Advertisement
০৩ মে ২০২৪

তিক্ত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক, মুখ্যমন্ত্রীর চিন সফরে না করে দিল কেন্দ্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চিন সরকার। প্রাথমিক ভাবে স্থিরও হয়ে গিয়েছিল, মাওয়ের দেশে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রথমে রাজি হয়েও শেষ পর্যন্ত তাঁর চিন যাত্রায় ছাড়পত্র দিল না কেন্দ্র।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফাইল চিত্র

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ মে ২০১৭ ০৪:০৭
Share: Save:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল চিন সরকার। প্রাথমিক ভাবে স্থিরও হয়ে গিয়েছিল, মাওয়ের দেশে যাবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু প্রথমে রাজি হয়েও শেষ পর্যন্ত তাঁর চিন যাত্রায় ছাড়পত্র দিল না কেন্দ্র।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, চিনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাতের বাতাবরণে প্রধানমন্ত্রী চাইছেন না, কোনও মন্ত্রী এই মুহূর্তে সে দেশে সফর করুন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, আগামী মাসে চিনে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ শীর্ষক মেগা-প্রকল্পের সম্মেলনে যাওয়ার আমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেছে কেন্দ্র নিজেই। একই ভাবে আগামী ১৪ তারিখে নয়াদিল্লিতে ভারত-রাশিয়া-চিনের বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকেও গরহাজির থাকছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী।

কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, রাজ্যের কোনও মন্ত্রী (এমনকী কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, সাংসদ বা আমলারাও) যদি সরকারি ভাবে বিদেশ সফরে যান তা হলে বিদেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্র (এনওসি) প্রয়োজন হয়। তবে এই নিয়ে বিতর্কও রয়েছে। রাজ্য সরকার সূত্রের বক্তব্য, ভারতীয় সংবিধানে কোথাও বলা নেই যে, অন্য রাষ্ট্রে সফরের জন্য কেন্দ্রের লিখিত অনুমতির প্রয়োজন। জওহরলাল নেহরুর জমানায় কোনও রাজ্যের মন্ত্রীর বিদেশ সফরের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ছাড়পত্র প্রয়োজন হতো না। কিন্তু ইন্দিরা গাঁধীর সময়ে এই বিষয়ে আইন পাশ করে কেন্দ্র। তার পর থেকে কোনও মুখ্যমন্ত্রী বা রাজ্যের কোনও মন্ত্রী যখনই বিদেশ সফরে গিয়েছেন, কেন্দ্রের অনুমতি নিয়েই তাঁদের যেতে হয়েছে।

আরও পড়ুন:দিল্লিতে গ্যাস লিক করে অসুস্থ ৪৫০ ছাত্রী

নরেন্দ্র মোদী নিজেও গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে চিন সফরে গিয়েছেন একাধিক বার। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, সেই সময়ে ভারত-চিন সম্পর্ক আজকের মতো সংঘাতপূর্ণ ছিল না, ফলে ছাড়পত্রের সমস্যা হয়নি। মোদী গিয়েছিলেন চিনের গুয়াংঝৌ প্রদেশে। গুজরাত এবং গুয়াংঝৌ পারস্পরিক আদান-প্রদানের জন্য বিশেষ ভাবে চিহ্নিত। একই ভাবে কলকাতা এবং ইউনান প্রদেশের কুনমিং-ও ‘সিস্টার সিটি’। মমতাকে প্রাথমিক ভাবে কুনমিং যাওয়ার জন্য যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, রাজি হয়েছিলেন মোদী। কিন্তু অরুণাচল প্রদেশে দলাই লামার সফরের পর রীতিমতো হুমকি দেওয়া শুরু করেছে বেজিং। অরুণাচলের ছ’টি এলাকার নাম বদলের ঘোষণা, রাজধানীতে ত্রিপাক্ষিক আলোচনা বয়কট, ভারতের ধারাবাহিক আপত্তি সত্ত্বেও ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’-এর মাধ্যমে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে আর্থিক করিডর তৈরির মতো একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে বেজিং।

সূত্রের খবর, কেন্দ্রের আশঙ্কাও ছিল যে, টালমাটাল এই দ্বিপাক্ষিক পরিস্থিতিতে মমতাকে নিয়ে গিয়ে তাঁকে কোনও ফাঁদে ফেলতে পারে বেজিং। সীমান্তবর্তী রাজ্য হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের গুরুত্ব যথেষ্ট। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা মনে করেন, এর সঙ্গে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টিও ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত। মমতা নিজেও এ সম্পর্কে সচেতন। তাই এই ছাড়পত্র না পাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্র-বিরোধী কোনও রাজনীতি করতে চাননি তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee China Centre Modi Government
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE