দেশের পিছিয়ে থাকা জেলাগুলির ভোলবদল করতে ডাকা নরেন্দ্র মোদীর বৈঠক এড়িয়ে গেল পশ্চিমবঙ্গ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগ দিল নবীন পট্টনায়কের ওডিশাও।
১১৫টি অনগ্রসর জেলাকে চিহ্নিত করে তার ভোলবদলের লক্ষ্য নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। এদের জেলাশাসকদের নিয়েই দিল্লিতে সম্মেলন ডেকেছিল নীতি আয়োগ। উন্নয়ন নিশ্চিত করতে প্রতিটি পিছিয়ে পড়া জেলার জন্য এক জন কেন্দ্রীয় অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যাঁদের বলা হচ্ছে ‘প্রভারি’। ওই অফিসার কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের যোগাযোগ রেখে কাজ করবেন।
পশ্চিমবঙ্গ সরকার অবশ্য এই সম্মেলন এড়িয়ে গিয়েছে। ১১৫-টির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যে পাঁচটি জেলা রয়েছে, সেগুলি হল— বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, মালদহ, নদিয়া ও দক্ষিণ দিনাজপুর। দারিদ্র, পরিকাঠামো, শিক্ষা আর স্বাস্থ্য— এই চার মাপকাঠিতে পিছিয়ে পড়া জেলার তালিকায় বীরভূম ও মুর্শিদাবাদ প্রথম দশে উঠে এসেছে।
কিন্তু এই জেলাগুলির জন্য এক জন কেন্দ্রীয় অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়াটা মোটেই ভাল চোখে দেখছে না মমতার সরকার। একে কেন্দ্রের নাক গলানো হিসেবেই দেখছে রাজ্য। ওডিশাও মনে করছে, কোন কোন জেলাকে চিহ্নিত করা হবে, সে বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা জরুরি ছিল। নীতি আয়োগের সিইও অমিতাভ কান্তের যুক্তি, পুরনো পরিসংখ্যান নয়, সাম্প্রতিক তথ্যের ভিত্তিতেই এই জেলাগুলিকে চিহ্নিত করা হয়েছে।
দিল্লির নতুন তৈরি অম্বেডকর ভবনে এই সম্মেলনের লক্ষ্যই ছিল, কেন্দ্রীয় অফিসারদের সঙ্গে রাজ্যের অফিসারদের ভাবনার মেলবন্ধন। আজকের সম্মেলনে মোদীও তাতেই গুরুত্ব দিয়েছেন। দাবি করেছেন, কোনও কিছুই তিনি উপর থেকে চাপিয়ে দিতে চান না। তার বদলে নিচুতলায় কাজ করা অফিসাররাই নতুন পথ তৈরি করবেন।
পুণেতে দলিতদের উপর হামলার ঘটনায় মোদী কেন নীরব, সেই প্রশ্ন উঠেছে। মোদী আজ অম্বেডকর ভবনে বাবাসাহেবের মূর্তিতে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। অম্বেডকর সারা জীবন সামাজিক ন্যায়ের কথা বলেছেন, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দলিতদের উপর হামলা নিয়ে মুখ খোলেননি। কিন্তু বাবাসাহেবের নীতির প্রতি আনুগত্য বোঝাতে তাঁর ১৪ এপ্রিলের জন্মদিনকেই প্রথম লক্ষ্য বেঁধেছেন। মোদী বলেন, ‘‘১৪ এপ্রিল বাবাসাহেবের জন্মদিবস। এই তিন মাস সব জেলার কাজে নজরদারি হবে। যে সব থেকে ভাল ফল করবে, আমি চাই, ওই দিন সেই জেলায় গিয়ে অফিসারদের সঙ্গে সময় কাটাতে, তাঁদের থেকে শিখতে।’’ মোদীর যুক্তি, নেতিবাচক মানসিকতা নিয়ে কাজ হয় না। সেই কারণেই অনগ্রসর জেলার বদলে এই ১১৫টি জেলাকে উন্নয়নকামী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। জেলাশাসকদের জন্য তাঁর মন্ত্র, ‘‘অফিসাররা এই সব জেলায় নিয়োগ হতে চান না। কিন্তু তাঁরা সুযোগ পেয়েছেন বলে খুশি হওয়া উচিত। দক্ষ অফিসাররা পিছিয়ে পড়া জেলা থেকেই উঠে এসেছেন।’’
সম্মেলনে অনেক অফিসারই জেলার ভোলবদলে গণ আন্দোলন গড়ে তোলার কথা বলেছেন। কিন্তু মোদীর মতে, ‘‘নেতিবাচক বিষয়ে গণ আন্দোলন শুরু করা সহজ। ইতিবাচক বিষয়ে কঠিন। কোর টিম তৈরি করে, ধাপে ধাপে, একের পর এক স্তরে ছড়িয়ে দিতে হয়।’’ এই ধরনের কাজ করার চ্যালেঞ্জ নিতে বলেন মোদী। তবে তাঁর মন্তব্য, ‘‘ছোটবেলার মাস্টারমশাইরা শিখিয়েছিলেন, পরীক্ষায় প্রথমে সোজা প্রশ্নের উত্তর লিখতে। সহজ খুঁজতে গিয়ে আমরা আর চ্যালেঞ্জে পৌঁছতেই পারি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy