মোদী সরকারের দু’বছরের উৎসবের ফাঁকেই মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনার ব্যাপারে আলোচনা শুরু হয়ে গেল সঙ্ঘ-বিজেপিতে।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের খবর, খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শিবরাজকে কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রকের দায়িত্বে আনতে চাইছেন। কৃষিক্ষেত্রের উপরে অনেক দিন ধরেই জোর দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বর্তমানে এই মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী রাধামোহন সিংহের কাজে তেমন সন্তুষ্ট নন তিনি। এক বার মন্ত্রীদের বৈঠকে সকলের সামনেই রাধামোহনকে তিনি বলেন, ‘‘নিজের মন্ত্রক সম্পর্কে আপনি নিজে অবগত না থাকলে বাকিদের কী বোঝাবেন?’’ মোদী চাইছেন, শিবরাজ সিংহ চৌহানের মতো কোনও ব্যক্তিকে এই মন্ত্রকে এনে সরকারের আগামী তিন বছরে দেশের কৃষির হাল আমূল বদলে ফেলতে। দেশের সিংহভাগ লোক এই কৃষিকাজের সঙ্গেই জড়িত। শিবরাজকে আনলে মন্ত্রকের ওজনও আরও বাড়বে।
অতীতেও মনোহর পর্রীকরকে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিইয়ে তিনি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী করেছেন। সঙ্ঘেরও তাতে সায় ছিল। কিন্তু শিবরাজকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আনার অর্থ হল, মধ্যপ্রদেশ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া। সে কারণে শিবরাজ এখনও এই প্রস্তাবে সম্মতি দেননি। তাঁর ভাবমূর্তিতে সওয়ার হয়েই তিন তিন বার রাজ্য জয় করেছে বিজেপি। এ বারে তাঁকে সেখান থেকে সরিয়ে দেওয়ার ঘটনা আদৌ ভালো চোখে দেখছেন না শিবরাজ অনুগামীরা। লোকসভা নির্বাচনের আগে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা এই শিবরাজ সিংহ চৌহানকেই নরেন্দ্র মোদীর তুলনায় এগিয়ে রাখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাজি মারেন মোদীই। এ বারে সেই মোদীরই অধীনে শিবারাজের মন্ত্রী হওয়ার প্রস্তাব দলের অনেকেরই না-পসন্দ।
বিজেপি সূত্রের মতে, সঙ্ঘের সঙ্গেও এই নিয়ে একপ্রস্থ আলোচনা হয়ে গিয়েছে। শিবরাজ দিল্লিতে মন্ত্রী হলে কাকে মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা শুরু হয়েছে। আপাতত মোদী সরকারের সামাজিক ন্যায়মন্ত্রী থাওরচন্দ্র গহলৌত কিংবা ইস্পাত-খনি মন্ত্রী নরেন্দ্র সিংহ তোমরের নাম এই পদের জন্য ভাবা হচ্ছে। থাওরচন্দ্র দলিত মুখ, আর তোমর রাজপুত। আলোচনায় শেষ পর্যন্ত যদি শিবরাজের দিল্লি আগমন বাস্তবায়িত হয়, তা হলে সব দিক বিচার করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন হবে ২০১৮ সালে। দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন, শিবরাজের ব্যক্তিগত ক্যারিশমা থাকলেও সে রাজ্যে সাংগঠনিক দিক থেকে কংগ্রেস দুর্বল। ফলে মুখ্যমন্ত্রী বদল হলেও রাজ্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই।
বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ আজ বলেছেন, ‘‘মন্ত্রিসভার রদবদল হবে। তবে কবে হবে, সেটি এখনও স্থির হয়নি।’’ বিজেপি নেতৃত্বের মতে, সরকার ও দলের রদবদল এখন পরবর্তী বিধানসভা নির্বাচন এবং লোকসভা ভোটের কৌশলের নিরিখেই হবে। সর্বানন্দ সোনোয়াল অসমের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার রদবদল অবশ্যম্ভাবী। গুজরাতের ভোটের আগে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেনকে সরিয়ে তাঁকে রাজ্যপাল বানানোর সিদ্ধান্তও প্রায় পাকা। দিল্লির প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বি এস বাসসিকেও উত্তরাখণ্ডের রাজ্যপাল করার জল্পনা জোরদার। দলের শীর্ষ সূত্রের মতে, মোদী সরকারের দু’বছর উপলক্ষে কর্মসূচি শেষ হলেই সরকার ও দলে সামগ্রিক রদবদলের কাজে হাত দেওয়া হবে। উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনকে মাথায় রেখে সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কৃষক মুখ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকেও ব্যবহার করা হবে। গতকাল সহারনপুরের সভাতেও মোদী রাজনাথকে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু অমিত শাহ বলেন, ‘‘উত্তরপ্রদেশে রাজনাথ সিংহকে ব্যবহার করা হলেও মুখ হিসেবে তুলে ধরা হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy