মর্যাদার লড়াইয়ে ধাক্কা খেয়ে গেলেন যোগী আদিত্যনাথ। উত্তর প্রদেশের যে দুই লোকসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়েছিল, তার মধ্যে ফুলপুরে বসপা সমর্থিত সপা প্রার্থীর কাছে ৫৯ হাজারেরও বেশি ভোটে হেরে গিয়েছে বিজেপি। গোরক্ষপুরেও বিজেপি অনেকটাই পিছিয়ে। ভোট গ্রহণের দিনেও জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত ছিলেন যোগী। আজ কিন্তু উত্তরপ্রদেশের বিজেপি শিবির বিপর্যস্ত। পরাজয় স্বীকার করে নিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। বিহারের আরারিয়া লোকসভা কেন্দ্রেও পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি।
১৯৮৯ সাল থেকে একটানা বিজেপির দখলে ছিল গোরক্ষপুর লোকসভা কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে পর্যন্ত সেখানকার সাংসদ ছিলেন যোগী আদিত্যনাথ। পর পর পাঁচ বার গোরক্ষপুর কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়েছেন গোরক্ষপুর মঠের প্রধান। গোরক্ষপুরের সীমা ছাড়িয়ে যখন গোটা উত্তরপ্রদেশে রাজত্ব করছে মহন্ত আদিত্যনাথ যোগী, তখন গোরক্ষপুরেই যে এতটা ধাক্কা খাবে বিজেপি, বিরোধীরাও সম্ভবত তা আগে আশা করেননি।
১৯ রাউন্ড গোনা হয়েছে গোরক্ষপুরে। তাতে বসপা সমর্থিত সপা প্রার্থী প্রবীণকুমার নিষাদ ২৮,৭৩৭ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে গিয়েছেন। প্রবীণকুমারের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত গিয়েছে ২ লক্ষ ৯৩ হাজার ১৫৩ ভোট। আর তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দী বিজেপির উপেন্দ্র দত্ত শুক্লের ঝুলিতে এখনও পর্যন্ত পড়েছে ২ লক্ষ ৬৪ হাজার ৪১৬টি ভোট।
আরও পড়ুন: সনিয়ার নৈশভোজে একজোট বিরোধীরা
উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে কেশবপ্রসাদ মৌর্যও পদত্যাগ করেছিলেন ফুলপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে। ফুলপুরে বিজেপির কৌশলেন্দ্র সিংহ ৫৯ হাজার ৬১৩ ভোটে হারিয়ে দিয়েছেন বসপা সমর্থিত সপা প্রার্থী নগেন্দ্রপ্রতাপ সিংহ পটেল।রাজনৈতিক মতপার্থক্য কাটিয়ে বিজেপিকে মোকাবিলার জন্য সপা প্রার্থীদের সমর্থন করেছিন বসপা। অন্য দিকে, একা লড়াই করেছিল কংগ্রেস।দুই আসনে কংগ্রেসের জামানত জব্দ হয়েছে।
বিহারের ছবিটাও বিজেপির জন্য খুব আশাব্যঞ্জক নয়। আরারিয়া লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি শুরুতে এগিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লালুর দল আরজেডি বরাবরই শক্তিশালী ওই এলাকায়। আরজেডি সাংসদের মৃত্যুতেই আসনটিতে উপনির্বাচন হয়েছে। বেলা বাড়তেই নিজেদের গড় পুনরুদ্ধার করার পথে আরজেডি।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আরজেডি প্রার্থী ২৩ হাজারেরও বেশি ভোটে এগিয়ে রয়েছেন আরারিয়াতে। ৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ৫০টি ভোট পেয়েছেন আরজেডি-র প্রার্থী। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি এখনও পর্যন্ত পেয়েছে ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৮৬৩ ভোট।
বিহারে ২টি বিধানসভা কেন্দ্রেও উপনির্বাচনের ভোট গণনা শেষ হয়েছে। ভাবুয়া কেন্দ্রে জয়ী হয়েছেন বিজেপি প্রার্থী। জহানাবাদ দখলে রেখেছে আরজেডি। বিহার এবং উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিরোধীদের ফল ভাল হওয়ায় অখিলেশ যাদব, মায়াবতী এবং লালু প্রসাদ যাদবকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। টুইট করেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধীও। তিনি বলেছেন, মানুষের মধ্যে যে বিজেপি বিরোধিতা প্রবল, তা এই ভোটের ফলের মধ্যে দিয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
যোগী আদিত্যানাথের খাসতালুক গোরক্ষপুরে কিন্তু ভোট গণনাকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা দেখা দেয। যেখানে গণনা চলছে, নজিরবিহীন ভাবে প্রথমে তার কাছাকাছি পৌঁছতে দেওয়া হয়নি সংবাদমাধ্যমকে। নির্বাচন কমিশনের দেওয়া বৈধ কার্ড থাকা সত্ত্বেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের আটকে দেওয়া হয় গণনার টেবিলের ১৫ ফুট আগে। কালো কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় গণনাকেন্দ্র। গোরক্ষপুরের জেলাশাসক রাজীব রৌতেলা নিজে গণনাকেন্দ্রে যান এবং মিডিয়াকে গণনা সংক্রান্ত তথ্য দেওয়া বন্ধ করার নির্দেশ দেন বলে অভিযোগ।
গোরক্ষপুরের ঘটনা নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে সংসদ। বিরোধী সাংসদরা শাসক বেঞ্চকে লক্ষ্য করে ‘শেম-শেম’ স্লোগান দিতে থাকেন। বিরোধীদের তুমুল বিক্ষোভে মুলতুবি হয়ে যায় উত্তরপ্রদেশ বিধানসভাও। পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে ভোট গণনার টেবিলের কাছাকাছি পৌঁছতে দেওয়া হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy