বাজেটের আগেই স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন চিঠি দেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলিকে। অনুরোধ জানিয়েছিলেন, সিগারেটের উপরে কর অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া হোক। তাতে ধূমপায়ীর সংখ্যা কিছুটা হলেও কমবে।
বৃহস্পতিবার সাধারণ বাজেটে সিগারেটের দাম এক লাফে বেড়ে যাওয়ার কথা শুনে চিকিৎসক মহল খুবই খুশি। সিগারেটে উৎপাদন শুল্ক বেড়েছে ১১ থেকে ৭২ শতাংশ। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সিগারেটের দাম অনেকেরই নাগালের বাইরে থাকবে। ৬৫ মিলিমিটার পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের সিগারেটের ক্ষেত্রে শুল্ক বাড়ছে ৭২ শতাংশ।
তার বেশি দৈর্ঘ্যের সিগারেটের ক্ষেত্রে বাড়ছে ১১ থেকে ২১ শতাংশ। দাম বাড়ছে সিগার, চুরুট, পান মশলা, গুটখারও। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর কথায়, “আমার আশা অন্তত স্বাস্থ্যের কথা ভেবে এই পদক্ষেপকে সকলেই সমর্থন করবেন।”
এ দিন বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন সন্তোষ প্রকাশ করে জানান, এর আগের সরকার সিগারেটের উপরে ১৯ শতাংশ কর বাড়িয়েছিল। তাঁরা সেই জায়গা থেকে অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছেন। মুম্বইয়ের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের ক্যানসার চিকিৎসক পঙ্কজ চতুর্বেদীও বলেন, “শুল্ক বাড়ানোয় সিগারেটের ব্যবহার অন্তত ৫% কমবে বলে আমরা আশাবাদী। পানমশলার উপরে কর বাড়ানোর সিদ্ধান্তও খুবই ইতিবাচক।”
তামাকজাত দ্রব্যের নেশার জেরে প্রতি বছর এ দেশে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। এঁদের বেশির ভাগই নাক, মুখ ও গলার ক্যানসারে আক্রান্ত। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজে তামাক বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে পরিচিত। তাই তাঁর হাতে মন্ত্রকের দায়িত্ব যাওয়ার পরে কিছুটা আশার আলো দেখেছিলেন ক্যানসার চিকিৎসকেরা।
বাজেটের অল্প কিছু দিন আগে সিগারেট পিছু দাম দু’টাকা থেকে সাড়ে তিন টাকা পর্যন্ত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য জেটলিকে চিঠি দিয়েছিলেন তিনি। এই দাবির সপক্ষে তিনি বলেছিলেন, এতে এক দিকে অন্তত ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় হবে। কমবে ধূমপায়ীর সংখ্যাও। এর ফলে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা কমবে, দেশের স্বাস্থ্য বাজেটের উপরে চাপও।
তবে ১৮ বছরের কম বয়সীদের তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন রাজ্যে তা অনুসরণ করা হয় না। সে বিষয়ে নতুন সরকার কী পদক্ষেপ করতে চলেছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। সিগারেট এবং তামাকজাত দ্রব্যের কর বাড়ার পরে এখন সে দিকেও তাকিয়ে চিকিৎসক মহল।
পাশাপাশি তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, সিগারেটের সঙ্গে বিড়ির দামও বাড়ানো উচিত ছিল। চতুর্বেদীর কথায়, “বিড়ির উপরে কর না বাড়ায় আমরা হতাশ। যত মানুষ সিগারেট খান, তার অন্তত দ্বিগুণ সংখ্যক মানুষ বিড়ি খান।” বিড়ির অভ্যাস কমানো নিয়েও অবশ্য কেন্দ্রের কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ দিন বলেছেন, “বিড়ি উৎপাদনের মাত্রা নির্দিষ্ট করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। তামাকের ব্যবহারে লাগাম টানতে রাজ্যগুলির উচিত, সিগারেট-বিড়ির উপরে অতিরিক্ত ভ্যাট বসিয়ে দাম অনেকটা বাড়িয়ে দেওয়া।”
চিকিৎসকরাও তা-ই চান। এ রাজ্যের নামী ক্যানসার শল্য চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলেন, “সিগারেটের ভ্যাট বাড়িয়ে এ রাজ্যে ৩৫% করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের দাবি, এটা অন্তত ৫০ শতাংশ করা হোক। কারণ বহু রাজ্যেই এটা ৬০%। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করছি।” এ রাজ্যে সিগারেটে ভ্যাটের পরিমাণ ছিল ২৫ শতাংশ। সারদা কেলেঙ্কারির পরে মুখ্যমন্ত্রী তা বাড়িয়ে ৩৫% করার সিদ্ধান্ত নেন।
কেন্দ্রীয় বাজেটে ঠান্ডা পানীয়ের উপর করও ৫% বাড়ানো হয়েছে। স্থূলত্ব বাড়ানোর অন্যতম উৎস ওই ঠান্ডা পানীয়। অতিরিক্ত চিনি থাকায় স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। চিকিৎসকদের বক্তব্য, সিগারেটের মতো ঠান্ডা পানীয়ের দাম বেড়ে যাওয়াটাও সমাজের পক্ষে মঙ্গলজনক হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy