দুর্ঘটনার পরে। বৃহস্পতিবার কটক স্টেশনের কাছে। ছবি: পিটিআই।
এক লাইনে একাধিক ট্রেন ঢুকে পড়ার ব্যাধি সারছে না রেলের। প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতির পরেও রোগ প্রশমনের পথ যে মিলছে না, তার প্রমাণ মিলল ব়ৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। একই লাইনে একটি মালগাড়ির পিছনে প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধাক্কা মারায় প্রাণ হারালেন দু’জন। আহত কমবেশি ২৫ জন। এই দুর্ঘটনা ঘটে কটক স্টেশনে ঢোকার মুখে একটি সেতুতে। তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু।
গভীর রাত পর্যন্ত দুর্ঘটনার কারণ স্পষ্ট নয়। রেলের অনুমান, সিগন্যালে গোলযোগ ছিল। প্যাসেঞ্জার ট্রেনটির চালক সিগন্যাল উপেক্ষা করে এগিয়ে গিয়েছিলেন কি না, ট্রেনটি ব্রেকফেল করেছিল কি না এবং ‘পয়েন্ট সেটিং’-এ ত্রুটি ছিল কি না— সবই যাচাই করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বছর ছয়েক আগে সাঁইথিয়ায় বনাঞ্চল এক্সপ্রেস ও উত্তরবঙ্গ এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ৬৬ যাত্রীর মৃত্যু হয়। গত অগস্টে কেরলের কারুকুট্টি স্টেশনে তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস ও ম্যাঙ্গালোর এক্সপ্রেস এক লাইনে চলে এসে মুখোমুখি দাঁড়িয়ে যাওয়ায় ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো গিয়েছিল।
প্রবীণ রেলকর্তাদের বক্তব্য, এক লাইনে দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি হওয়াটা নিশ্চয়ই বিস্ময়কর। তার থেকেও বিস্ময়কর এক লাইনে কোনও ট্রেনের পিছনে অন্য ট্রেনের ধাক্কা মারা। কারণ, আধুনিক প্রযুক্তিতে এমন ভাবে সিগন্যাল ও পয়েন্ট সেটিং হয় যে, বড় ধরনের গাফিলতি না-হলে এমন দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে না।
ঠিক কী ঘটেছে কটকে?
পূর্ব উপকূল রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ একটি মালগাড়ি যাচ্ছিল সেতু দিয়ে। তখনই প্যাসেঞ্জার ট্রেনটি এসে ধাক্কা মারে তার পিছনে। ট্রেনের দু’টি কামরা লাইনচ্যুত হয়ে উল্টে যায়। মারা যান দুই পুলিশকর্মী অমূল্য মহান্তি (৫০) ও রঞ্জিত দাশ (৩৫)। বিকট শব্দ এবং তীব্র ঝাঁকুনিতে আতঙ্কিত হয়ে চিত্কার করতে থাকেন যাত্রীরা। চার পাশের গ্রাম থেকে ছুটে আসেন বাসিন্দারা। ভুবনেশ্বর থেকে আসে অ্যাক্সিডেন্ট রিলিফ ট্রেন এবং মেডিক্যাল ভ্যান। হেল্পলাইন খোলা হয় কটক ও ভুবনেশ্বরে। তদন্ত করছেন পূর্ব উপকূল রেলের মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক।
দুর্ঘটনার পরে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের যাত্রীদের নামানো হয় সেতুর উপরে। বারাং স্টেশন থেকে দু’টি ই়ঞ্জিন আনা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কামরা দু’টি কেটে নয়া ইঞ্জিন জুড়ে রওনা করিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনটিকে। তার চালক, সহকারী চালক, গার্ড ও লোকো ইনস্পেক্টরকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ এবং আহতদের চিকিত্সার খরচ দেবে রেল।
এই দুর্ঘটনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে কলকাতা-পুরী এবং কলকাতা ও দক্ষিণ ভারতমুখী ট্রেন চলাচল। কলকাতা-পুরী রুটের বেশির ভাগ ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে। চেন্নাই-হাওড়া মেল, পুরী–শিয়ালদহ দুরন্ত, হাওড়া-পুরী শতাব্দী এক্সপ্রেস, পুরী-হরিদ্বার কলিঙ্গ উত্কল এক্সপ্রেস, চেন্নাই-হাওড়া এক্সপ্রেস প্রভৃতি ট্রেন থমকে যায়। রেল জানায়, বেশি রাতে আটকে থাকে বেশির ভাগ ট্রেনকেই বিভিন্ন স্টেশন দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আজ, শুক্রবার অনেক ট্রেনেরই হাওড়ায় পৌঁছতে কমবেশি দেরি হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy