বিশ্ব জুড়ে সাইবার দস্যু ‘ওয়ানাক্রাই’-এর হানার আঁচ ভারতেও। তেমন বিপর্যয় না ঘটলেও তালিকায় রয়েছে পুলিশের মতো সরকারি দফতর, উৎপাদন শিল্প ও ভোগ্যপণ্য সংস্থা। আমজনতার শঙ্কা ঘুচিয়ে এখন পর্যন্ত এই তালিকায় নেই কোনও সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্ক।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আক্রমণের শিকার হচ্ছে মূলত পুরনো ভার্সনের উইন্ডোজ এক্সপি বা তার আগের সফটওয়্যার রয়েছে এমন কম্পিউটার। সংবাদসংস্থা সূত্রের খবর দেশের ২.২ লক্ষ এটিএমের মধ্যে ৬০% উইন্ডোজ এক্সপি-তে চলে। এই পরিস্থিতিতে সাইবার হানার প্রতিরোধ গড়তে সমস্ত ব্যাঙ্ককে এটিএম সংক্রান্ত সফটওয়্যার উন্নত করে তোলা তথা ‘আপগ্রেড’ করার নির্দেশ দিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। এটাও বলা হয়েছে, ‘আপগ্রেড’ করেই এটিএম চালু করতে হবে।
সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে দেশের কিছু এটিএম বন্ধ রাখা হয়েছে বলে সংবাদসংস্থা সূত্রের খবর। যদিও স্টেট ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসির মতো বড় ব্যাঙ্কের কর্তারা জানাচ্ছেন, গ্রাহকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তাঁদের সফটওয়্যার প্রতিনিয়ত ‘আপগ্রেড’ করা হয়। এখনও কোনও ব্যাঙ্ক বা এটিএম এ ধরনের হামলা হওয়ার অভিযোগ জানায়নি। তবে এটিএমগুলিতে হামলা হলেও তাতে বড় মাপের ক্ষতি হবে না বলে মনে করছে ব্যাঙ্কিং সংস্থাগুলি। তাদের যুক্তি, এটিএমে তথ্য জমা থাকে না। ফলে তথ্য হারানোর ভয় কম। বড় জোর এটিএম বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই) অবশ্য জানাচ্ছে, এটিএম বন্ধ হবে না। এসবিআই-এর কলকাতা সার্কলের সিজিএম জানিয়েছেন, ৩০০০টি এটিএম-এর মধ্যে ১০০০টিতে সফটওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে। তবে কেন্দ্রীয় দফতর থেকেই যাতে একসঙ্গে এটিএমগুলির সফটওয়্যার আপগ্রেড করে দেওয়া যায়, সেই চেষ্টাই চলছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তা যদি সম্ভব হয়, তা হলে গ্রাহকদের কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না। কিন্তু যদি কেন্দ্রীয় দফতর থেকে সফটওয়্যার আপগ্রেড করা সম্ভব না হয়, তা হলে এটিএম কাউন্টারে গিয়েই সে কাজ করা হবে। তবে তার জন্যও এটিএম বন্ধ রাখার দরকার পড়বে না বলে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি। এটিএম-এ টাকা ভরতে যত ক্ষণ সময় লাগে, সফটওয়্যার আপগ্রেড করতেও সেটুকু সময়ই লাগবে বলে এসবিআই-এর ওই কর্তা জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন:তিন তালাক বাতিল হলে নতুন আইন
গত শনিবার-রবিবার ১০০টি দেশে হানা দিয়েছে সাইবার দস্যু ‘ওয়ানাক্রাই’। এই ভাইরাসের তাণ্ডবে লক্ষাধিক কম্পিউটার ব্যবস্থা অচল হয়ে গিয়েছে। হাসপাতাল, কারখানা, স্কুল, দোকানপাট, কারখানা— কিছুই রেহাই পায়নি। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ভারতে ওই হানাদার ভাইরাস বড় কোনও অঘটন ঘটাতে পারেনি।
কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদের কথায়, ‘‘আমরা আমাদের সাইবার নিরাপত্তা মজবুত করে তুলছি। গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, ভারতে এই সাইবার হানার প্রভাব প্রায় শূন্য।’’ যদিও রবিশঙ্করই পরে জানান, দেশের দু’টি রাজ্য— অন্ধ্রপ্রদেশ ও কেরলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। কিছু দফতরে কম্পিউটার ‘লক’ হয়ে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটলেও তথ্য খোয়া যাওয়ার কোনও খবর মেলেনি।
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থার কম্পিউটার সাইবার দস্যু ‘ওয়ানাক্রাই’-এর শিকার হয়। সংস্থাগুলির তরফে জানানো হয়, সাইবার হানায় বিদ্যুৎ দফতরের স্বাভাবিক পরিষেবা ব্যাহত হয়নি। কী ভাবে বিষয়টি ঘটল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে জানিয়েছেন রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy