Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
কাছাড়ে জেএমবি ঘাঁটি

জবিরুলের আশ্রয়দাতা আজিজুরও গ্রেফতার

নিছক করিডর হিসেবে নয়, কাছাড় জেলার গুমড়ায় ঘাঁটিই গড়েছিল জেএমবি। কলকাতা পুলিশ এসে জবিরুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আজ অসম পুলিশ গ্রেফতার করেছে তার ‘আশ্রয়দাতা’ আজিজুর রহমানকেও।

গুমড়ার এই টায়ার মেরামতির দোকানেই আশ্রয় নিয়েছিল জবিরুল। ছবি:পাপলু দাস

গুমড়ার এই টায়ার মেরামতির দোকানেই আশ্রয় নিয়েছিল জবিরুল। ছবি:পাপলু দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলচর শেষ আপডেট: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৮
Share: Save:

নিছক করিডর হিসেবে নয়, কাছাড় জেলার গুমড়ায় ঘাঁটিই গড়েছিল জেএমবি। কলকাতা পুলিশ এসে জবিরুল ইসলামকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আজ অসম পুলিশ গ্রেফতার করেছে তার ‘আশ্রয়দাতা’ আজিজুর রহমানকেও।

গুমড়ার করচূড়া এলাকায় আজিজুরের টায়ার মেরামতির দোকানেই থাকত জবিরুল। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্স যখন জবিরুলকে গ্রেফতার করে কলকাতায় নিয়ে যায়, তখনই অসম পুলিশ আজিজুর রহমানকে তার বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। দফায় দফায় চলে জিজ্ঞাসাবাদ। কখনও জেরা চলে কাটিগড়া থানায়, কখনও শিলচরে। আজ সন্ধ্যায় পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহ জানিয়েছেন, ‘‘না জেনে অসহায় লোককে কাজে রাখার কথা মোটেও ঠিক নয়। দু’জনে মিলেই তৈরি করছিল জঙ্গি নেটওয়ার্ক। কাছাড় থেকে রাজ্যের বরপেটা, ধুবুরিতে ঘুরে বেড়াত এরা। যেত পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদেও।

আজিজুরের পত্নী কুলসুম বেগম জানিয়েছেন, জবিরুলকে যখন স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ধরে নিয়ে যায়, আজিজুর তখন মুর্শিদাবাদ থেকেই ফিরছিল। ২১ তারিখে সে মুর্শিদাবাদে গিয়েছিল। ফেরে ২৫ সেপ্টেম্বর। এতে অবশ্য দোষের কিছুই দেখছেন না কুলসুম। কারণ তাঁদের দুই মেয়ে মুর্শিদাবাদের উমরপুরে ইসলামিক মেরিটরিয়ান স্কুলে পড়াশোনা করে। তাদের নিয়েই ২১ তারিখে মুর্শিদাবাদে গিয়েছিল আজিজুর।

আর বরপেটা? কুলসুমের দাবি, সে-ও ওই মেয়েদের পড়াশোনার সূত্রে। আবিদাকে প্রথমে বরপেটার জামিয়া ফাতিমা আল ইসলামিয়াতে ভর্তি করানো হয়েছিল। তিন বছর সেখানে পড়াশোনা করেছে সে। এর পর দু’জনকেই মুর্শিদাবাদে ভর্তি করানো হয়। আবিদার পড়াশোনার সূত্রেই বরপেটায় জবিরুল ইসলামের সঙ্গে তাঁদের পরিচয় বলে দাবি করেছেন কুলসুম। তাঁরা অবশ্য তাকে জমরুল নামেই জানতেন। তবে কেউই তাঁকে নাম ধরে ডাকতেন না। আজিজুরের বড় মেয়ে ফরিদা বলেন, ‘‘বাবা বরপেটা থেকেই তাকে ভাগ্নে বলে ডাকেন। মা-ও তাই। আমরা বলতাম ভাই।’’ তাঁরা জানান, সে সময় বরপেটায় ধর্মীয় গ্রন্থ, কবিরাজি ওষুধ বিক্রি করত জবিরুল। মাঝেমধ্যে কার্টুন ভরা বইপত্র নিয়ে হাজির হতো তাঁদের বাড়ি। একরাত থেকে পরদিন বই বিক্রি করতে চলে যেত। কখনও শুধুই কবিরাজি ওষুধ।

কুলসুমের কথায়, ‘‘এ ভাবেই ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ছ’-সাত মাস আগে তাকে আমাদের টায়ার মেরামতির দোকানে থেকে কাজ শিখতে বলা হয়।’’ গুমড়া পেট্রোল পাম্পের পাশে, করচুরায় বেশ ক’টি টায়ার মেরামতির দোকান। সেখানেই টায়ারের সব চেয়ে চালু ও বড় দোকানটি আজিজুর রহমানের। আজ দুপুরেও দোকান যথারীতি খোলা ছিল। টায়ার রি-সোলিংয়ের কাজ করছিলেন আর এক কর্মচারী, বরপেটার সেলিম আলি। দেড়মাস ধরে তিনি এখানে। জবিরুলের সঙ্গেই দোকান ঘরে পাশাপাশি বিছানায় ঘুমোতেন সেলিম। রান্না-খাওয়াও এক সঙ্গে হতো। সেলিমের কথায়, ‘‘এতদিন এখানে থাকলেও জবিরুল কাজ তেমন শেখেনি। টায়ার খোলা, হাওয়া দেওয়ার মতো সাধারণ কাজগুলিই করত। কখনও-সখনও আমাকে এটা-ওটা সাহায্য করত।’’

টায়ার মেরামতির কাজ না শিখলেও এলাকার মানুষ জবিরুলকে জানতেন আজিজুরের ম্যানেজার হিসেবেই। একই চেয়ারে বসতেন আজিজুর-জবিরুল। দোকানে যে কম্পিউটার রয়েছে, দু’জনেই সেটি চালাতেন। সেলিম আলির কথায়, তার কাছে কাজ শেখার কথা থাকলেও দোকানের হিসেবনিকাশ জবিরুলই দেখত। সুযোগ পেলেই ইসলামি বই পড়ত। নিয়মিত নমাজ পড়ত। তবে মসজিদে বেশি যেত না।

দোকান থেকে ১১ কিলোমিটার দূরে পাইকান গ্রামে বাড়ি আজিজুরের। প্রতিবেশী মাসুকুদ্দিন জানান, একই মোটরসাইকেলে ঘুরে বেড়াতেন আজিজুর-জবিরুল। আল হাদিসের প্রচারক ছিল তারা। এই এলাকায় তাদের মতের অনুসারী কেউ নেই। তাই পরিবারটি অনেকটাই একঘরে। প্রায়ই বাড়িতে লোকজন আসে বটে,

কিন্তু হাদিসপন্থীদের বৈঠক-কথাবার্তা বলে সবাই এড়িয়ে চলত ওই পরিবারটিকে। কাছাড়ের পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘আজিজুরও জবিরুলের চেয়ে কম নয়। জেএমবি-র লিঙ্কম্যান ছাড়াও আজিজুর সক্রিয় সদস্য।’’

এই সব শুনে বিস্মিত ‘রহমানিয়া টায়ার’ নামে দোকানটির আশপাশের লোকজন। পার্শ্ববর্তী হোটেলের রঞ্জিত দাস, হিলাল আহমেদরা বলেন, ‘‘ধর্মকর্ম নিয়ে যেন ব্যস্ত থাকত জবিরুল-আজিজুর। কারও সঙ্গে বাড়তি কোনও কথা বলত না।’’ একই সুর প্রবীণ মুদি দোকানি হোসেন আহমেদের। তিনি বলেন, ‘‘একেবারেই সাধারণ চালচলন ছিল।’’ দুই জেএমবি সদস্য গ্রেফতারের পর রাজবীর সিংয়ের অনুমান, ‘‘নেটওয়ার্কে এই জেলার আরও কেউ থাকতে পারে। তদন্ত চলছে।’’

প্রসঙ্গত, আজিজুর রহমান বেশ কিছুদিন সাহারা-র এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছিল। সম্প্রতি ইসলামিক ব্যাঙ্ক স্থাপনের চেষ্টা করছিলেন। সেই সূত্রে দেওবন্দ ঘুরে এসেছিলেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Azizur Rehman khagragarh incident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE