যৌন-কেলেঙ্কারিতে দলের সাংসদের নাম আসার পরেও তাঁকে বাঁচাতে সামনে আসছে না বিজেপি। বরং বরুণ গাঁধী যে ভাবে নিজেকে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুখ হিসেবে তুলে ধরে প্রচার করছিলেন, এ বারে তিনি রণে ভঙ্গ দেবেন বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
গতকালই অরবিন্দ কেজরীবালের দলের দুই প্রাক্তন নেতা প্রশান্ত ভূষণ ও যোগেন্দ্র যাদব দিল্লিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে অভিযোগ করেন, বিজেপির সাংসদ বিদেশি যৌনকর্মীদের ফাঁদে পা দিয়ে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত গোপন তথ্য অস্ত্র ব্যবসায়ীর দালালের হাতে পাচার করেছেন। এর সত্যতা অবশ্য সরাসরি খারিজ করেছেন বরুণ। এমনকী ফৌজদারি মানহানি মামলা করারও হুমকি দিয়েছেন। কিন্তু বরুণের দল বিজেপির এই অভিযোগে কোনও গা নেই। দলের এক শীর্ষ নেতা আজ বলেন, ‘‘বরুণ কোথায় কী করেছেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। এ ব্যাপারে দলের কী করণীয় আছে?’’
কিন্তু শুধু বরুণ নন, প্রশান্ত ভূষণরা বরুণকে আড়াল করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছেন। তাঁদের মতে, এ সব তথ্য অভিযুক্ত দালাল অভিষেক বর্মার প্রাক্তন সহযোগী আইনজীবী এডমন্ড অ্যালেন গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীকেও চিঠি লিখে জানিয়েছেন। তার পরেও প্রধানমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপ করেননি। বিজেপির বক্তব্য, যৌন-কেলেঙ্কারি আর প্রতিরক্ষার তথ্য ফাঁসের অভিযোগের ঘটনা ঘটেছে ইউপিএ আমলে। তখন প্রধানমন্ত্রীও ক্ষমতায় আসেননি। ফলে ইউপিএ আমলে কী ঘটেছে, তা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী কেন বিচলিত হতে যাবেন?
বিজেপি আসলে গোটা ঘটনায় শাপে বরই দেখছে। দলের এক নেতা রসিকতা করে বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে এত দিন ধরে বরুণ গাঁধী নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরে দলের নেতৃত্বের উপর চাপ বাড়ানো শুরু করেছিলেন। নিজেই সমীক্ষা করিয়ে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর দৌড়ে সব থেকে এগিয়ে আছেন বলে দাবি করছিলেন। ইলাহাবাদে দলের কর্মসমিতির বৈঠকে শহর জুড়ে তাঁর নিজের পোস্টারে ছয়লাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। তখনও দল এটি ভাল চোখে নেয়নি। এ বারে অন্তত নৈতিকতার স্বার্থে তাঁর উচিত নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তুলে ধরা বন্ধ করা।’’
গতকাল প্রশান্ত ভূষণদের সাংবাদিক সম্মেলনের পরেই রাজধানীর অলিন্দে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, বরুণের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ ওঠানোর পিছনে বিজেপিরই কারও হাত নেই তো? নরেন্দ্র মোদী-অরুণ জেটলির ঘোরতর বিরোধী অরবিন্দ কেজরীবালের সঙ্গত্যাগ করার পর এখন প্রশান্ত ভূষণরাও ‘শত্রুর শত্রু বন্ধু’ নয় তো? তার উপর প্রশান্ত ভূষণদের সঙ্গে বিজেপির কিছু শীর্ষ নেতার যোগাযোগও সুবিদিত। কারণ, গত ক’দিন ধরেই বরুণ গাঁধী নিজের কেন্দ্র সুলতানপুরে কী ভাবে ধনীদের অনুদান নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্যোগে গরিবদের সাহায্য করছেন, তা ফলাও করে সংবাদমাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। বরুণের এই দলছুট উদ্যোগও ভাল চোখে নেননি বিজেপি নেতৃত্ব। দলের নেতারা মনে করছেন, বিজেপি শেষ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী বাছাই করুক বা না করুক, অন্তত ভোটমুখী সে রাজ্যে বরুণের ‘বাড়াবাড়ি’ বন্ধ হবে।
একসময় প্রয়াত প্রমোদ মহাজন বরুণকে বিজেপিতে নিয়ে এসেছিলেন কংগ্রেসের রাহুল গাঁধীর বিরুদ্ধে টক্কর দিতে। কিন্তু বরুণ গোড়াতেই স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, তিনি কংগ্রেসের গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য করবেন না। বিজেপিতে এসেও বরুণ বরং সুসম্পর্ক বজায় রেখে এসেছেন সনিয়া, রাহুল, বিশেষ করে প্রিয়ঙ্কার সঙ্গে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘দল তাঁকে সাধারণ সম্পাদকও করেছিল। কিন্তু গাঁধী পরিবারের স্বভাব ও ঔদ্ধত্য পরিত্যাগ করতে পারেননি বরুণ। আজ কংগ্রেসে রাহুলের যে দশা, বরুণেরও সেই একই হাল। বরুণের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেটি তাঁকেই সামাল দিতে হবে। উত্তরপ্রদেশের সাধারণ মানুষও জানেন, এই অভিযোগ উঠেছে এক গাঁধীর বিরুদ্ধে। বিজেপির বিরুদ্ধে নয়।’’
আরও পড়ুন: বিদেশি যৌনকর্মীদের ফাঁদে পা দিয়ে তথ্য পাচার করেছেন বরুণ গাঁধী?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy