ফাইল চিত্র
স্যুট-বুটের সরকার নয়। তাঁর সরকার যে আদতে কৃষক দরদি, তা প্রমাণ করতে মোদী ঘোষণা করেছেন, ২০২২-র মধ্যে কৃষকদের আয় তিনি দ্বিগুণ করে দিতে চান।
প্রধানমন্ত্রীর সেই ঘোষণাকেই বাস্তবে রূপায়িত করতে এখন হন্যে হয়ে রাস্তা খুঁজছেন অর্থ মন্ত্রক থেকে শুরু করে কৃষি মন্ত্রক, নীতি আয়োগ, নাবার্ডের কর্তারা। সেখানে চুল চেরা বিতর্ক চলছে। কেউ বলছেন, আগামী ছয় বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে হলে কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার প্রতি বছর ১০ শতাংশ হওয়া দরকার। এমনিতেই পর পর দু’বছর খরার ধাক্কায় কৃষি ক্ষেত্রে বৃদ্ধির হার ১ শতাংশেরও কমে পৌঁছেছে। কারও যুক্তি হল, চাষিদের থেকে ফসল কেনার দাম বাড়াতে হলে মূল্যবৃদ্ধির হার বেড়ে যাবে। রাস্তা খুঁজতে সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্তাদের সঙ্গে মঙ্গলবার আলোচনায় বসছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি।
গত ফেব্রুয়ারিতে উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে জনসভায় মোদী ঘোষণা করেন, তাঁর সরকার আগামী ছয় বছরে কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করতে চায়। অনেকেই মনে করেছিলেন, রাহুল গাঁধীর ‘স্যুট-বুট কি সরকার’-এর আক্রমণের জবাবে নিজেকে কৃষক দরদী প্রমাণ করতে এই ঘোষণা করছেন মোদী। তা যে নিছক ভোটের প্রচার নয়, তা বুঝিয়ে অরুণ জেটলি বাজেটেও সেই লক্ষ্যের কথা জানিয়ে দেন। এখন সেই লক্ষ্য পূরণে কৃষি মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রকের আমলাদের নিয়ে কমিটি তৈরি হয়েছে। সেই কমিটিই কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার নীল নকশা তৈরি করছে।
আর্থিক সমীক্ষা বলছে, এ দেশের ১৭টি রাজ্যে চাষ-আবাদের খরচ বাদ দেওয়ার পরে মাঝারি কৃষকদের বছরে গড় আয় মাত্র ২০ হাজার টাকা। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা বলছেন, ইউপিএ জমানায় ২০০৯-’১০-এর তুলনায় ২০১৩-’১৪-এ নগদ আয় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। মূলত ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বাড়ানোর ফলেই তা হয়েছিল। এর ফলে মূল্যবৃদ্ধির হারও মাত্রাছাড়া হয়ে গিয়েছিল। সেই তুলনায় মোদী সরকার গত দু’বছরে ফসলের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে সংযত থেকেছে।
তা হলে কৃষকদের আয় বাড়বে কী করে? কৃষিমন্ত্রী রাধামোহন সিংহের যুক্তি, ‘‘ইউপিএ সরকার শুধুমাত্র ফসলের দাম ও ঋণ মকুবে নজর দিয়েছিল। আমরা নানা দিক থেকে আয় বৃদ্ধির রাস্তা খুঁজছি।’’ তাঁর মতে, শুধু নগদ রোজগার বাড়লেই কৃষকদের লাভ হয় না। আসল আয় বাড়া দরকার। তার জন্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। কমাতে হবে উৎপাদনের খরচ। চাষের পাশাপাশি তার সঙ্গে সম্পর্কিত কাজ থেকেও আয়ের উপায় তৈরি করতে হবে। রাধামোহনের দাবি, মোদী সরকার কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আসতে চাইছে। তার ফলে চাষের খরচ ২৫ শতাংশ কমবে। উৎপাদনও বাড়বে ২০ শতাংশ। মোদী সরকার ইউরিয়ার কালোবাজারি বন্ধ করে দেওয়ায় চাষিদের অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে বলেও কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী যুক্তি দিয়েছেন। তাঁর দাবি, মোদী সরকার ইন্টারনেটের মাধ্যমে সব মাণ্ডিকে জুড়ে দেওয়ায় জাতীয় কৃষি বাজার তৈরি হচ্ছে। তাতে কৃষকরা এমনিতেই ফসলের ভাল দাম পাবেন। এ ছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলে এত দিন কৃষকদের বিরাট ক্ষতি হতো। ফসল বিমা যোজনার ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলেও কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।
কৃষি-অর্থনীতিবিদ অশোক গুলাটি তাঁর লেখা নিবন্ধে যুক্তি দিয়েছেন, শুধু নগদ রোজগার দ্বিগুণ করাটা কোনও কাজের কথা নয়। মোদী যদি খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হারকে ৫-৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে পারেন, কৃষকদের নগদ রোজগার যদি বছরে ১২ শতাংশ হারে বাড়াতে পারেন, তা হলে তা যথেষ্ট প্রশংসনীয় হবে। কিন্তু তাঁর মতে, এ জন্য কৃষি গবেষণা, প্রযুক্তি, সার, সেচে বিপুল পরিমাণে অর্থ ব্যয় করতে হবে। রাধামোহনের দাবি, কৃষি মন্ত্রক ও নাবার্ডের জন্য যথেষ্ট পরিমাণে অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। এখন তা কাজে লাগানোটাই আসল চ্যালেঞ্জ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy