Advertisement
০৬ মে ২০২৪

চাপেই রাখা হবে চিনকে, বুঝিয়ে দিলেন ভি কে

চিনের ঢিলের বদলে ভারত যে পাটকেল মারতে তৈরি তা বুঝিয়ে দিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। ভবিষ্যতে চিনের বিদ্রোহী উইগুর নেতাদের দিল্লি ফের ভিসা দিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

সম্মেলনে ভি কে সিংহ ও সেনার্স-কে-এর কার্যনির্বাহী অধিকর্তা মেজর জেনারেল অরুণ রায়। — নিজস্ব চিত্র।

সম্মেলনে ভি কে সিংহ ও সেনার্স-কে-এর কার্যনির্বাহী অধিকর্তা মেজর জেনারেল অরুণ রায়। — নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ মে ২০১৬ ০৩:১৫
Share: Save:

চিনের ঢিলের বদলে ভারত যে পাটকেল মারতে তৈরি তা বুঝিয়ে দিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ। ভবিষ্যতে চিনের বিদ্রোহী উইগুর নেতাদের দিল্লি ফের ভিসা দিতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

রিসার্চ সেন্টার ফর ইস্টার্ন অ্যান্ড নর্থ ইস্টার্ন রিজিওনাল স্টাডিজ-কলকাতা (সেনার্স-কে) আয়োজিত সম্মেলনে যোগ দিতে শনিবার কলকাতায় এসেছিলেন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী। ভারত-চিন সম্পর্ক নিয়ে এই আলোচনায় প্রত্যাশিত ভাবেই উঠে এসেছে মাসুদ আজহারকে নিয়ে সাম্প্রতিক টানাপড়েনের কথা।

পঠানকোট হামলার পরে জইশ-ই-মহম্মদ প্রধান মাসুদকে নিষিদ্ধ করতে রাষ্ট্রপুঞ্জে আর্জি জানিয়েছিল ভারত। কিন্তু পাকিস্তানের অনুরোধে সেই আর্জি নিয়ে আপত্তি তোলে চিন। ফলে তা শেষ পর্যন্ত স্থগিত হয়ে যায়। এর পরে চিন সরাসরি পাক জঙ্গিদের মদত দিচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন শিবির থেকে।

এর কিছু দিন পরে চিনের বিদ্রোহী উইগুর নেতা দোলকান ইসার ভারতে আসার সম্ভাবনা নিয়ে চাপানউতোর শুরু হয়। উইগুরদের এই নেতা এখন জার্মানিতে থাকেন। বেজিংয়ের অনুরোধে তাঁর নামে ইন্টারপোলের রেড কর্নার নোটিস জারি হয়েছে। ধর্মশালায় এক সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য ইসা ভারতে আসার ভিসা পেয়েছেন জেনে আপত্তি জানায় বেজিং। তার পরে ইসার ভিসা বাতিল করে ভারত।

তা হলে কি চিনের মাসুদ তাসের বদলে ভারত ইসা তাস খেলতে গিয়েছিল? কিন্তু পরে বেজিংয়ের চাপে পিছিয়ে গিয়েছে?

‘‘কারও চাপের মুখে পিছিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই নেই। ভিসার আবেদনে গোলমাল থাকতে পারে। তা ছাড়া ভিসার বিষয়টি দেখে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক’’-বলছেন ভি কে সিংহ।

তা হলে কি পরে আবার উইগুর নেতাদের ভিসা দিতে পারে ভারত?

ভি কে সিংহের সাফ জবাব, ‘‘এ দেশে আসতে চাওয়া কোনও ব্যক্তিকে ভিসা দিতে ভারতের আপত্তি নেই।’’

বিশেষজ্ঞদের মতে, দলাই লামার মতোই উইগুর নেতাদের নিয়ে চিনকে পাল্টা চাপ দিতে চাইছে ভারত।

মাসুদকে নিয়ে চিনের আপত্তির একটি ব্যাখ্যা অবশ্য দিয়েছেন কলকাতায় চিনের কনসাল জেনারেল মা ঝানউ। তাঁর দাবি, মাসুদকে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিষিদ্ধ তালিকাভুক্ত করা নিয়ে প্রথমে আপত্তি জানিয়েছিল পাকিস্তানই। ইসলামাবাদ দাবি করে এই পদক্ষেপ করার মতো যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেয়নি দিল্লি। ঝানউয়ের কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপুঞ্জে মতবিরোধ হলে তা সর্বসম্মতিতে মিটিয়ে ফেলাই নীতি। তাই মাসুদকে নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মতবিরোধ আগে মিটিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছে চিন।’’ কনসালের কথায়, ‘‘চিন নিজেই জঙ্গি সন্ত্রাসের শিকার। আমরা কেন জঙ্গিদের মদত দেব?’’

এই বক্তব্য অবশ্য মানতে রাজি নন সম্মেলনে হাজির প্রাক্তন ভারতীয় কূটনীতিক, গোয়েন্দা কর্তা ও সেনা অফিসারদের কেউই। দেশের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা তথা পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন সাফ বলেন, ‘‘চিন যা বলে আর যা করে, তার মধ্যে বিস্তর ফারাক। ফলে চিনের সঙ্গে বাড়তি বন্ধুত্বের কোনও জায়গা নেই। ওরা ওদের স্বার্থ ছাড়া এক পা-ও ফেলে না। তাই আমাদেরও সব সময় দেশের স্বার্থ বুঝে নিতে হবে।’’

চিনের আস্থাভাজন হতে গিয়ে ঠোক্কর খাওয়ার প্রসঙ্গে ১৯৬২-র যুদ্ধের কথা তুলে আনেন নারায়ণন। সে সময় গোয়েন্দা দফতরে কর্মরত ছিলেন তিনি। প্রাক্তন রাজ্যপাল জানান, এখনও সেই যুদ্ধ নিয়ে তাঁর অপরাধবোধ কাজ করে। চিন কী করতে পারে তা বোঝার ভুলেই যুদ্ধে শোচনীয় ফল হয়েছিল। তাই যে চিন আর্থিক এবং প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে কথায় কথায় আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ করছে, তার প্রতি বেশি বন্ধুত্ব দেখানোর মানে হয় না। চিনের প্রতি পাল্টা আক্রমণাত্মক মেজাজই ধরে রাখা উচিত। মনমোহন সিংহের আমলে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে চিনের বিপদ মোকাবিলায় গঠিত হয়েছিল মাউন্টেন স্ট্রাইক ফোর্স। সেই বাহিনী তৈরিতে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা খরচ হওয়ার কথা। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় এসে সেই প্রক্রিয়া হিমঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে নারায়ণন বলেন, ‘‘শুনতে নেতিবাচক হলেও বলব এমন সিদ্ধান্ত মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়। এটা উদ্বেগের।’’

চিনের কথা মাথায় রেখে বাহিনী তৈরির প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল যখন তখন বর্তমান বিদেশ প্রতিমন্ত্রী সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলের প্রধান ছিলেন। এ দিন ভি কে সিংহ অবশ্য বলেন, ‘‘চিনের সঙ্গে লড়াইয়ে সবার আগে অর্থনৈতিক ভারসাম্য আনা জরুরি। বিনিয়োগ আনতে হবে। বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে হবে। তার পর আসবে নিরাপত্তার প্রসঙ্গ।’’

কেমন হবে সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা? প্রাক্তন সেনাপ্রধান জানান, সেনাবাহিনী হল জীবন বিমা পলিসির মতো। যদি বিমার প্রিমিয়াম বেশি দেওয়া হয়, পলিসিও জোরদার হয়। আর ঠিক সময়ে প্রিমিয়াম জমা করতে হয়। অর্থাৎ, ঠিক সময়ে সেনাবাহিনীর আধুনিকীকরণের জন্য বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE