Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

পাকিস্তান প্রশ্নে ওয়াশিংটনের কড়া মনোভাবে খুশি নয়াদিল্লি

পাক সেনেটের উপাধ্যক্ষ মৌলানা আব্দুল গফুর হায়দরির মার্কিন ভিসা নামঞ্জুর হওয়ার ঘটনায় খুশি নয়াদিল্লি। তবে এ নিয়ে এখনই মুখ খুলছে না বিদেশ মন্ত্রক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাক নীতি কোন পথে হাঁটবে, আপাতত সেটাই বুঝে নিতে চাইছে ভারত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০৩:৪০
Share: Save:

পাক সেনেটের উপাধ্যক্ষ মৌলানা আব্দুল গফুর হায়দরির মার্কিন ভিসা নামঞ্জুর হওয়ার ঘটনায় খুশি নয়াদিল্লি। তবে এ নিয়ে এখনই মুখ খুলছে না বিদেশ মন্ত্রক। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাক নীতি কোন পথে হাঁটবে, আপাতত সেটাই বুঝে নিতে চাইছে ভারত।

পাকিস্তানি সেনেটের গুরুত্বপূর্ণ পদ ছাড়াও আব্দুল গফুর হায়দরি জামায়েত উলেমা ইসলামের সভাপতি। পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান এই মুসলিম সংগঠনের বিরুদ্ধে নাশকতামূলক কাজের অভিযোগ থাকার জন্যই সংগঠনের প্রধান হায়দরির মার্কিন ভিসা বাতিল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কার্যকালের একেবারে শুরু থেকেই পাকিস্তান প্রশ্নে ওয়াশিংটন এ রকম কড়া মনোভাব নেওয়ায় খুশি নয়াদিল্লি।

চলতি সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের সদর দফতরে সংসদীয় সঙ্ঘের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য দু’জন পাক সাংসদ মার্কিন ভিসার আবেদন জানিয়েছিলেন। এক জন দু’দিন আগেই ভিসা পেয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ‘কিছু বিশেষ নিয়মের জন্য’ হায়দরির ভিসা মঞ্জুর করেনি আমেরিকা। শুধু তা-ই নয়, অনির্দিষ্টকালের জন্য ওই ব্যক্তিকে ভিসা দেওয়া হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন প্রশাসন।

হায়দরি ভিসা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ পাকিস্তান রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে কোনও প্রতিনিধি না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তা ছাড়া, ইসালামাবাদের পক্ষ থেকে হুমকির সুরে জানানো হয়েছে, আগামী দিনে মার্কিন নাগরিকদের ভিসা দেওয়ার প্রশ্নেও কড়াকড়ি শুরু করতে চলেছে পাকিস্তান।

মার্কিন প্রশাসনের এই উদ্যোগে নয়াদিল্লি খুশি হলেও, ঘটনাটি নিয়ে সরকারি ভাবে কিছু জানাতে চায়নি সাউথ ব্লক। বিদেশ মন্ত্রকের ব্যাখ্যা, ট্রাম্প আসার পরে আমেরিকা পাকিস্তান প্রশ্নে কড়া অবস্থান নেবে তা প্রত্যাশিতই ছিল। সম্ভবত সেই নীতি মেনে এগোতে চাইছে আমেরিকা। কূটনীতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ভিসা বাতিলের মতো পদক্ষেপ ছোট হলেও অনেকাংশেই প্রতীকী। এই ধরনের পদক্ষেপ অনেক ক্ষেত্রেই বৃহত্তর সঙ্কেত দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে একজন সাংসদ— যাঁর বিরুদ্ধে সন্দেহজনক কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে— তাঁর ভিসা বাতিল করে সম্ভবত আমেরিকা বোঝাতে চেয়েছে, সন্ত্রাসবাদকে মদত দেওয়ার প্রশ্নে পাকিস্তানের যে অঘোষিত রাষ্ট্রীয় নীতি রয়েছে, তা মোটেই ভাল ভাবে নেবে না নতুন মার্কিন প্রশাসন। আমেরিকার এই অবস্থানে ভারত খুশি হলেও, মেপে পা ফেলতে চাইছে নয়াদিল্লি। কারণ, অতীতে মার্কিন প্রশাসন এ ধরনের পদক্ষেপ করার পরেও পাকিস্তানকে অস্ত্র ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছে। যে অস্ত্র ও টাকা পরে ব্যবহার হয়েছে ভারতবিরোধী কার্যকলাপে। ফলে এ ক্ষেত্রে সূচনা শুভ বলে মেনে নিলেও, সামগ্রিক ভাবে নতুন প্রশাসনের মনোভাব ভাল ভাবে বুঝে নিতে চাইছে ভারত।

আরও পড়ুন:

গোটা ভারত মহাসাগরকে বিপজ্জনক করে তুলছে দিল্লি: উদ্বেগ পাকিস্তানের

অন্য একটি কারণেও বিষয়টি নিয়ে এখনই সুর চড়াতে নারাজ ভারত। এই মুহূর্তে নানা কারণে নওয়াজ প্রশাসন যথেষ্ট দুর্বল। বিষয়টি থেকে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে গিয়ে উল্টে নওয়াজ সরকারকেও অস্বস্তিতে ফেলাটা আশু লক্ষ্য নয় ভারতের। এতে দু’দেশের সম্পর্ক আরও বিগড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আপাতত উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সরকারি ভাবে আলোচনা বন্ধ রয়েছে ঠিকই, কিন্তু ট্র্যাক টু বা ঘুরপথে আলোচনার রাস্তা খোলা রাখতে চাইছে উভয় শিবিরই। সেই কারণে সম্প্রতি কাশ্মীরের হুরিয়ত নেতারা দিল্লিতে পাক ডেপুটি হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করার পরেও কোনও আপত্তি জানায়নি নয়াদিল্লি।

বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বিধানসভা নির্বাচন শেষ হওয়ার পরে পরিস্থিতি অনুকূল থাকলে ফের পাকিস্তানের সঙ্গে সরকারি স্তরে আলোচনা শুরু করতে চায় নরেন্দ্র মোদী সরকার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Modi Policy Trump
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE