সার্কের মঞ্চে ইসলামাবাদকে ফের বেআব্রু করে দিতে চেয়েছেন রাজনাথ। পাক সরকার যে ওই জঙ্গিদের মদত দিয়ে যাচ্ছে, তা বুঝিয়ে দিতে ইসলামাবাদেই রাজনাথ বলেছেন, ‘‘ভাল বা খারাপ সন্ত্রাস বলে কিছু হয় না। শুধু সন্ত্রাসবাদী নয়, সন্ত্রাসে যারা মদত জোগাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়াটা জরুরি। নিজেরা সন্ত্রাসের শিকার হয়েও পাকিস্তান এটা বুঝতে পারছে না।’’ হিজবুল নেতা বুরহানের সমর্থনে পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের বিবৃতি যে দিল্লি ভাল ভাবে নেয়নি তা-ও স্পষ্ট করে দেন রাজনাথ। বলে এসেছেন, এক জঙ্গির মৃত্যুকে মহিমান্বিত করাটা মোটেই ঠিক কাজ নয়।’’ এতে সমর্থন জানিয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ, আফগানিস্থান।

পাক অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী চৌধুরি নিসার আলির সঙ্গে করমর্দন না করা শুধু নয়, তাঁর মধ্যাহ্নভোজেও যাননি রাজনাথ। রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা গুলাম নবি আজাদ এ নিয়ে প্রশ্ন করলে রাজনাথ বলেন, ‘‘বৈঠক শেষে অভ্যন্তরীণ মন্ত্রী সকলকে মধ্যহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু আয়োজক দেশের মন্ত্রী নিজেই গাড়ি চেপে সেখান থেকে চলে যান। তখন দেশের মর্যাদার কথা ভেবে আমার যা করার ছিল আমি সেটাই করেছি। তবে আমার কোনও ক্ষোভ নেই। ওখানে আমি খেতে যাইনি। ওদের যা কাজ, ওরা সেটাই করেছে।’’

ভারত আক্রমণ শানাবে বুঝেই কাল সার্কের বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী ও অভ্যন্তরীণ মন্ত্রীর বক্তব্যের পরেই টিভিতে সরাসরি সম্প্রসারণ বন্ধ করে দেয় ইসলামাবাদ। যা নিয়ে বিতর্ক চলছে। তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েন এ দিন বিষয়টি তুললে রাজনাথ বলেন, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বক্তব্য লাইভ না দেখানোটা রীতি কি না, তা বিদেশ মন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার পরেই বলতে পারব। তবে আমি জানি, আমার সঙ্গে দূরদর্শন-সহ অন্যান্য সংবাদসংস্থার যে প্রতিনিধিরা ভারত থেকে গিয়েছিলেন তাদের সভাগৃহে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’’ আগামী দিনে সন্ত্রাস প্রশ্নে ভারত কোনও ভাবে নরম মনোভাব নেবে না বলে আশ্বস্ত করে রাজনাথ জানান, পাক সেনা গুলি চালালে, এ-পার থেকেও গুলি চলবে। এমন নির্দেশই দেওয়া আছে। এর জন্য কারও অনুমতি লাগবে না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE