চাপের মুখে ব্যপম-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের আর্জি নিয়ে মাথা নোয়াতে বাধ্য হলেন মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। কিন্তু সেই চাপ যতটা না বিরোধীদের, তার থেকে অনেক বেশি তাঁর নিজের দলের থেকেই।
সেটাই এখন শিবরাজের সামনে সবচেয়ে বড় কাঁটা। বিজেপির অন্দরে এখন শোনা যাচ্ছে, এই সিবিআই অস্ত্রেই শিবরাজকে এ বার আরও বড় চাপে ফেলে দেবেন নরেন্দ্র মোদী।
সোমবার পর্যন্ত শিবরাজ বলে এসেছেন, ব্যপম-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তে তাঁর আপত্তি নেই। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আদালতকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহও কাল শিবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু বিজেপি সূত্রের খবর, ছবিটা বদলাতে থাকে রাত থেকেই। সোমবার বেশি রাতে অমিত শাহের পক্ষ থেকে শিবরাজের কাছে বার্তা পাঠানো হয়, রাজ্য সরকার নিজে থেকে সিবিআই তদন্তের দাবি জানাক। যুক্তি হিসেবে দেখানো হয়েছে, এতে বিরোধীদের দাবি ভোঁতা হয়ে যাবে। আর হাইকোর্ট এ ব্যাপারে উদ্যোগী হলে সুপ্রিম কোর্টের পক্ষেও তাতে হস্তক্ষেপ করা কঠিন হবে।
ভারতের ইতিহাসে বরাবরই দেখা গিয়েছে, বিরোধীরা কেন্দ্রের শাসক দলের বিরুদ্ধে সিবিআইকে রাজনৈতিক ভাবে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুলেছে। ইউপিএ আমলেও বিজেপি এই অভিযোগ করে এসেছে। সিবিআইকে ‘কংগ্রেস ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ বলে কটাক্ষও করেছে তারা। এখন অমিত শাহ সমেত গোধরা পরবর্তী দাঙ্গায় একাধিক অভিযুক্তের উদাহরণ তুলে একই অভিযোগ করছে কংগ্রেস! রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, ব্যপম-মামলা সিবিআইয়ের হাতে এলে অভিযোগের তির শিবরাজ পর্যন্ত যেতে বাধ্য। শিবরাজ-বিরোধী নেত্রী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উমা ভারতী ঘনিষ্ঠ মহলে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘আমার এক সচিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠায় আমাকে যদি কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়, তা হলে শিবরাজের সচিব অভিযুক্ত হওয়ায় কেন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তদন্ত হবে না? গোড়া থেকেই তো আমি সিবিআইয়ের দাবি তুলে আসছি।’’
শিবরাজ অবশ্য এখনও পর্যন্ত সাহসী মুখই দেখাচ্ছেন। সিবিআই তদন্তের দাবি মানা থেকে উমা ভারতী থেকে দলের একাংশের চাপের অভিযোগ— সবই উড়িয়ে দিচ্ছেন। কিন্তু বিজেপিরই একাংশের মতে, ব্যপম-মামলা একবার সিবিআইয়ের হাতে এলে পরিণতি যাই হোক, শিবরাজকে চাপে রাখতে পারবেন মোদী। আর এই সুযোগে যে লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজরা এত দিন মোদীর বিপক্ষে শিবরাজকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চাইছিলেন, তাঁদের অস্ত্রও ভোঁতা করে দেওয়া যাবে। দলের মধ্যে মোদী-বিরোধীদের বিক্ষোভও প্রশমিত করা সম্ভব হবে। আর এখানেই অনেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি অরুণ জেটলির একটি মন্তব্যকে মনে করাচ্ছেন। তাঁরা বলছেন, ব্যপম-কাণ্ডে হইচই শুরু হওয়ার পরে জেটলি যে দিন একটি নিরপেক্ষ তদন্তের কথা বলেছিলেন, সে দিনই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল মোদী আসলে কী চান! হাইকোর্টের তত্ত্বাবধানে তদন্তের থেকে গোটা বিষয়টি কেন্দ্রের অধীনে সিবিআইতেই নিয়ে আসার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। আর সেটি ঠেকিয়ে রাখার জন্যই আপ্রাণ লড়ছিলেন শিবরাজ। এ ব্যাপারে রাজনাথকেও পাশে পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না!
এই মুহূর্তে ললিত মোদী বিতর্কের পর সুষমা স্বরাজ চাপে। যে কোনও সময় তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে সরিয়ে দিতে পারেন মোদী। বা দফতর বদল করতে পারেন। ফলে তাঁর পক্ষে এখন আগের মতো আগ বাড়িয়ে শিবরাজের পাশে দাঁড়ানো সম্ভব নয়। আডবাণী দলে বহু দিনই গুরুত্ব হারিয়েছেন। শিবরাজকেও চাপে রাখার সুযোগ এসেছে মোদীর হাতে। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘আগামী দিনে দেখুন, কী ভাবে দলের মধ্যে মোদী বিরোধী জোট ছত্রভঙ্গ হয়!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy