আম্মাহীন তামিলনাড়ু। ছবি: পিটিআই।
কী হবে তাঁর পর— এই নিয়ে অঙ্ক কষা চলছিলই। জয়ললিতার মৃত্যুসংবাদ পাওয়ার পরে সেই জল্পনা তুঙ্গে উঠল রাজধানীর রাজনীতিতে। বিজেপি-কংগ্রেস, দু’পক্ষই চায় আম্মার দলের সঙ্গে জুড়ে থাকতে। কারণ, শুধু তামিলনাড়ুর সরকারই নয়, লোকসভায় ৩৭ জন সদস্যও এডিএমকের। রাজ্যসভাতেও ১৩ জন সাংসদ রয়েছে তাদের।
জয়ার দল এত দিন এনডিএ-র কাছাকাছি ছিল। তাই লোকসভায় ডেপুটি স্পিকারের পদ কংগ্রেসকে না ছেড়ে জয়ললিতার দলের হাতেই তুলে দিয়েছিল বিজেপি। কিন্তু নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের পরে পরিস্থিতি কিছুটা ঘুরে গিয়েছে। বিরোধী শিবিরে বার্তা দিতে শুরু করেছে এডিএমকে। নোট বাতিল নিয়ে সংসদে বিরোধীদের ধর্নাতেও হাজির হয়েছিল তারা। নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়ে রাহুল গাঁধী, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়রা আঞ্চলিক দলগুলিকে কাছে টানতে শুরু করেছেন। এ নিয়ে চিন্তায় রয়েছে মোদী সরকার। ফলে জয়ার অসুস্থতার পর্বেই তাঁর পাশে দাঁড়াতে উঠেপড়ে লেগেছিল মোদী শিবির। এডিএমকে নেত্রীর চিকিৎসার জন্য এইমসের ৪ জন চিকিৎসকের একটি দলকে এ দিন চেন্নাইয়ে পাঠান কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জে পি নড্ডা। এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনী তৈরি। রাজ্য সরকার চাইলে দ্রুত পৌঁছে যাবে।
রাজ্যপাল ও তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কাল রাত থেকেই পরিস্থিতির উপরে কড়া নজর রাখছিল মোদী সরকার। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডুকেও চেন্নাইয়ে পাঠান মোদী। জয়ার চিকিৎসার ব্যাপারে অ্যাপোলো ও এইমসের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেন বেঙ্কাইয়া। তার পরে বৈঠক করেন এডিএমকে-র শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে। জয়ার স্বাস্থ্য ও রাজ্যের পরিস্থিতির কথা জানান মোদীকে। জয়ার মৃত্যুর পরে রাতেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন পনীরসেলভম। কী ভাবে তাঁকে শিবিরে টানা যাবে, বিজেপি শিবিরে শুরু হয়েছে সেই ভাবনা।
রাজ্যের সরকার ও দিল্লিতে এত জন সাংসদ নিয়ে কোন দিকে ঝুঁকবেন পনীরসেলভম— সে দিকে নজর রাখছে কংগ্রেসও। জয়ার অসুস্থতার পর্বেই তাঁর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। কংগ্রেস সূত্রের খবর, গুলাম নবি আজাদের মতো নেতারা আজ দিনভরই এডিএমকের সাংসদদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন।
জয়ললিতা থাকা কালে তাঁর দল যে কোন শিবিরের সঙ্গেই গাঁটছড়া বাঁধবে, তা নিশ্চিত করে বুঝে ফেলার সাধ্য ছিল না তাবড় রাজনীতিকদেরও। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারকে সমর্থন করে পরে কম বেগ দেননি জয়া। দিল্লির অনেকেরই আজ ১৯৯৯ সালের মার্চের কথা মনে পড়ছে। বাজপেয়ী সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে নৈশভোজে মিলিত হয়েছিলেন এডিএমকে নেত্রী। দিল্লির অশোক হোটেলে সেই নৈশভোজ কার্যত ছিল অটল সরকারকে কাঁপিয়ে দিতেই। রসিকতা করে জয়া যাকে আখ্যা দিয়েছিলেন ‘রাজনৈতিক ভূমিকম্প’। মোদী সরকার আসা ইস্তক সেই জয়ার দলকেই খুশি করতে চেয়েছে এনডিএ। লোকসভার ডেপুটি স্পিকারের পদটি সাধারণত বিরোধীদের দেওয়া হয়। সেটি কংগ্রেসের বদলে দেওয়ায় হয় এডিএমকে-কে। অসুস্থ জয়ললিতাকে দেখতেও দফায় দফায় চেন্নাইয়ে ছুটেছেন বিজেপি নেতারা। কিন্তু নোট বাতিলের পর থেকেই অন্য সুরে বাজতে শুরু করেছিল আম্মার দল। আসলে বরাবরই দিল্লির দুই প্রধান দল বা শাসক জোটের সঙ্গে দর কষাকষির রাজনীতিই করে গিয়েছেন জয়লিলতা। সে ভাবেই অভ্যস্ত তাঁর দলের নেতারাও।
ফলে এখনই অঙ্ক মেলাতে পারছে না বিজেপি বা কংগ্রেস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy