Advertisement
১১ মে ২০২৪

ভাইরাস হানায় টাকা লোপাট এটিএমে, ৬ লক্ষ কার্ড বদলে দেবে ব্যাঙ্ক

কার্ড কলকাতায়। অথচ ‘তা’ ব্যবহার করে টাকা উঠছে চিনে। শহরে এটিএম কার্ড জালিয়াতির এমন ঘটনা শোনা গিয়েছিল বুধবারই। এ ধরনের প্রায় সাড়ে ছ’শো অভিযোগ জমা পড়েছে সারা দেশে। তার তদন্তে নেমে কার্যত সর্ষের মধ্যেই ভূতের আশঙ্কা করছে পুলিশ।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০১৬ ০৩:৪২
Share: Save:

কার্ড কলকাতায়। অথচ ‘তা’ ব্যবহার করে টাকা উঠছে চিনে। শহরে এটিএম কার্ড জালিয়াতির এমন ঘটনা শোনা গিয়েছিল বুধবারই। এ ধরনের প্রায় সাড়ে ছ’শো অভিযোগ জমা পড়েছে সারা দেশে। তার তদন্তে নেমে কার্যত সর্ষের মধ্যেই ভূতের আশঙ্কা করছে পুলিশ। তাঁদের ও বিভিন্ন ব্যাঙ্ক কর্তাদের ধারণা, এটিএম নেটওয়ার্কে ঢুকিয়ে দেওয়া ম্যালওয়ারের (চলতি কথায় ভাইরাস) মাধ্যমেই গ্রাহকদের এটিএম কার্ডের তথ্য চলে গিয়ে থাকতে পারে দুষ্কৃতীদের হাতে। যা কাজে লাগিয়ে বিদেশে বসেই অ্যাকাউন্ট সাফ করছে তারা।

বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম ঝুঁকি নিতে রাজি নয় বলেই ৬ লক্ষ কার্ড বদলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্ক। বৃহস্পতিবার এ প্রসঙ্গে ব্যাঙ্কটির কলকাতা সার্কেলের সিজিএম পার্থপ্রতিম সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত। কিন্তু আগাম সতর্কতা হিসেবে সারা দেশে ৬ লক্ষ কার্ডকে চিহ্নিত করে ব্লক করা হচ্ছে। তা গ্রাহকদের জানানো হচ্ছে এসএমএস এবং ই-মেলে। চেষ্টা হচ্ছে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে নতুন কার্ড ইস্যু করার।’’ স্টেট ব্যাঙ্কের বিবৃতিতে দাবি, অন্য কিছু ব্যাঙ্কের নেটওয়ার্কে ভাইরাস হানার কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এড়াতেই এই ব্যবস্থা। ইতিমধ্যেই কিছু কার্ড বদলের খবর মিলেছে ব্যাঙ্ক অব বরোদা, সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক ইত্যাদিতেও। এই একই কারণে পিন পাল্টানোর পরামর্শ দিয়েছে এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, কানাড়া ব্যাঙ্ক, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কও।

সম্প্রতি একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এটিএম নেটওয়ার্কে এমন ভাইরাস হানার পরে নড়েচড়ে বসেছে দেশের অধিকাংশ ব্যাঙ্ক। ধাক্কা কতটা তীব্র, তা যাচাইয়ে নিজেদের এটিএম নেটওয়ার্কের নিরাপত্তাও খতিয়ে দেখতে (অডিট) শুরু করেছে তারা। যেমন, এক বিবৃতিতে ইয়েস ব্যাঙ্কের দাবি, স্বতঃপ্রণোদিত ভাবেই এই কাজে তারা হাত দিয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, ভাইরাস হানার খবর চাউর হওয়ার পরে লালবাজারের তরফে যোগাযোগ করা হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের কর্তাদের সঙ্গে। জানা গিয়েছে, মাস খানেক আগে এটিএম নেটওয়ার্কে ম্যালওয়্যার ঢুকেছিল। ব্যাঙ্কের হয়ে ওই নেটওয়ার্ক সামলায় একটি তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিক। হ্যাকাররা হানা দিয়েছিল তাদের সার্ভারেই। ব্যাঙ্কটির অনেক এটিএম মেট্রো স্টেশন, রেল স্টেশন, শপিং মলের মতো জনবহুল জায়গায় বসানো। ফলে অন্য ব্যাঙ্কের বহু গ্রাহকও সেখান থেকে টাকা তোলেন। তাই অনেক গ্রাহকের কার্ডের তথ্য হ্যাকারদের হাতে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

ঘটনাচক্রে কলকাতার যে আইনজীবীর কার্ডের প্রতিলিপি দিয়ে চিনে টাকা তোলা হয়েছে, তিনিও ওই ব্যাঙ্কের এটিএম ব্যবহার করেছিলেন।

বিভিন্ন সূত্রে দাবি, এই হানার জেরে সারা দেশে ১৯টি ব্যাঙ্কের প্রায় ৩২ লক্ষ কার্ডের নিরাপত্তা এখন প্রশ্নের মুখে। যদিও অর্থ মন্ত্রকের আশ্বাস, আতঙ্কিত হওয়ার কোনও কারণ নেই। মোট ডেবিট কার্ডের মাত্র ০.৫% নিয়ে এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এটিএম থেকে জালিয়াতি করে টাকা সরানো নতুন নয়। এই সূত্রে প্রথম ওঠে গয়া গ্যাং-এর কথা। এটিএম মেশিনের সুইচে আঠা লাগিয়ে রেখে সাময়িক ভাবে তা অচল করে দিত তারা। পরে সেই মেশিন আবার চালু করে টাকা হাতিয়ে নিত। ঝাড়খণ্ড গ্যাং আবার ‘বিখ্যাত’ ফোনে কথা বলে কার্ড এবং অ্যাকাউন্ট সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য হাতানোর জন্য। যা দিয়ে টাকা সাফ করতে তারা সিদ্ধহস্ত। পুলিশকর্তাদের আশঙ্কা, ব্লক হওয়া কার্ডের তথ্য চেয়েও তারা আসরে নামতে পারে। ফলে ফোনে তা কাউকেই না জানানোর পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।

একই রকম সমস্যা আছে ক্রেডিট কার্ডের ক্ষেত্রেও। তথ্য হাতিয়ে ক্রেডিট কার্ডের প্রতিলিপি (ডুপ্লিকেট কার্ড) তৈরির চল দুষ্কৃতীদের মধ্যে রয়েছে। যার পোশাকি নাম ‘ক্লোনিং’ বা ‘স্কিমিং’। গোয়েন্দা সূত্রের মতে, কার্ডের তথ্য হাতানোর জন্য বিশেষ যন্ত্র (কার্ড কপিয়ার) ব্যবহার করা হয়। সোয়াইপ মেশিনের মতো দেখতে ওই যন্ত্রে এক বার কার্ড ঘষে দিলেই কার্ডের চৌম্বকক্ষেত্রের মধ্যে থাকা তথ্য হাতে আসে। এ বার সেই তথ্য সফটওয়্যারের মাধ্যমে খালি কার্ডে ভরে দিলেই প্রতিলিপি তৈরি করা সম্ভব। কখনও আবার রক্ষীহীন এটিএম কাউন্টারেও এই ধরনের ‘কপিয়ার’ লাগিয়ে রাখে দুষ্কৃতীরা। গ্রাহক পিন দেওয়ার সময় তার ছবি তুলতে কিছু ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় লুকোনো ক্যামেরাও।

এ বার তালিকায় যোগ হচ্ছে চিনা গ্যাং-এর নামও। এটিএম নেটওয়ার্কে ভাইরাস ভরে বিদেশে বসে টাকা সাফ করেছে যারা। আগের জালিয়াতিগুলির ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীরা দেশে ছিল। বহু বার তারা ধরাও পড়েছে। কিন্তু চিনা গ্যাং বিদেশে বসে কাজ হাসিল করায় তাদের নাগাল পাওয়া শক্ত। ব্যাঙ্ককর্তাদের মতে, নেটওয়ার্কে ভাইরাস আক্রমণ হলে, সাবধান হওয়া আমজনতার পক্ষে কঠিন। কিন্তু তিন মাস অন্তর পিন পাল্টানোর মতো কিছু সাবধানতা নিতেই হবে।

সাবধান!

কার্ড রাখুন সুরক্ষিত জায়গায়। হারালে তখনই ব্যাঙ্ক ও থানায় জানান

অচেনা, অনির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইটে কেনাকাটা করবেন না

অপরিচিতকে কার্ড, তার নম্বর কিংবা সে সম্পর্কে তথ্য নয়। পাঠানো নয় ই-মেল, এসএমএসেও

এটিএমে কোনও যন্ত্র লাগানো আছে কি না, দেখুন। পিন টাইপ করুন হাত ঢেকে

মোবাইল অ্যালার্টের বিষয়ে (টাকা তোলার এসএমএস) সতর্ক থাকুন

• নিয়মিত বদলান পিন

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ATM cards Virus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE