Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘সিংহী’ সনিয়া, অগুস্তায় হুঙ্কার মোদীর

কংগ্রেসের ‘সিংহগর্জন’-এর বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি হুঙ্কার নরেন্দ্র মোদীর! প্রসঙ্গ হেলিকপ্টার ঘুষ-কাণ্ড। কিছু দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর যখন অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, টুইটারে তাঁর বক্তব্যের ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজে তখন মুখ খোলেননি এ নিয়ে। এই ক’দিন সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণের ভারটা সামলেছেন দল ও শিবিরের অন্য নেতারা।

গ্রেফতার বরণের আগে মনমোহন-সনিয়া। ছবি: পিটিআই।

গ্রেফতার বরণের আগে মনমোহন-সনিয়া। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৬ ০৩:৩৯
Share: Save:

কংগ্রেসের ‘সিংহগর্জন’-এর বিরুদ্ধে এ বার সরাসরি হুঙ্কার নরেন্দ্র মোদীর! প্রসঙ্গ হেলিকপ্টার ঘুষ-কাণ্ড।

কিছু দিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর যখন অগুস্তাওয়েস্টল্যান্ড কপ্টার দুর্নীতি নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, টুইটারে তাঁর বক্তব্যের ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজে তখন মুখ খোলেননি এ নিয়ে। এই ক’দিন সনিয়া গাঁধীকে আক্রমণের ভারটা সামলেছেন দল ও শিবিরের অন্য নেতারা। কিন্তু সনিয়া নিজে পথে নামতেই হেলিকপ্টার দুর্নীতি নিয়ে আক্রমণের মুখ হয়ে উঠলেন খোদ মোদীই। তামিলনাড়ুতে ভোটসভায় দাঁড়িয়ে জনতার কাছে প্রশ্ন রাখলেন, হেলিকপ্টার চুক্তিতে যারা চুরি করেছে তাদের শাস্তি হওয়া উচিত কি না। এই সূত্রে সনিয়ার ইতালি-যোগের কথাও টেনে আনেন মোদী।

শাসক শিবিরের আক্রমণ মোকাবিলায় সনিয়া এ দিন সকাল থেকেই তাঁর পুরনো ঝাঁঝে আক্রমণ শানিয়েছেন মোহন ভাগবত ও মোদীর বিরুদ্ধে। যন্তর-মন্তর তাতিয়েছেন গণতন্ত্র বাঁচানোর ডাক দিয়ে। ছেলে রাহুল ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে নিয়ে গ্রেফতারও বরণ করেছেন। সংসদেও কংগ্রেস শিবির তাঁকে তুলে ধরে ‘সিংহী’ হিসেবে।

রাজপথে কংগ্রেস সভানেত্রীর এই ‘সিংহগর্জন’-এর জবাব এল দু’ভাবে। সংসদে মাপা ভাষা, ঠান্ডা গলায় তির ছুড়লেন পর্রীকর। সন্ধেয় দক্ষিণের প্রচারসভায় মোদী আক্রমণ শানালেন তাঁর নিজস্ব ঘরানায়। বললেন, ‘‘আমি তো ইতালি দেখিনি। আমরা ইতালির কাউকে জানিও না। ইতালির কারও সঙ্গে দেখাও হয়নি। সে দেশের মানুষ যদি কাউকে অপরাধী সাব্যস্ত করে, তবে আমরা কী করতে পারি!’’ অনুবাদক তামিলে এর অনুবাদ শেষ করতেই এ বার কটাক্ষ নয়, সরাসরি প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর, ‘‘এই হেলিকপ্টার চুক্তিতে যারা চুরি করেছে, তাদের শাস্তি হওয়া উচিত কি উচিত নয়?

প্রশ্ন করে সভা তাতানোর ধাত নয় পর্রীকরের। সংসদে আজ শীতল কণ্ঠে ওজনদার তিরটি ছুড়েছেন প্রত্যয়ী প্রতিরক্ষামন্ত্রী। বলেছেন, ‘‘কচু যে খায়, তারই গলা চুলকোয়। প্রাক্তন বায়ুসেনাপ্রধান তো চুনোপুটি। কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে রাঘববোয়ালকেই ধরতে চাইছে সরকার। বফর্সে যা করা যায়নি, এই ক্ষেত্রে সেটা হবে।’’

ভিভিআইপি কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে ইতালি আদালতের রায় আসার পর একটি বিষয় স্পষ্ট, ঘুষ দেওয়া হয়েছে। বিজেপির অভিযোগ, ঘুষের টাকা পৌঁছেছে গাঁধী পরিবারে। কংগ্রেসের

দাবি, তাদের কোনও নেতা ঘুষ নেননি। প্রমাণ ছাড়া সনিয়াকে দুষছে বিজেপি। সনিয়ার বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে যে প্রমাণ নেই, তা কবুল করছে সরকারও। বিজেপির তবু দাবি, পারিপার্শ্বিক প্রমাণেই স্পষ্ট ঘুষ পৌছেছে দশ জনপথে। শুধু প্রমাণের অপেক্ষা।

বিজেপির আক্রমণ ঠেকাতে আজ দিল্লির পথে যুদ্ধের মেজাজে নামেন সনিয়া। বলেন, ‘‘নাগপুরের ইশারাতেই চলছে মোদী সরকার। প্রাণ থাকতে তাদের বিপজ্জনক চেষ্টা সফল হতে দেব না। ভয় দেখিয়ে বা বদনাম করে নিরস্ত করা যাবে না। জীবনে আমি শুধু লড়াই করতে শিখেছি। রাষ্ট্রদ্রোহী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন কিছু নয়। মোদীর দিন পুরো হয়ে গিয়েছে। জল মাথার উপর দিয়ে বইলে ভারতের মানুষ জবাব দিতে জানে।’’

বিজেপি-আরএসএসের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের তাতিয়ে দিতে ওই ঝাঁঝালো বক্তৃতার পাশাপাশি মনমোহন, রাহুলকে নিয়ে ১৪৪ ধারা অমান্য করে গ্রেফতারও বরণ করেন সনিয়া। কিছু পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে মোদী সরকার যে ভাবে এগোচ্ছে, তার বিরুদ্ধে বড়সড় আন্দোলনের ভিতটি আজ পুঁতে রাখলেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাঁর দল মোদীর বিরুদ্ধে গুজরাতের গ্যাস দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির দ্বারস্থ হবে এ বার।

মোদী, অমিত শাহরা জানেন, ইট মারলে পাটকেলটিও খেতে হবে। তাই আটঘাট বেধেই নেমেছেন তাঁরা। লোকসভায় আজ তাই সনিয়া-রাহুলের সামনেই কপ্টার-দুর্নীতি নিয়ে আলোচনায় একের পর এক বাণ ছোড়া হয়। বিজেপির এক সাংসদ বিদ্রুপ করে বলেন, ‘‘ত্যাগী আর ত্যাগের দেবীর তদন্ত হোক। কংগ্রেসের কোন নেতা কপ্টার-সংস্থার দালালের সঙ্গে দেখা করেছেন, তা-ও খতিয়ে দেখুক সরকার।’’ বিজেপির আর এক সাংসদ নিশিকান্ত দুবে সুকৌশলে সনিয়ার নামও টেনে আনেন। বলেন, ‘‘এটা আমাদের সকলের লজ্জার বিষয়— কংগ্রেস সভানেত্রীর নাম কেন এই ঘুষ-কাণ্ডে আসবে?’’

কংগ্রেসের তরফে জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া দলনেত্রীকে আড়াল করতে কপ্টার-চুক্তির যাবতীয় দায় অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানার উপরে চাপিয়ে দেন। বলেন, ‘‘সনিয়া গাঁধী সিংহী। বিজেপি তাই তাঁকে ভয় পায়। ইতালির আদালতে সনিয়া গাঁধীর নাম নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে।’’ দলের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়, এ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত হোক। সরকার দাবি না মানায় সভাকক্ষ ত্যাগ করে কংগ্রেস।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী এর পর কংগ্রেস-শূন্য লোকসভাতেই যা বললেন, তাতেই সরকারের মনোভাব স্পষ্ট হয়ে যায়। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিও ঠায় পাহারাদারের মতো বসে থাকেন গোটা বিতর্কে। পর্রীকর বলেন, ‘‘প্রাক্তন বায়ুসেনাপ্রধান এস পি ত্যাগী অবসর নিয়েছেন ২০০৭ সালে। আর চুক্তি হয়েছে ২০১০ সালে। ত্যাগী এই চুক্তিতে সহায়কের কাজ করেছেন। ফলে বড়জোর কিছু খুচরো পয়সা পেয়ে থাকতে পারেন তিনি। এই ফাইল আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ারও চেষ্টা হয়েছে। তারও সিবিআই তদন্ত হবে। কংগ্রেসের আসল রাঘববোয়ালটি কে, তদন্তে সেটিই খোঁজা হচ্ছে। আর গাঁধী-বিরোধী বিজেপির নব্য সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী বলেন, ‘‘কংগ্রেস যদি সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে তদন্ত চায়, তাহলে তারা আদালতে যাক। আদালতে তারাই বকুনি খাবে। তাদের আমলেই তা সিবিআই তদন্ত শুরু হয়েছে। তখন থেকেই কেন তা আদালতের নজরদারিতে হয়নি?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE