উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির ইস্যুটি সুকৌশলে উস্কে দিল মোদী সরকার।
এই প্রথম অভিন্ন দেওয়ানি বিধির মতো রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয়ে নড়াচড়া শুরু করল মোদী সরকার। অভিন্ন দেওয়ানি বিধির অর্থ, ভারতের সব নাগরিকের জন্য সমান আইন। এখন হিন্দু ও মুসলমানদের জন্য ভিন্ন পার্সোনাল আইন রয়েছে। ফলে এই নিয়ে কোনও রকম বিতর্ক ধর্মনিরপেক্ষতার নিরিখে দেখা হয়। কেন্দ্রের আইনমন্ত্রী সদানন্দ গৌড়া আজ বলেন, ‘‘বিজেপির ইস্তেহারে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। এ বারে সরকার সেই অ্যাজেন্ডাটি গ্রহণ করবে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য ল’ কমিশনের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। ল’ কমিশন সব রাজনৈতিক দল ও অংশীদারদের সঙ্গে কথা বলে সরকারের কাছে রিপোর্ট পেশ করবে।’’
যদিও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আলোচনা এই প্রথম নয়। অতীতেও এই বিষয়টি ল’ কমিশন পর্যালোচনা করেছে। রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যেও বিতর্ক হয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটের মুখে বিষয়টিকে সামনে এনে বিতর্ক তৈরি করার চেষ্টার পিছনে অন্য অভিসন্ধিরই গন্ধ পাচ্ছে বিরোধীরা। কংগ্রেসের মুখপাত্র অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি বলেন, যখনই কোনও বড় নির্বাচন সামনে আসে, সেই সময় বিজেপি এমন সব বিষয় সামনে নিয়ে আসে, যা দিয়ে বিভাজনের রাজনীতি করা যায়। কখনও অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, কখনও ধারা ৩৭০ কিংবা রামমন্দিরের ইস্যু নিয়ে আসবে তারা। আজও বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী টুইটে রামমন্দির ইস্যু নিয়ে সরব হয়েছেন। কংগ্রেসের মতে, ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই এ ধরনের ইস্যু নিয়ে আরও সোচ্চার হবে বিজেপি। যদি অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে আন্তরিক হত তা হলে ঐকমত্য রচনার জন্য তারা সব রাজনৈতিক দল ও অন্য অংশীদারদের নিয়ে আলোচনায় বসত। তা না করে শুধু ভোটের রাজনীতিই করছে।
সদানন্দ গৌড়া অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সংসদে ও সংসদের বাইরে অনেকেই অভিন্ন দেওয়ানি বিধি চালুর কথা বলেন। এই পরিস্থিতিতে সরকার খতিয়ে দেখতে চায়, এটি কী ভাবে সম্ভব? এর পথে বাধাগুলি কোথায়? এর পিছনে কোনও রাজনীতি নেই। গোটা দেশে হাজারের বেশি পার্সোনাল ল’ রয়েছে। এক এক রাজ্যে এক এক রকম নিয়ম। ফলে সকলের সঙ্গে কথা না বললে বাস্তব পরিস্থিতি বোঝা যাবে না। ল’ কমিশনকে তাই সকলের সঙ্গে কথা বলে সে সবই খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।
তবে সরকার কী চায়, তার একটি ইঙ্গিত দিয়েছেন সংসদীয় মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তাঁর মতে, ‘‘সরকার কোনও কিছুই কারও উপর চাপিয়ে দিতে চাইছে না। এই বিষয়ে একটি সামগ্রিক ঐকমত্য হলেই সরকার এগোবে। ব্যক্তিগত ভাবে আমার মত, বিবাহ, বিবাহবিচ্ছেদ, উত্তরাধিকার, সম্পত্তির অধিকারের মতো বিষয়গুলি সমান হওয়া উচিত। এর বাইরে প্রার্থনার পথ কী ভাবে হবে, সেটি ব্যক্তির উপরে ছেড়ে দেওয়া উচিত। ‘অভিন্ন’ দেওয়ানি বিধি না বলে আমি ‘সমান’ দেওয়ানি বিধি বলতে চাই। এটি কোনও ধর্মের বিরুদ্ধে নয়।’’
কিন্তু মুখে এ কথা বললেও এই বিতর্ক সামনে নিয়ে আসার ‘সময়’ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। মাস কয়েক আগে তিন বার ‘তালাক’ বললেই বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে বিতর্ক দানা বেধেছিল। ‘রাষ্ট্রবাদী মুসলিম মহিলা সঙ্ঘ’-এর সমীক্ষায় দেখা গিয়েছিল, এ দেশের ৯২ শতাংশ মুসলিম মহিলাই তিন বার তালাকে বিবাহবিচ্ছেদের বিপক্ষে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চের সামনে এই সংস্থা অভিযোগ করে, শরিয়ত আদালত কড়া বিধি আরোপ করছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড সেই সময় জানিয়ে দিয়েছিল, তিন বার তালাক বললে বিবাহ বিচ্ছেদই ধরা হবে। এই প্রথার কোনও বদল হবে না। ভারতের সুপ্রিম কোর্টেরও কোনও অধিকার নেই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার। পার্সোনাল ল’ বোর্ড তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছিল, আসলে মোদী সরকার অভিন্ন দেওয়ানি বিধি কার্যকর করার লক্ষ্যে তিন বার তালাকে বিবাহবিচ্ছেদের প্রথা বিলোপের চেষ্টা করছে।
কেন্দ্রের সংখ্যালঘু মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী মোখতার আব্বাস নকভি বলেন, শরিয়ত আইন সংখ্যালঘুদের সম্ভ্রান্ত পরিবার খুব একটি মানেন না। সরকারি সংখ্যালঘু কর্মচারীদের বিবাহবিচ্ছেদ করতে হলেও দেশের আইন মেনেই করতে হয়। যত উন্নয়নে সকলে সামিল হবেন, ততই সকলে মূলস্রোতে ফিরে আসবেন। ফলে এই নিয়ে আলোচনা হওয়া ভাল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy